ভিডিও ভাইরালের পরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টনক নড়েছে: হাইকোর্ট
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:১২:০৬,অপরাহ্ন ০৬ অক্টোবর ২০২০ | সংবাদটি ৩৮৮ বার পঠিত
সিলেট ব্যুরো :
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে সংঘটিত বর্বর ঘটনায় দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোন অবহেলা আছে কিনা তা অনুসন্ধানে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছে হাইকোর্ট। নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটিতে জেলার সমাজ সেবা কর্মকর্তা ও চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজের অধ্যক্ষকে রাখা হয়েছে। এসময় জঘন্য ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে আদালতকে অনুরোধ করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি এএম আমিন উদ্দিন।
আদেশপ্রাপ্তির পনেরো দিনের মধ্যে অবহেলার বিষয়ে অনুসন্ধান করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বেগমগঞ্জের ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপসারণ করতে বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ওই ভিডিওটি পেনড্রাইভ বা সিডিতে সংরক্ষণের পাশাপাশি এর একটি কপি রাষ্ট্রপক্ষের মাধ্যমে আদালতে দাখিল করতে বিটিআরসিকে বলা হয়েছে।
বিচারপতি মো: মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার (৫ অক্টোবর) স্বত:প্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন। আদালত বলেছে, ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরই প্রশাসনের টনক নড়েছে।আদেশে ওই বর্বর ঘটনায় করা মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্যাতিত নারী ও তার পরিবারকে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
আদালত বলেছে, এই বর্বর ঘটনা যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে না আসত তাহলে এত বড় অপরাধের কথা গোপনই থেকে যেত। ৩২ দিন আগে এই ঘটনা ঘটিয়েছে কিছু দুষ্কৃতকারী। কিন্তু এতদিনেও কেন তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা প্রশাসনের নজরে এলো না? তাহলে কি ওই সংঘটিত ঘটনার পেছনে যারা দায়ী তাদের পেছনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা কোন ক্ষমতাধর ব্যক্তির প্রভাব ছিলো? আদালত আরো বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যখন এ ধরনের বর্বর ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয় তখন বহি:বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।
এদিকে হাইকোর্টের আদেশে আগামী ২৮ অক্টোবরের মধ্যে বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এই মামলার তদন্তের সর্বশেষ অগ্রগতি জানাতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটিকে সব ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট প্রদান করতে জেলা প্রশাসককে বলা হয়েছে।
নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও জামিউল হক ফয়সাল। ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি অপসারণের জন্য আদালতের নির্দেশনা চান আইনজীবীরা। আদালত বলেন, ৩২দিন পর ঘটনাটি প্রকাশ পেয়েছে, এতদিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি করেছে?
শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম আমিন উদ্দিন বলেন, রবিবার মধ্যরাতে এই ঘটনা ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তখন ভিডিওটি দেখে মনে হয়েছে এর চেয়ে জঘন্য ও বর্বর কাজ আর হতে পারে না। দেশে এ জাতীয় জঘন্য বর্বরোচিত ঘটনার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি নিশ্চিতকরা উচিত। এটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপসারণ করা উচিত।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, এই ঘটনা সামাজের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। শুধু সমাজই নয়, বহি:বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এই দুষ্কৃতকারীদের কারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে সেটা খুঁজে বের করা দরকার। সম্প্রতি সিলেটে স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা রোধে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ করা দরকার।
ব্যারিস্টার জ্যের্তিময় বড়ুয়া বলেন, দুষ্কৃতকারীদের একজন এই ঘটনা ঘটানোর সময় ভিডিও ধারণ করেছে। পরে ভিডিও দেখিয়ে ওই নারীকে ব্লাকমেইল করেছে। পরে দুষ্কৃতকারীদের দাবি পূরণ না করায় ভিডিওটি ভাইরাল করে দিয়েছে। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা সারাদেশেই ঘটছে। কিন্তু কোন না কোনভাবে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তারা পার পেয়ে যায়। এই কোর্টের উচিত নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তের বিষয়ে ফলোআপ রাখা। যাতে অপরাধীরা পার পেয়ে না যায়। তিনি বলেন, এই ঘটনায় যে মামলা হয়েছে সেখানে দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারের নাম নাই। তাকে পুলিশ নয়, র্যাব গ্রেপ্তার করেছে।
অ্যাডভোকেট জেডআইখান পান্না বলেন, বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ কি করেছে? ৩২ দিনেই তারা ঘটনাটি জানতে পারেনি, না জেনেও দুষ্কৃতিকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। সেটা খুঁজে বের করা উচিত। এছাড়া শুনানিতে আইনজীবী রাশিদা চৌধুরী নিলু, জামিউল হক ফয়সাল ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো: রাসেল চৌধুরী অংশ নেন। শুনানি শেষে হাইকোর্ট উপরোক্ত আদেশ দেয়। আদালত বলেন, এই ঘটনায় মানবাধিকার বা নারীবাদী সংগঠন গুলো এগিয়ে আসেনি।