শিলচর থেকে ধরে আনা হয় এসআই আকবরকে!
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:১৬:০২,অপরাহ্ন ১০ নভেম্বর ২০২০ | সংবাদটি ৩৩০ বার পঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক : পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদ নামক এক যুবকমারা যাওয়ার ২৯ দিন পর প্রধান অভিযুক্ত বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া গ্রেফতার হয়েছে। ভারতে পালানোর সময় সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে জেলা পুলিশ।
তবে বিজিবি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, ভারতীয় খাসিয়ারা আকবরকে আটক করে এক যুবকের মাধ্যমে তাকে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে সোর্পদ করেছে। আকবর গ্রেফতারের খবরে সিলেটের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। আর রায়হানের পরিবারের পক্ষ থেকে দ্রুত বিচারকার্য সম্পন্ন করে আকবরসহ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সকলের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
এসআই আকবর গ্রেফতার নিয়ে বিজিবি’র কাছ থেকে পাওয়া গেছে ভিন্ন তথ্য। বিজিবি ১৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. রফিকুল ইসলাম, পিএসসি জানান, তাদের সূত্রের দেওয়া তথ্যমতে গত রবিবার ভারতের শিলচর থেকে খাসিয়ারা আকবরকে ধরে আনে।। গতকাল সোমবার ভারতীয় খাসিয়ারা আকবরকে পুশব্যাক করে। এসময় ডোনা সীমান্তের কাঁটাতারের নিচে একটি পাইপ দিয়ে আকবরকে বাংলাদেশ সীমান্তে পাঠায় খাসিয়ারা। ওই সময় ডোনা এলাকার রহিম উদ্দীন সাথে ছিলেন বলে জানান বিজিবির ওই কর্মকর্তা।
সূত্র জানায়, আকবরকে আটকের পর গত রবিবার রাতে নিয়ে আসা হয় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ডোনাবস্তিতে। পরে তাকে হস্তান্তর করা হয় ডোনাবস্তির ‘হেডম্যান’র (খাসিয়াদের বস্তি প্রধান) কাছে। পরে সেখান থেকে তাকে রহিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠানো হয়।
গ্রেফতারের পর এসআই আকবরকে সন্ধ্যা ৫টা ৫৩ মিনিটে কড়া নিরাপত্তায় নিয়ে আসা হয় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে। এরপর সেখানে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, রায়হান হত্যাকান্ডের তিনদিন পর থেকে জেলা পুলিশ এসআই আকবরসহ জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতারে তৎপরতা শুরু করে। সম্ভাব্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়। জিজ্ঞসাবাদ করা হয় অনেককে। সকল থানা পুলিশকে সতর্ক রাখা হয়। গত রবিবার গোপন সূত্র থেকে খবর আসে আকবর সীমান্ত দিয়ে ভারত পালিয়ে যেতে পারে। এই খবর পাওয়ার পর জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট থানার ওসিকে বিশেষ নজরদারি বৃদ্ধির নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সাথে কানাইঘাট সীমান্ত এলাকায় সাদা পোষাকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। গতকাল সোমবার সকাল ৯টার দিকে ভারত পালিয়ে যাওয়ার সময় সাদা পোষাকী পুলিশ কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে আকবরকে গ্রেফতার করে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার ভারতে পালানোর সময় আকবরকে গ্রেফতারের দাবি করলেও গ্রেফতারের আগের কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে অন্যচিত্র। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে কয়েকজন আদিবাসী খাসিয়া যুবক রশি দিয়ে তার হাত পা বাঁধছে। অপর একটি ভিডিওতে বেঁধে রাখা অবস্থায় আকবরকে খাসিয়া যুবকরা জিজ্ঞাসাবাদ করছে। ওই সময় খাসিয়া যুবকদের প্রশ্নের জবাবে আকবর বলছিল, ‘আল্লাহর দোহাই আমি মারি নাই। ছিনতাইর সময় ৫-৬ জন পিটিয়ে তাকে (রায়হান) মেরেছে। আমি তাকে হাসপাতালে পাঠিয়েছি।’ ভারতে পালিয়ে আসা প্রসেঙ্গ ওই ভিডিওতে এসআই আকবর বলছিল, ‘আমাকে সাসপেনসন করা হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছিল দুই মাস গেলে হ্যান্ডেল করা যাবে। তাই আমি পালিয়ে এসেছি। অন্য কোন কারণে পালিয়ে আসিনি।’
অপর আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে এক যুবক আকবরের হাত বাঁধতে চাইলে আকবর অনুনয়-বিনয় করছে। তখন ওই যুবক বলছে ‘তুই হ্যান্ডকাপ পরিয়ে অনেক লোককে ঘুরিয়েছিস। তোর হাত বেঁধে ছবি তুলে সিও স্যারকে পাঠাতে হবে।’
ভিডিওগুলোতে যেসব যুবকদের দেখা যাচ্ছিল তারা বাংলায় কথা বললেও তাদের কণ্ঠস্বর ছিলো অবাঙালিদের মতো। ওই ভিডিও দেখে কানাইঘাটের স্থানীয় কয়েকজন জানিয়েছেন, ভিডিওর যুবকদের কথাবার্তা ও এলাকা দেখে বুঝা গেছে, তারা ভারতের খাসিয়া আদিবাসী হতে পারেন।
ভিডিও সম্পর্কে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আকবরকে জেলা পুলিশই গ্রেফতার করেছে। পুলিশ কোন ভিডিও করেনি। এর আগে কেউ কোন ভিডিও করলে সেটা আমরা জানি না’। পুলিশ সুপার আরও জানান, ‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল আকবর ভারতে পালিয়ে যাবে। সে অনুযায়ী পরিকল্পনা নিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এমনও হতে পারে সে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসার সময়ও গ্রেফতার হতে পারে। জিজ্ঞাসাবাদে সবকিছু জানা যাবে।’
আকবরকে পালাতে কেউ সহযোগিতা করেছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আকবর মাত্র গ্রেফতার হয়েছে। তাকে তদন্তকারী সংস্থা পিবিআইতে হস্তান্তর করা হবে। এরপর নিয়ম অনুযায়ী পিবিআই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। আকবরকে পালাতে কোন পুলিশ কর্মকর্তা সহযোগিতা করে থাকলেও তদন্তে নিশ্চয় তা উঠে আসবে।’ আকবর গা ঢাকা দেওয়ার পর তাকে সহায়তাকারী হিসেবে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার আবদুল্লাহ আল নোমান নামের এক যুবকের নাম ওঠে আসে। আকবরের সাথে নোমানও দেশ থেকে পালিয়েছে এমন গুঞ্জনও ওঠেছিল। নোমান সম্পর্কে পুলিশের কাছে কোন তথ্য আছে কি-না জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘ইতোমধ্যে নোমানের বাবা-মা ও স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতারে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এসআই আকবর গ্রেফতারের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। অপরাধী যতোই শক্তিশালী হোক তাকে আইনের আওতায় আসতে হবে। আকবর জঘন্য অপরাধ করেছে, তাকে শাস্তি পেতে হবে।’
এদিকে, গ্রেফতার নিয়ে পুলিশের দেওয়া তথ্যের সাথে দ্বিমত পোষন করেছেন কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য সামছুল ইসলাম। তিনি জানান, ভারতীয় খাসিয়ারাই আকবরকে ধরে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। রহিম উদ্দিন নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে তাকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। ভারতীয় খাসিয়াদের সাথে রহিমুদ্দীনের ব্যবসা রয়েছে।