সামগ্রিক উন্নয়নে বিজ্ঞ আইনজীবিদের সমর্থন চাইলেন সুপ্রীমকোর্ট বার সভাপতি আমিন উদ্দিন
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:০৪:৪৯,অপরাহ্ন ০৫ মার্চ ২০২০ | সংবাদটি ৫৩০ বার পঠিত
মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন, উষারবাণী ডেস্ক : বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবি সমিতির ২০২০-২১ মেয়াদের নির্বাচনে সভাপতি পদপ্রার্থী (বর্তমান সভাপতি) আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন(এ.এম.আমিন উদ্দিন) তাঁর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষনা করেছেন প্রয়ি সপ্তাহখানেক পূর্বে। ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট এর সামগ্রিক উন্নয়ন সহ সমিতির সমস্যাবলীকে বিবেচনায় নিয়ে কমপক্ষে ১২টি কার্যক্রমকে হাতে নিয়েছেন যা তিনি নির্বাচিত হলে বাস্তাবায়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেবেন বলে আশ্বস্থ করেছেন।
ইশতেহারের বিবরণে তিনি প্রথমেই তাঁর প্রাণপ্রিয় সংগঠন সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবি সামাতর ২০১৯-২০ মেয়াদের নির্বাচনে তাকে সভাপতি নির্বাচিত করায় সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “২০০৬-২০০৭ মেয়াদে আমি আপনাদের ভোটে অত্র সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে আপনাদের আস্থার সর্বোচ্চ প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করেছি। পরবর্তীতে ২০১৯-২০ মেয়াদে আমি আবারও আপনাদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। আমার মেয়াদকালে সময়ের স্বল্পতার কারণে আমার প্রতিশ্রুত সকল অঙ্গিকার পরিপূর্ণ ভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে বিগত বছরের অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সমিতির আগামী ১১-১২ মার্চ ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্টিতব্য নির্বাচনে আপনাদের দোয়া ও সমর্থন নিয়ে আমি সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছি।”
সুপ্রীমকোর্ট বার সমিতির সভাপতি আমিন উদ্দিন একটি আনন্দের সংবাদ দিয়ে তার ইশতেহারের বিবরণ শুরু করেন। বিগত নির্বাচনে তিনি বিদ্যমান ভবন, হলরুম ও বাথরুম সংস্কার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। নির্বাচিত হবার পরপরই তিনি সরকারের সাথে যোগাযোগ করেন এবং সরকার সমিতির আবেদন গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে বার ভবনের উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য মোট ১৭,৪৭,০০,০০০/- (সতের কোটি সাতচল্লিশ লক্ষ ) টাকা প্রদান করেছেন এবং প্রস্তাবিত সংস্কারের একটি পূর্ণাঙ্গ ভিডিও চিত্র বিগত ১৯.০২.২০২০ তারিখ বিকাল ৪.৩০ ঘটিকায় সুপ্রীমকোর্ট বার অডিটরিয়ামে প্রদর্শিত হয়েছে এবং উপস্থিত আইনজীবিদের প্রয়োজন ও মতামতের ভিত্তিতে টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই বরাদ্দ সুপ্রীম কোর্ট বারের ইতিহাসে একটি অনন্য নজির, কারণ ইতিপূর্বে আর কখনও এই ধরণের বরাদ্দ সমিতিতে দেয়া হয় নাই।
বার এর বিদ্যমান সমস্যাসমূহ সমাধানের লক্ষ্যে সরকার এ যাবত কালের সর্বোচ্চ অর্থ ১৭,৪৭,০০,০০০/- (সতের কোটি সাতচল্লিশ লক্ষ ) টাকা বরাদ্দ করেছেন। বরাদ্দকৃত টাকায় সমিতির সমস্যাবলীকে অত্যন্ত জরুরী বিবেচনায় নিয়ে বিজ্ঞ সদস্যগণের কল্যাণার্থে নিম্নোক্ত উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেয় হয়েছে-
১. বিদ্যমান ১০০০ কেবিএ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুত সাবস্টেশনের ক্ষমতা ২৬০০ কেবিএ তে উন্নীত করুন;
২. বিদ্যমান সুয়ারেজ ব্যবস্থা পরিবর্তন করে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারযোগ্য নতুন লাইন স্থাপন ও ওয়াটার রিজার্ভার নির্মাণ;
৩. হলরুমগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি;
৪. সমিতির বিদ্যমান বাথরুম সমূহ সংস্কার পূণ: নির্মাণ ও আধুনিকায়ণ;
৫. সমিতি ভবনের সকল মহিলা কমনরুমগুলো আধুনিকায়নের মাধ্যমে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি;
৬. সকল সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন পৃথক মেডিকেল সেন্টার স্থাপন;
৭. বিদ্যমান অডিটরিয়াম সংস্কারক্রমে একটি অত্যাধুনিক অডিটরিয়ামে রুপান্তর;
৮. বিজ্ঞ মহিলা আইনজীবিদের সুবিধার্থে একটি পূণাঙ্গ ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন;
৯. বিদ্যমান লিফট সমূহের আমূল সংস্কার;
১০. বিদ্যমান আমূল সংস্কার ও গতিবৃদ্ধি করুন;
১১. মসজিদ সংস্কার;
১২. সমিতি ভবনের প্রধান প্রবেশপথ ও সম্মূখের অংশ সহ কমন স্পেস সমূহের সৌন্দর্য বর্ধন এবং ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন;
