বড়লেখায় ইউপি চেয়ারম্যান আজির উদ্দিনকে হত্যার চেষ্টা, প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক!
প্রকাশিত হয়েছে : ১:০০:১৬,অপরাহ্ন ০৯ নভেম্বর ২০২০ | সংবাদটি ৬৬১ বার পঠিত
বড়লেখা প্রতিনিধি : মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান কে একদল কুখ্যাত সন্ত্রাসী কর্তৃক পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রাণনাশের চেষ্ঠার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে সন্ত্রাসী আক্রমনের স্বীকার ইউপি চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন কর্তৃক অভিযুক্ত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বড়লেখা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। মামলায় অভিযুক্ত আসামীগণ হলেন, উপজেলার পশ্চিম দক্ষিণভাগ গ্রামের মৃত শরিফ/ শরিফ পীর এর ছেলে জালাল উদ্দিন, মৃত ওমর উদ্দিনের ছেলে ফজলুর রহমান ফজলু ও নজরুল ইসলাম পাশা সহ অজ্ঞাতনামা ১০/১২জন।
গত ২৯ অক্টোবর রাত ৮ ঘটিকায় দক্ষিণভাগ বাজারস্থ ইউপি চেয়ারম্যান আজির উদ্দিনের মালিকানাধীন রয়েল ফ্যাশন নামক কাপড়ের দোকানে উপরোক্ত ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাটি সংঘটিত হয়। হামলায় দোকানের স্বত্তাধিকারী ইউপি চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন ও শরিফ আহমদ গুরুতর আহত হন। সন্ত্রাসীরা দোকানের ক্যাশবাক্স ভেঙ্গে নগদ ৮৩ হাজার টাকা, ৫০ হাজার টাকার মূল্যবান কাপড় লুপাট করে নিয়ে যায় এবং তাদের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্র দা, লোহার রড, কাঠের লাঠির আক্রমনে আরো ৩০হাজার টাকার ক্ষতি সাধিত হয়।
মামলার এজাহারের বিবরণ এবং সরেজমিনে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বিবাদীগণ দক্ষিণভাগ সহ পুরো বড়লেখা এলাকায় কিছু অসাধু প্রশাসনিক কর্মকর্তার মদদে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তুলেছে। বিগত ইউপি নির্বাচনে বিবাদীগণ দক্ষিণভাগের বর্তমান চেয়ারম্যানের প্রতিদ্ধন্ধি প্রার্থী মহি উদ্দিন আদনানের সমর্থক তথা লাটিয়াল বাহিনির ভূমিকায় ছিল এবং নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর মারাত্বক ভরাডুবি হওয়ায় সবসময়ই তারা নির্বাচিত চেয়ারম্যানের বিরোধিতায় তৎপর ছিল। সামান্য সুযোগ পেলেই তারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়তো। প্রকাশ্যে চেয়ারম্যানকে দেখলেই তারা উস্কানীসূলক ও অশ্লীল অঙ্গ ভঙ্গি করতো। তাছাড়াও বিবাদী জালাল,ফজলু ও নজরুল এলাকায় অসহায় মানুষের ভূমি জবর দখল, দোকান মার্কেট দখল, সরকারী জায়গার গাছ চুরি, মাদক সেবন বিক্রয় এবং অবৈধ সুদের ব্যবসার সাথে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে থানা, কোর্ট সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অসংখ্য মামলা রয়েছে। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে এলাকাবাসী অতিষ্ট হয়ে বিচারপ্রার্থী হওয়ায় বিবাদী জালালকে চেয়ারম্যান ডেকে এনে ভালো হয়ে চলার জন্য সু পরামর্শও প্রদান করেন। এতে বরং সন্ত্রাসীগণ আরো বিগড়ে গিয়ে চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে প্রাননাশের হুমকি ও গালিগালাজ করতে থাকায় তিনি বড়লেখা থানা একটি অভিযোগ দায়ের করেন যা থানার দারগা শরিফ উদ্দিনের নিকট তদন্তাধীন আছে। অভিযোগের খবর পেয়ে উপজেলার আরেঙ্গাবাদ এলাকার মৃত গিয়াশ উদ্দিনের ছেলে (চেয়ারম্যান আজির উদ্দিনের নির্বাচনি প্রতিপক্ষ) মহি উদ্দিন আদনানের নির্দেশে সন্ত্রাসীগণ ভয়ঙ্কর দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দক্ষিণভাগ বাজারস্থ ইউপি চেয়ারম্যান আজির উদ্দিনের মালিকানাধীন রয়েল ফ্যাশন নামক কাপড়ের দোকানে উপরোক্ত ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাটি ঘটায়। হামলায় স্বত্তাধিকারী ইউপি চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন ও শরিফ আহমদ গুরুতর আহত হন। বিবাদীগণ চেয়ারম্যান এর মাথা লক্ষ্য করে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে দা দিয়ে কোপ দিলে অল্পের জন্য লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়ে তা পিছনে ক্যাশ বাক্সে ও তাড়িয়ার উপর পড়ে মারাত্বক ভাংচুর হয়। পরে সন্ত্রাসীগণ চেয়ারম্যানকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যার চেষ্টা করে।
