উত্তরায়ণ বা পৌষ সংক্রান্তি
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৪৫:৪১,অপরাহ্ন ১৫ জানুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ১০৩১ বার পঠিত
ধীরেন্দ্র দাস : প্রায় ৫০০০ বৎসর পুর্বে দ্বাপর যুগে হস্তিনাপুর রাজ্য নিয়ে এবং অধর্মের বিনাশ ও ধর্ম প্রতিষ্টার লক্ষে কৌরব ও পান্ডব পক্ষের মধ্যে ধর্মক্ষেত্র কুরুক্ষেত্রে এক মহাযুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধে কৌরব পক্ষের প্রধান সেনাপতি ছিলেন ব্রহ্মচারী চিরকুমার মহাবীর পিতামহ ভীষ্মদেব। পান্ডব পক্ষের সেনাপতি ছিলেন মহাবীর অর্জুন। দশম দিনের যুদ্ধে পিতামহ ভীষ্মদেব মহাবীর অর্জুনের শরাঘাতে শরশয্যায় পতিত হন। পিতামহ ভীষ্মদেব ইচ্ছামৃত্যুর বর প্রাপ্ত ছিলেন। তিনি জ্ঞাত ছিলেন মৃত্যুর পর দেবলোকে গমন করবেন। যেহেতু মাঘ মাস হইতে আষাঢ় মাস পর্যন্ত ছয় মাস উত্তরায়ণ অর্থাৎ দেবলোকে দিন এবং শ্রাবণ মাস হইতে পৌষ মাস পর্যন্ত ছয় মাস দক্ষিনায়ণ অর্থাৎ দেবলোকে রাত্রি। দক্ষিনায়ণে দেবলোকের দ্বার বন্ধ থাকার কারণে প্রবেশ করা যায় না। তাই পিতামহ ভীষ্মদেব ভাবলেন এই মুহুর্থে দেহত্যাগ করলে দেবলোকে প্রবেশ করা যাবে না। অন্ধকারে দেবলোকের দ্বারপ্রান্তে একাকি বসে থাকতে হবে। পক্ষান্তরে ইহলোকে অবস্থান করলে অনেক আত্মীয় স্বজন বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হবে। ধর্ম নিয়ে আলাপ আলোচনা করা যাবে, ভাগ্যক্রমে হয়তো বা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দর্শন পাওয়া যাইতে পারে।
তাই পিতামহ ভীষ্মদেব দেহত্যাগের উদ্দ্যেশে শুভ উত্তরায়ণ সংক্রান্তির অপেক্ষা করিতে থাকেন। পিতামহ ভীষ্মদেব শরশয্যায় থেকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দর্শন পান। অনেক আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধবের সহিত ধর্ম নিয়ে আলাপ আলোচনা করেন। আর্য সম্প্রদায়ের উদ্দ্যেশে বলে যান তিনি নিঃসন্তান, তাই আর্য-সম্প্রদায় তাঁহার অন্তেষ্ট্রিক্রিয়া সহ অন্যান্য পরলৌকিক ক্রিয়াকর্ম পালন করতে। তিনি আর্শীব্বদ করে যান এতে জগৎবাসী ও পিতৃপুরুষগনের কল্যান হবে। দীর্ঘ ৫৮ দিন শরশয্যায় অবস্তানের পর অবশেষে উত্তরায়ণ বা পৌষ সংক্রান্তির নিশান্তে পিতামহ ভীষ্মদেব যোগবলে দেহত্যাগ করে দেবলোকে গমন করেন।
প্রায় ৫০০০ বৎসর পুর্ব হইতে আমরা প্রতিবৎসর উত্তরায়ণ বা পৌষ সংক্রান্তিতে প্রাতকালে খড়-কুটা জড় করে পিতামহ ভীষ্মদেবের প্রতীকি শবদাহ করে থাকি। অনেকে এই শবদাহকে মেড়ামেড়ির ঘর বা ভেড়াভেড়ির ঘর জ্বালানো বলে থাকেন এবং এই দিন মাছ মাংশ আহার করে থাকেন, যাহা সম্পুর্ণ অনুচিত। কারণ উত্তরায়ণ বা পৌষ সংক্রান্তি অন্তেষ্টিক্রিয়া ও শ্রাদ্ধ সংক্রান্ত অনুষ্টান। অন্যদিকে এই দিবসটি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে এই দিন প্রাতকালে দেবলোকের সকল দেবতাগন ও স্বর্গবাসী পিতৃপুরুষগন নিদ্রা থেকে জাগ্রত হন। এই জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীগন ব্রাহ্ম মুহুর্থে স্নান, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, গ্রামে, নগরে সংকীর্ত্তন, গীতাপাঠ, অন্নদান, বস্ত্রদান বা আর্থিক অনুদান দেওয়া সহ মঙ্গলজনক কাজ করে থাকেন। প্রতি বৎসর আমরা শাস্ত্রসমত ভাবে ভাবগাম্ভীর্যের সহিত এই অনুষ্টান পালন করার আশা ব্যক্ত করে সবাই কে মহা-সংক্রান্তির প্রণাম, প্রীতি ও শুভচ্ছা।
—————জয় শ্রীকৃষ্ণ
লিখক :
ধীরেন্দ্র দাস
পরিচালক, অনিমা কম্পিউটার মিডিয়া, কুলাউড়া।