সুপ্রীমকোর্ট বার সমিতির সভাপতি আমিন উদ্দিন উল্লেখ করেন, বিগত নির্বাচনে তাঁর প্রধান অঙ্গীকার ছিল সকলের সহযোগীতায় একটি বহুতল ভবন নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ। এরই ধারাবাহিকতায় মেয়াদকালে তিনি ভবন নির্মাণের প্রতিবন্ধকতাসমূহ নিরসনকল্পে সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেছেন এবং সরকার ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের সম্মতি দিয়েছেন। বর্তমানে উক্ত ভবনের ভূমি বরাদ্দ সংক্রান্ত বিষয়ে অগ্রগতি চলমান আছে। তিনি আশা করে বলেন, “পুনরায় আপনাদের সেবা করার সুযোগ পেলে আমাদের সকল সদস্যদের কাঙ্কিত সকল স্বপ্ন বহুতল ভবন নির্মাণের কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে পারব। উক্ত পদক্ষেপ গ্রহণে বিলম্বের কারণে বিজ্ঞ সদস্যদের বসার স্থান সংকটের আংশিক নিরসনকল্পে আমরা জরুরী ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বর্তমান শের-ই-বাংলা ভবনের পশ্চিম পাশের্ সমিতির নিজস্ব অর্থায়নে একটি নয় তলা ভবন নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করেছি; যেখানে জুনিয়র আইনজীবি ও নারী আইনজীবিদের পৃথক বসার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া বার সমিতির লাইব্রেরীর উন্নয়নের জন্য আমি মন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ করে ৩০;০০,০০০/-(ত্রিশ লক্ষ) টাকা চেক গ্রহণ করি। ইহাও আমাদের বারের জন্য একটি নতুন দৃষ্টান্ত।”
এ.এম.আমিন উদ্দিন তার ইশতেহারে উল্লেখ করেন, বিগত নির্বাচনে তাঁর প্রদত্ত অঙ্গিকারের সিংহভাগ বাস্তবায়নে সফল হয়েছেন যার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য : সদস্যগণের বেনাভোল্ট ফান্ড এর প্রাপ্য সর্বোচ্চ ২,৮০,০০০০/- থেকে ৩৩,০০০০০/= টাকায় উন্নীত করণ, কন্ট্রিবিউটরী ফান্ড এর প্রাপ্য অর্থের পরিমান ৫০,০০০/=টাকায় উন্নীতকরণ, মাননীয় প্রধান বিচারপতির সাথে আলোচনাক্রমে মোশন বেঞ্চের সংখ্যা বৃদ্ধি করে বর্তমানে ১১টি রীট মোশন বেঞ্চ ও ১১টি ফৌজদারী মোশন বেঞ্চ কার্যকর আছে এবং এডভোকেট লাউঞ্জে শীতাতপ নিয়ন্ত্রনযন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে এবং সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপনে সার্বিক সহযোগিতার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
সুপ্রীমকোর্ট বার সমিতির সভাপতি আমিন উদ্দিন দৃঢ়তার সাথে বলেন, “আমাকে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিলে আমি বিজ্ঞ সদস্যগণের বসার স্থান নিশ্চিকল্পে একটি আধুনিক বহুতল ভবন নির্মানের চলমান প্রক্রিয়া সরেকারের সহযোগিতায় সম্পন্ন করে সমিতির বিজ্ঞ সদস্যগণের প্রাণের দাবী বাস্তবায়ন করতে পারব। বিগত ১বছরের মেয়াদকালে সমিতির বহুতল ভবন নির্মানের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনে একটি বিষয় প্রতীয়মান হয়েছে যে, সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া সমিতির বৃহত্তর ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্ভব নয়।” তিনি আশ্বস্থ করে বলেন যে, তিনি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় হতে সমিতির সদস্যগণের জন্য সকল বাস্তব ও কার্যকর সহযোগিতা আদায় করতে সক্ষম হবেন। তাছাড়া তিনি আদালত প্রাঙ্গণে আগত বিচারপ্রার্থী জনগণের বসার স্থানের ব্যবস্থা সহ সমিতির সদস্য গণের খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও তরুণ আইনজীবিদের কর্মশালার আয়োজনেরও প্রতুশ্রুতি প্রদান করেন।
তাছাড়া সুপ্রীমকোর্ট দিবসে সকল সদস্যগণের অংশগ্যহন নিশ্চিত না হওয়ায় তিনি সমিতির পক্ষে উক্ত অনুষ্টান বর্জন করেন। পরে সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উক্ত অনুষ্টানে উপস্থিত হয়ে এর তীব্র প্রতিবাদ করে বক্তব্য প্রদান করেন এবং এ বিষয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ফলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আইনজীবিদের সম্মিলিত অংশগ্রহনে আগামী সুপ্রীমকোর্ট দিবস উদযাপনের বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেন।
সুপ্রীমকোর্ট বার সমিতির সভাপতি আমিন উদ্দিন আরো বলেন, “বিগত নির্বাচনে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি মোতাবক আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি সমিতিকে সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ডের উর্ধ্বে রাখার যা আমার মেয়াদ কালে অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে সমিতি বেশী রাজনীতিমুক্ত ছিল, পরিশেষে আমি আমার চলমান উন্নয়ন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া ও আইনজীবিদের পেশাগত মর্যাদা রক্ষার্থে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে আপনাদের মূল্যবান ভোট ও সমর্থন প্রার্থনা করছি।”