করোনায় ই-রাজনীতি
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৪৫:১৪,অপরাহ্ন ০৫ এপ্রিল ২০২০ | সংবাদটি ৩৪৬ বার পঠিত
ঊষারবাণী ডেস্ক : মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনযাত্রাসহ দেশের প্রতিটি খাতের মতো প্রাণঘাতী ভয়াবহ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সরাসরি প্রভাব পড়েছে রাজনীতিতেও। করোনা ভাইরাস আতঙ্কে সরকারি ছুটি ও চলাচলে বিধি-নিষেধের বেড়াজালে রাজনৈতিক দলগুলোর সীমিত কার্যক্রম চলছে প্রযুক্তির সহযোগিতায়।
কোনো কোনো দল সংগঠনের জরুরি সভা করছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে। দলীয় নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর কাছে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন ভিডিওবার্তায়। গণমাধ্যমে প্রয়োজনীয় বিবৃতি পাঠাচ্ছেন ইমেইলে। আর দলের নেতারা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন ফোন, ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ ও ভাইবারে। সব দলেরই কেন্দ্রীয় কার্যালয়গুলো অঘোষিত লকডাউনেও নেতাকর্মীশূন্য।
করোনার থাবা বদলে দিয়েছে রাজনৈতিক দল ও নেতাদের চিরাচরিত সংবাদ সম্মেলনের ধরনও। করোনার প্রভাব থেকে উত্তরণে সরকারের পরিকল্পনা জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রবিবার যে সংবাদ সম্মেলন করবেন তাতেও থাকছে ভিন্নতা। সকাল ১০টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর এই সংবাদ সম্মেলনে থাকবে না আগের মতো সাংবাদিকদের উপস্থিতি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও দলের নেতাদেরও উপস্থিতি থাকবে না। শুধু বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতার এই সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সম্প্র্রচার করবে। বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিওগুলো বিটিভি-বেতারের সৌজন্যে সংবাদ সম্মেলনটি সরাসরি সম্প্র্রচার করবে।
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে এ মাসের ১৮ তারিখের মধ্যে এক দিনের জন্য হলেও জাতীয় সংসদের অধিবেশন আহ্বান করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। যদি ডাকতেই হয় তাহলে সেটিও ভিডিও কনফারেন্সে করা যায় কি না, সেরকম ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তবে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয় বলেও জানিয়েছেন স্পিকার।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন দলের নেতারা মাঝেমধ্যে যে সংবাদ সম্মেলন করছেন সেটিও করা হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থায়। দলের দুই-তিন জন নেতা সঙ্গে উপস্থিত থাকলেও আসন বিন্যাস থাকছে করোনা প্রতিরোধে প্রমাণ-দূরত্ব মেনেই।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর গতকাল শনিবার সভা হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপে। পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অনলাইন সভায় যুক্ত হন পলিটব্যুরোর সদস্যরা। সভাটি সঞ্চালনা করেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা এবং সরকারের কাছে আহ্বান-দাবিসমূহ তুলে ধরছেন বিবৃতির মাধ্যমে। একইভাবে সংগঠনের জরুরি কাজ সারছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাম গণতান্ত্রিক জোট, শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও নাজমুল হক প্রধানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদ এবং আ স ম আবদুর রবের জেএসডি।
সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় বক্তব্য এবং সরকারের কাছে দাবি-আহ্বানসমূহ তুলে ধরছেন সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে। কয়েক দিন আগে একটি ভিডিওবার্তার মাধ্যমেও তিনি বক্তব্য প্রচার করেন। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ প্রায়ই নিজের নানা দাবি-প্রস্তাব সংবলিত বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠাচ্ছেন ইমেইলে।
সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিরাও বাসায় অবস্থান করলেও ফোনে, ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে এবং ইমো বা হোয়াটঅ্যাপে নিজ এলাকার নেতাকর্মী ও প্রশাসনের লোকজনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলাপ সারছেন। এক জন প্রতিমন্ত্রী জানান, বর্তমানে দাপ্তরিক ও রাজনৈতিক যোগাযোগ প্রায় পুরোটাই তিনি করছেন ডিজিটাল প্লাটফরমে। প্রয়োজনে এলাকার লোকজন ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করছেন। দলীয় নির্দেশনাসমূহও মনিটর করছেন ডিজিটাল প্রক্রিয়ায়।