স্বাক্ষী শরিফ উদ্দিন চেয়ারম্যানকে রক্ষায় এগিয়ে এলে বিবাদী ফজলু লোহার রড দিয়ে প্রচন্ড জোরে শরিফের বাম কাধে আঘাত করে মরাত্বক জখম করে। সন্ত্রাসীরা দোকানের ক্যাশবাক্স ভেঙ্গে নগদ ৮৩ হাজার টাকা, ৫০ হাজার টাকার মূল্যবান কাপড় লুপাট করে নিয়ে যায় এবং তাদের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্র দা, লোহার রড, কাঠের লাঠির আক্রমনে আরো ৩০হাজার টাকার ক্ষতি সাধিত হয়। উক্ত হামলায় জড়িতদের আসামী করে ঘটনার রাতেই চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন বাদী হয়ে বড়লেখা থানায় মামলা দায়ের করেন।
এলাকাবাসী আরো জানান, গত ১০ অক্টোবর সন্ত্রাসী ফজলুর রহমান, নজরুল ও তার সংগীয় আরো ১৫/২০জন সন্ত্রাসী মিলে গ্রামের সরকারী কবরস্থান হতে অনেক পুরোনো ও বিশাল আকৃতির বটগাছ টি কেটে নিয়ে যায়। কবর স্থানের কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান বটল ও সোহেল মিয়া গঠনাস্থলে এসে বাধা প্রদানদান করলেও চুরগণ কোন বাধার তোয়াক্কা না করে গাছ কেটে নিয়ে যান। উপরন্তু বাধাদান কারীগণ চুরদের দা,কুড়াল,সাবল ইত্যাদি দ্বারা প্রাণে হত্যার চেষ্ঠার স্বীকার হোন।
এ বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে সাইফুর রহমান বটল, বশির আহমদ, আব্দুস সোবহান, আব্দুল গণি, সোহেল মিয়া, আজিম উদ্দিন, অদুদমিয়া, আং আহাদ, হাসান মিয়া, মাহমুদুল হাসান ও ফয়ছল আহমদ বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহি অফিসার বড়লেখা, সহকারী কমিশনার ভূমি বড়লেখা বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এছাড়াও ঘটনার দিন কবর স্থানের সহ-সেক্রেটারী সাইফুর রহমান বটল বাদি হয়ে বড়লেখা থানায় উক্ত গাছ চুরি বিষয়ে ফজলুর রহমান ফজলু ও অপরাপর আসামীদের আসামী করে একটি জিডি এন্ট্রি করেন। জিডি নং ৪৪৬ (তারিখ : ১০/১০/২০২০ইং)
সাইফুর রহমান বটলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বড়লেখা উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি নুসরাত লায়লা নীরা এর নেতৃত্বে বড়লেখা থানার পুলিশ ও দক্ষিণভাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন(বর্তমানে হামলার স্বীকার), তহশিলদার নুরুল ইসলাম এবং বিভিন্ন পত্রিকার গণমাধ্যম কর্মীগণ সহ গত ১২/১০/২০২০ তারিখে সন্ধা ৭.০০টার সময় এক ঝটিকা ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হয়। অভিযানে এলাকার দুর্ধর্ষ গাছ চুর ফজলুর রহমানের বাড়ীর ভিতর হতে চুরিকৃত গাছের ৯ খন্ড(৯ খাড়ি) গাছ এবং পার্শবর্তী স’মিল হতে আরো ২ খন্ড(খাড়ি) গাছ উদ্ধার ও জব্দ করা হয়। জব্দকৃত গাছ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আজির উদ্দিনের জিম্মায় হস্তান্তর করেন এসিল্যান্ড নুসরাত লায়লা।
এছাড়াও কিছুদিন পূর্বে উক্ত ফজলুর রহমান, জালাল ও তাদের সহযোগীরা স্থানীয় এন.সি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামন হতে রেলওয়ের জায়গা হতে বিশাল আকৃতির অনেক মূল্যবান কয়টি গাছ রাতের আধারে চুরি করে নিয়ে যান। এ অভিযোগে ফজলুর রহমান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে রেলওয়ে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন যা চলমান রয়েছে।
