কে হচ্ছেন কুলাউড়ায় আগামী দিনের পৌর মেয়র !
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:১০:৫০,অপরাহ্ন ১৫ জানুয়ারি ২০২১ | সংবাদটি ৪২১ বার পঠিত
মুবতাসিম ফুয়াদ তাসনিম, কুলাউড়া থেকে : আগামী ১৬ জানুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য কুলাউড়া পৌরসভা নির্বাচনের শেষ মুহুর্তের প্রচার প্রচারণা প্রায় শেষ। আজ মধ্যরাত হতে সকল ধরনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হতে গেছে। ক’দিন ধরে পোষ্টারে পোষ্টারে ছেয়ে আছে পৌরসভার অলিগলি। মেয়র, মহিলা ও পুরুষ কাউন্সিলর প্রার্থীরা শেষ মুহুর্তে ভোটারদের মন জয় করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন। নির্ঘূম প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে সময় পার করছেন প্রার্থীরা।
বর্তমান মেয়র আলহাজ্ব শফি আলম ইউনুছ সকল ওয়ার্ডে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন নিজস্ব গতিতে। তিনি চলতি মেয়াদের ৫ বছর মেয়র থাকাকালে তার গৃহিত উন্নয়ন জনসমক্ষে তুলে ধরে একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করে ফেলেছেন ভোটারদের কাছে। বিগত ৫বছর কুলাউড়া পৌরসভাকে এ গ্রেডে উন্নীতকরণ, ব্যাপক হারে রাস্তাঘাট,ড্রেন,কালভার্ট এর উন্নয়ন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এতিম খানায় ব্যাপক হারে আর্থিক সহায়তা প্রদান, বিগত করোনাকালীন সময়ে পৌরসভার ও নিজের অর্থায়নে ২২ লক্ষাধিক টাকার ত্রান সহায়তা প্রদান এবং সর্বশেষ পৌরএলাকাকে ৮০ কোটি টাকা মূল্যের ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্পে অন্তর্ভূক্তকরণ বর্তমান মেয়রের ভোটারদের কাছে পাহাড়সম জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ। তাছাড়া নির্বাচিত হলে কুলাউড়ার যানজট সমস্যা নিরসন, দুটি কাঁচা বাজারকে তিনতলায় করণ, সিএনজি, অটো রিক্সার জন্য পৃথক স্ট্যান্ড তৈরী এবং হাকরদের জন্য পৃথক বাজার স্থাপন সহ বিভিন্ন নির্বাচনী প্রতশ্রিুতির ফলে মেয়র পদে জয় রথে তিনি সেকলের চাইতে অনেকটাই এগিয়ে।পৌরসভার ভোটারগণ মনে করেন, বিগত নির্বাচনী ওয়াদার সিংহভাগই বর্তমান মেয়র পূরণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
তাছাড়া বিপুল জনপ্রিয়তা সম্পন্ন বয়োজৈষ্ঠ শফি আলম ইউনুছ কে তৃণমূল হতে দলীয় পছন্দে শীর্ষে না রাখা এবং সর্বশেষ স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কারণে বহিষ্কারের ঘোষণা দেয়া এবং তাঁর ছেলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ফজলে নুর কে এবং জামাতা উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মনিকে বহিষ্কার করায় আওয়ামী ঘরানার সাধারণ ভোটারদের সহমর্মিতা একচেটিয়া ভাবে বর্তমান মেয়রের দিকেই ধাবিত হয়েছে বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। যা তাঁর জয়ের পথে নিয়ামক হতে পারে বলে সাধারণের ধারনা।
আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী সিপার উদ্দিনের পক্ষে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ দফায় দফায় কুলাউড়ায় সভা এবং গনসংযোগ করেছেন। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের (সিলেট বিভাগীয় ) সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক ও আরেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ বিভাগ) শফিউল আলম নাদেল সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সেক্রেটারী এস.এম.জাকির হোসেন নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কুলাউড়ায় এসেছেন তাদের প্রার্থীর ভোট বাড়াতে। এছাড়াও জেলা আওয়াম লীগের সাধারন সম্পাদক মিছবাহুর রহমানসহ জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধভাবে নিরলসভাবে গনসংযোগ, প্রচার–প্রচারনা, মিছিল পথ সভা ইত্যাদি চালিয়ে যাচ্ছেন নৌকার প্রার্থীর পক্ষে। নৌকার প্রার্থী অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আধুুনিক পৌরসভা গঠনে কাজ করার সুযোগ প্রদানে পৌরবাসীর সমর্থন কামনা করছেন।
কুলাউড়ায় নৌকা প্রার্থীদের লাগাতার পরাজয়, লোক দেখানো প্রচারনার অতীত ইতিহাস এবারও ব্যতিক্রম হবেনা বলে সাধারণ ভোটারদের ধারনা। তাছাড়া উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন হতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বাহিনী নিয়ে পৌরএলাকায় ভয়ভীতি প্রদর্শন ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সহ কিছু নেতাদের অবৈধ অস্ত্রের মহড়া ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্ঠি নৌকার প্রার্থী সিপার উদ্দিনের নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে সাধানের ধারনা। সবকিছু ঠিকা থাকলে নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীর বড়ধরনের বিপর্যয় ঘটবে এটা অনেকটাই অনুমেয়।
