স্টাফ রিপোর্টার : মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মনবাজার ইউনিয়নের ইতিহাসের শ্রেষ্ট সন্তান, ৭১এর রণাঙ্গণের বীর মুক্তিযোদ্ধা, ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের সাবেক সফল চেয়ারম্যান ১৯৬৭সাল হতে ব্রাহ্মনবাজার ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রতিষ্টাকালীন বিপ্লবী সাধারণ সম্পাদক, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ইলিয়াস মিয়া (৭৬) আর অমাদের মাঝে নেই। দৈর্ঘ্যদিন অসুস্থতার পর মঙ্গলবার ১৫অক্টোবর সকাল ৬:৫৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেটের ওয়েসিস মেডিকেল হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) । হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতে বিকেল ৫টায় ব্রাহ্মনবাজার জালালাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত জানাযার নামায শেষে পারিবারিক কবর স্থানে থাকে দাফন করা হয়। মরহুমের জানাযার নামাযে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংবাদিকবৃন্দ ও সর্বস্তরের ব্যক্তিবর্গ অংশ গ্রহন করেন।জানাজার পূর্বে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
জন্ম : মরহুম ইলিয়াস মিয়া ১৯৪৩সালে ব্রাহ্মন বাজার ইউনিয়নের মৌলভীগাঁও গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম ও উচ্চশিক্ষিত পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতা মরহুম সুরুজ আলী মাস্টার ছিলেন তৎকালীন এ অঞ্চলের অন্যতম একজন শিক্ষাবিদ।
ছেলে মেয়ে : মৃত্যুকালে স্ত্রী আছমা বেগম লনি, ৩ছেলে ডাঃ আব্দুর রহমান সুহেল ( বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী), আব্দুর রাজ্জাক জুয়েল(লন্ডন প্রবাসী) ও আব্দুর রউফ রিয়েল এবং ৩মেয়ে আনোয়ারা আক্তার লাবলী(লন্ডন প্রবাসী), ডাঃ জলি আক্তার ( সিলেট রাগিব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজে চাকুরিরত ) ও বাবলী আক্তারসহ অসংখ্য আত্নীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
বর্ণাঢ্য চাকুরি জীবন : মরহুম ইলিয়াছ মিয়া একাডেমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ১৯৬৮সালে সিলেট সরকারী এম.সি কলেজে একাউন্টস অফিসার হিসেবে প্রথম চাকুরিতে যোগদান করেন। ১৯৭২সালে তিনি বনও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের অধীনস্থ ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের একাউন্টস অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৮ সালে তিন এ.জি.তে অডিট অফিসার হিসেবে পুনারয় যোগদান করেন। প্রতিটি চাকুরিস্থলে মরহুম ইলিয়াস মিয়া ছিলেন একজন সৎ, নিষ্টাবান ও দূর্ণীতির বিরুদ্ধে আপোসহীন। ১৯৭৮ সালে তিনি তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী তানভির আহমদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জ্বালানী ব্যবহারের বিরুদ্ধে অডিট অফিসার হিসেবে অভিযোগ দায়ের করে দেশব্যাপি এক অনন্য সাহসিকতা ও সততার নজির সৃষ্টি করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি সরকারী চাকুরি হতে অবসর গ্রহন করেন।
রাজনৈতিক জীবন : আজীবন বঙ্গবন্ধু ও মাওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক অনুসারী মরহুম ইলিয়াছ মিয়া ১৯৬৭ সালে ব্রাহ্মনবাজার ইউনিয়র আওয়ামিরীগের প্রতিষ্টাকালীন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করে প্রায় আজীবন অর্থাৎ অশুস্থ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রায় ৫০বছর তিনি ব্রাহ্মনবাজার ইউনিয়র আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন : বীর মুক্তিযুদ্ধা মরহুম ইলিয়াস মিয়া এদেশকে পাকিস্থানী হানাদারদের কবল হতে মুক্ত করতে ১৯৭১সালে মহান মুক্তি যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। সুদীর্ঘ ৯মাস প্রশিক্ষণ ও সসস্ত্র যুদ্ধ শেষে এদেশকে স্বাধীন করেই তবে ঘরে ফেরেন। তাঁর সমসাময়িক মুক্তি যুদ্ধাগণ হচ্ছেন, জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, জেলা মুক্তিযুদ্ধ কমান্ডারের সভাপতি জামাল উদ্দিন, সাবেক এমপি আব্দুল জব্বার প্রমুখ।
জনপ্রতিনিধি হিসেবে : মরহুম ইলিয়াছ মিয়া ১৯৮৪সালে চাকুরি হতে অবসর গ্রহনের পরমুর্তেই ব্রাহ্মনবাজার ইউনিয়র পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১ম প্রতিদ্বন্ধিতা করেন এবং ১৯৯৩ সালের নির্বাচনে তিনি ২য়বারের মতো চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হলে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ব্রাহ্মনবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৯সাল পর্যন্ত অত্যন্ত সততা ও দক্ষতার সাথে চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব পালন করেন।
সামাজিক কর্মে : তিনি ব্রাহ্মনবাজারস্থ জালালাবাদ উচ্চবিদ্যালয়ে কয়েক মেয়াদের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, শ্রীপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ও শ্রীপুর জালিলিয়া ফাজিল মাদ্রাসার দাতা সদস্য হিসিবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ব্রাহ্মনবাজার বনিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্বপালন করেছেন এবং ব্রাহ্মনবাজার জামে মসজিদের সহ-সভাপতি হিসেবেও দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।
শোক প্রকাশঃ আওয়ামিলীগ নেতা ও বীর মুক্তি যুদ্ধা ইলিয়াস আলীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সবেক চীফ হুইপ আব্দুস সহীদ এমপি, মৌলভীবাজার-২ কুলাউড়া আসনের সাংসদ ও ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আজিজুর রহমান,মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামিলীগের সভাপতি মৌলভীবাজার-৩ আসনের সাংসদ নেছার আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মিছবাউর রহমান, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান, সাবেক সাংসদ কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল মতিন, সাবেক সাংসদ নবাব আলী আব্বাস খান, জেলা মুক্তিযুদ্ধ কমান্ডারের সভাপতি জামাল উদ্দিন , কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী, কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান সফি আহমদ সলমান, কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব শফিআলম ইউনুছ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফজলুল হক খান সাহেদ, কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনু, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুক্তাদির তোফায়েল, কুলাউড়া বিআরডিভির চেয়ারম্যান ফজলুল হক ফজলু, টিলাগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক,ব্রাহ্মনবাজার ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান শাহীন, ইউছুফ-গণি কলেজের অধ্যাপক ও ঊষারবাণী প্রত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন প্রমুখ।
তথ্য বিষয়ে সহযোগিতায় : সাইফুর রহমান শাহিন, সাধারণ সম্পাদক, ব্রাহ্মনবাজার ইউনিয়ন আওয়ামিলীগ।