কুলাউড়ায় মওলানা ভাসানীর মৃত্যু বার্ষিকি উপলক্ষে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল সম্পন্ন
প্রকাশিত হয়েছে : ২:২১:৫১,অপরাহ্ন ২৫ নভেম্বর ২০২০ | সংবাদটি ৪০৬ বার পঠিত
মাশরুর ফারহান তাহসিন, কুলাউড়া : মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৪তম মৃত্যু বার্ষিকী পালন করেছে মানবতার জন্য ভাসানী ফাউন্ডেশন ( ভাসানী ফাউন্ডেশন ফর হিউমিনিটি) কেন্দ্রীয় কমিটি । ২২ অক্টোবর (রবিবার) মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলাধীন , কুলাউড়া জয়পাশাস্থ ভাসানী কুঞ্জে এ অনুষ্টানের আয়োজন করা হয়। মূলত করোনা সংক্রমণের কারণে এ বছর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
সাংবাদিক রাহেলা সিদ্দিকার সঞ্চালনায় এবং ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ন্যাপ ভাসানীর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেনভাসানী ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এমনেস্টি ইন্টারনেশনালের কার্যকরী সদস্য, মৌলভীবাজার জেলা কবি সাহিত্যিক লেখক পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও হাওর বাঁচাও কৃষক বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুলাউড়া ইয়াকুব তাজুল মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যাপক ও সংস্কৃতি কর্মী ডক্টর রজত কান্তি ভট্রাচার্য, শায়েস্থাগঞ্জ কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুর রকিব, কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ, বড়লেখা দক্ষিণভাগ এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, বড়লেখা দক্ষিণ ভাগের জামাল প্লাজা ও তাজমহল কমিউনিটি সেন্টারের স্বত্বাধিকারী আলহাজ্ব তাজ উদ্দিন আহমদ প্রমুখ।
প্রধান অতিথি অধ্যাপক মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন বলেন, ‘মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী জীবনের শুরু থেকে শেষ অবধি তিনি দেশ, মাটি আর মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। একটি শোষণহীন, অসাম্প্রদায়িক, সমতা আর পালনবাদী সমাজ ব্যবস্থার জন্য নিজের জীবনের সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন। মানব মুক্তির আদর্শ থেকে তিনি এক দিনের জন্যও বিচ্যুত হননি বা অবসর খোঁজেননি। জীবনের প্রায় প্রতিটি বছর, মাস, সপ্তাহ, দিন তিনি আন্দোলন, সংগ্রাম, কর্মসূচির মধ্যেই থেকেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এত দীর্ঘকালব্যাপী ও ধারাবাহিকভাবে কেউ সক্রিয় আন্দোলন, সংগ্রাম, কর্মসূচির ভেতর থেকেছেন বলে আমার জানা নাই।’
প্রধান অতিথি আরো বলেন, ‘নিম্নস্তরের মানুষের প্রতি মৌখিক ভালোবাসা ও দরদ দেখিয়ে অন্তরে অশেষ ঘৃণা পোষণ করে এ উপমহাদেশের যে সব রাজনৈতিক নেতা রাষ্ট্রের ও সমাজের উচ্চস্তরে উঠে গেছেন এবং জনগণের দুঃখ-দুর্দশার কথা অবলীলায় ভুলে গেছেন, ভাসানী ছিলেন তাদের বিপরীত মেরুর মানুষ। ধীরে ধীরে যখন তিনি সমাজে উচ্চ আসন পাচ্ছিলেন, তখন তিনি কৃষকের পোশাক বর্জন করে “ভদ্রলোক” হওয়ার প্রয়োজনবোধ করেননি। তার চরিত্রের একটি মৌলিক ও অসামান্য তাৎপর্য এই ব্যাপারটির মধ্যেও খুঁজে পাওয়া যাবে।’
মওলানা আব্দুল হামিদখান ভাসানী মৃত্যু বার্ষিকি উপলক্ষে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। অনুষ্টানে ফাউন্ডেশনের সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন এর অসুস্থ জ্যৈষ্ট পুত্র মুবতাসিম ফুয়াদ তাসনিমের আশু রোগ মুক্তির জন্যও দোয়া করা হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের একজন স্বপ্নদ্রষ্টা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ছিলেন, যে দলটি পরবর্তী সময়ে নাম বদল করে হয়েছে আওয়ামী লীগ। তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নামে একটি বামপন্থী রাজনৈতিক দলও গঠন করেছিলেন।
১৭ নভেম্বর (মঙ্গলবার) ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের এইদিনে ঢাকার পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরে টাঙ্গাইলের সন্তোষে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। টাঙ্গাইলের সন্তোষে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে। ।
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী অধিকারবঞ্চিত অবহেলিত মেহনতি মানুষের অধিকার ও স্বার্থরক্ষায় আজীবন নিরবচ্ছিন্নভাবে সংগ্রাম করে গেছেন। জাতীয় সংকটে জনগণের পাশে থেকে মওলানা ভাসানী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি দেশ ও জনগণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেছেন। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সবসময় ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতেন। ক্ষমতার কাছে থাকলেও ক্ষমতার মোহ তাকে কখনও আবিষ্ট করেনি। ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন নির্মোহ, অনাড়ম্বর ও অত্যন্ত সাদাসিধে। তার সাধারণ জীবনযাপন এ দেশ ও জনগণের প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রতিফলন।