অপরদিকে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী দুই বারের সাবেক মেয়র কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদের পক্ষে মাঠে গণসংযোগে নেমেছেন সাবেক ৩ বারের এমপি ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষনেতা নওয়াব আলী আব্বাস খাঁন ও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি সহ-সভাপতি এডভোকেট আবেদ রাজা। জেলা বিএনপির সভাপতি নাসের রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান (ভিপি মিজান) কুলাউড়ায় এসে কর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দিয়ে গেছেন বিএনপি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে। এ ছাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সজল, সাংগঠনিক সম্পাদক সুফিয়ান আহমদসহ উপজেলা, পৌর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন জোরেশোরে। দুই বারের সাবেক মেয়র কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদ তার ১২ বছরের সময়ে গৃহিত উন্নয়নের কথা প্রচারের সময় তুলে ধরে তাকে নির্বাচিত করতে ভোটারদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছেন।এবারের নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থীই অন্যতম প্রতিদ্ধন্ধী সে বিষয়ে ভোটারদের মধ্যে সন্দেহের অবকাশ পরিলক্ষিত হয়নি।
কোটপতি প্রবাসী প্রার্থী শাজান মিয়া এলাকাভিত্তিক একটা ভোট ব্যাংক তার আয়ত্তে রাখতে রাতদিন মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। বিগত করোনা কালীন সময়ে এলাকায় প্রচুর আর্থিক সহায়তা ও দরিদ্রদের লাগাতার সহায়তার ফল স্বরুপ নির্বাচনে শাজান মিয়ায় অন্যতম জনপ্রিয় প্রার্থী বলে ভোটারা মনে করেন।
এ ছাড়া ও ৩৩ জন পুরুষ কাউন্সিলর ও ১৬ নারী কাউন্সিলর প্রার্থী দিনরাত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাদের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য । ভোটের এ শেষ সময়ে বিজয়ী হতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা।
কুলাউড়া পৌরসভার ভোটার জালাল উদ্দিন বলেন, ২৪ বছরের কুলাউড়া পৌরসভায় আগের ১৯ বছরের উন্নয়নের দ্বিগুনেরও বেশী উন্নয় গত ৫ বছরে হয়েছে। সুতরাং বর্তমান মেয়রকেই কুলাউড়া পৌরবাসী নির্বাচিত করবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার ভাটেরা হতে নৌকার মিছিলে আসা এক ছাত্রলীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলীয় প্রার্থী তাই বাধ্য হয়েই মিছিলে ও প্রচা প্রচারনায় অংশ নিয়েছি, কিন্তু নৌকার প্রার্থী অধ্যক্ষ হয়ে আমাদের কলেজটিকে শিকায় তুলেছেন , এখন মেয়র হলে পৌরবাসীকেও শিকায় ঝুলাবেন।
এদিকে নির্বাচন কমিশন কুলাউড়া পৌরসভা নির্বাচন অবাধ শান্তিপূর্ণ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছে। আচরণ বিধি লংঘনের দায়ে একাধিক প্রার্থীকে জরিমানা করে নির্বাচনের শেষ সময় পর্যন্ত পরিবেশ শান্তিপূর্ণ বজায় রেখেছে। নির্বাচন কমিশন আশা করছে সকল প্রার্থীদের সহযোগীতার মাধ্যমে পৌরসভা নির্বাচনটি হবে অবাধ ও অত্যন্ত শান্তিপূর্ন।
এদিকে গত রোববার (১০ জানুয়ারী) মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ হোসেন কুলাউড়ার সকল প্রার্থী ও জেলার আইনশৃংখলা বাহিনীকে নিয়ে সভা করেছেন। সভায় জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ হোসেন কঠোর ভাষায় পৌর নির্বাচন অবাধ,সুষ্ট ও শান্তিপূর্ণ করতে সংশ্লিদের নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি বলেন,ভোটাররা যাতে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে সেটা প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে। এবং ভোট গ্রহনের পরবর্তী ৭ দিন যেনো প্রার্থীদের কোন কর্মী, সমর্থক এবং ভোটাররা হয়রানির শিকার না হন সেজন্য আইনশৃংখলা বাহিনীকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন,ভোট নিরপেক্ষ করতে যা যা করার সব করা হবে। সভায় পুলিশ সুপার,কুলাউড়া ও কমলগঞ্জের পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার, কুলাউড়া ও কমলগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসারবৃন্দ ,দুই থানার অফিসার ইনচার্জসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভোটের দিন কুলাউড়ার ৯টি কেন্দ্রে ৯ জন ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করবেন। এছাড়াও প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশের অস্ত্রসহ ৪ জন ও আনসারের অস্ত্রসহ ৯ জনসহ মোট ১১ জন ভোটার ও ভোটগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করবে। এ ছাড়া ও পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স, পুলিশের ও র্যাবের মোবাইল টিম ও ২ প্ল্যাটুন বিজিবি মোতায়েম থাকবে ভোটের দিন।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার সিলেটের সহকারী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো:শুকুর মাহমুদ মিয়া জানান, পৌর নির্বাচন অবাধ, শান্তিপূর্ণ করতে ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি প্রার্থী ও ভোটারদের সার্বিক সহযোগীতা কামনা করেন।
কুলাউড়া পৌর নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার মো. আহসান ইকবাল জানান, পৌর নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। পুরো পৌরসভা নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে, এক্ষেত্রে তিনি প্রার্থী ও ভোটারদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।