সন্ত্রাসী ফজলুর রহমান ফজলু গংদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যম কর্মীকে হত্যা চেষ্ঠার অভিযোগে নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্র্যাট আদালত মৌলভীবাজারে মামলা রয়েছে। গত ২২সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্যাট আদালত মৌলভীবাজারে সাংবাদিক রাহেলা সিদ্দিকা উপরোক্ত আসামী বড়লেখা দক্ষিণভাগ এলাকার মৃত উমর আলীর ছেলে ফজলুর রহমান ফজলু সহ কতিপয় সন্ত্রাসীদের আসামী করে মামলা দায়ের করেন। এ ছাড়াও গত ১ সেপ্টেম্বর এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের প্রকাশ্য হুমকি দেয়ার অভিযোগে ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে বড়লেখা থানায় একটি জিডিএন্ট্রি করা হয়েছে। জিডি নং ৬৬৪।
সরেজমিনে এলাকাবাসী হতে আরো জানা যায়, ২৯ অক্টোবরের ঘটনার রাতেই হামলাকাীদের বিরুদ্ধে বড়লেখা থানায় অভিযোগ দিয়েছিলেন হামলার স্বীকার দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন। ঐদিনের ঘটনার সময় যারা সন্ত্রাসীদের জঘন্য কার্যকলাপের বিরোধিতা করেছিলেন, প্রতিবাদ করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে ঘটনার পরদিন ৩০ অক্টোবর মামলা দায়ের করেছেন ২৯ অক্টোবরের সন্ত্রাসী হামলার অন্যতম আসামী ফজলুর রহমান। অথচ অভিযোগে তিনি আগের দিনের ঘটনার পূর্বের সময় ও তারিখ দিয়েছেন এবং পুলিশ ব্যাক ডেটে মিথ্যা ঘটনার সাজানো মামলাও গ্রহন করে দুটি মামলা এক সাথে রেকর্ড করেছেন। ফজলুর রহমান ৩০ অক্টোবর থানায় মামলা লেখানো ও দাখিলের সময়ের প্রত্যক্ষদর্শীও রয়েছেন বলে এলাকাবাসী উল্লেখ করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার বেশ কয়েকজন প্রবীন মুরব্বি জানান, কয়দিন আগে সরকারী কবর স্থান হতে ফজলু, নজরুল ও জালালগংরা গাছ চুরি করে নিয়ে গেলে এবং এসিল্যান্ডের ঝটিকা অভিযানে গাছগুলো ফজলুর বাড়ী হতে উদ্ধার করা হয় এবং উদ্ধারকৃত গাছগুলো চেয়ারম্যানের জিম্মায় হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এতবড় জঘন্য অপরাধিদের বিরুদ্ধে কোন মামলা না দেয়ায় চেয়ারম্যান কিছুটা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন। আর এতে ক্ষিপ্ত হয়েই সন্ত্রাসীগণ চেয়ারম্যানকে প্রাণে হত্যার চেষ্টা করে। দক্ষিণভাগ এলাকার সকল ধরনের সন্ত্রাসী ও অপরাধ মূলক কার্যকলাপে ইউএনও শামীম আল ইমরান ও বনও পরিবেশ মন্ত্রীর বেসরকারী এপিএস রাজিব দাস পিছন থেকে কলকাটি নাড়াচ্ছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।
ফজলুর রহমান কর্তৃক দায়ের কৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বলেন,ফজলুর রহমানের মামলাটির তদন্তে আমি দ’ুদিনই ফজলুকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্দেশ্যে এলাকায় গিয়ে খুঁজ করেছি,কিন্তু কোন সাক্ষাৎ পাইনি। তদবিরের বলে ফজলু মামলাটি ব্যাক ডেটে থানায় জমা দিয়েছে এবং রেকর্ড করিয়েছে এমন অভিযোগ বিষয়ে কিছুই জানেননা বলে তিনি উল্লেখ করেন।
হামলার স্বীকার দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজির উদিÍনের দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বড়লেখা থানার এ.এস.আই ইয়াকুব হোসেইন বাদী বিবাদী উভয়পক্ষের মামলা থানা কর্তৃক রেকর্ড হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তবে এপর্যন্ত সম্পন্ন হওয়া মামলার তদন্ত সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে দিতে তিনি অপরাগতা করেন।
সন্ত্রাসী হামালা হতে ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন বলেন, নির্বাচনী প্রতিপক্ষ হিসেবে আদনান,জালাল, ফজলু, নজরুল ও তাদের গুটি কয়েক সহযোগিরা সবসময়ই আমার সাথে শত্রæতা পোষে রেখেছিলো। আমি সাধ্যমতো তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সম্প্রতি সরকারী কবরস্থান হতে তাদের চুরিকৃত গাছগুলো ফজলুর বাড়ী হতে উদ্ধার ও জব্দ করে এসিল্যান্ড নুসরাত লায়লা অনেকটা জোর করেই আমার জিম্মায় হস্তান্তর করেন অথচ উর্দ্ধতন কর্তপক্ষের নির্দেশে তিনি চুরদের বিরুদ্ধে কোন মামলা দেননি। আর এ থেকেই সন্ত্রাসীগণ ক্ষেপে গিয়ে আমাকে প্রাণনাশের চেষ্টা করেছে।