কুলাউড়ায় বাঙ্গালীর প্রাণের পিঠা উৎসবে বসন্ত বরণ
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৫০:১৪,অপরাহ্ন ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | সংবাদটি ৩৫০ বার পঠিত
রেহেনা আক্তার নাসিমা: “ওরে ভাই ফাগনি এসছে বনে বনে “ ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করতে বাঙ্গালীর ঐতিহ্যিবাহী পিঠার বরণডালা নিয়ে পিঠা উৎসবের আয়োজন করে কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি। কুলাউড়ার ডিলাইট স্টেক হাউজের সহযোগিতায় আয়োজিত দেশের ঐতিহ্যবাহী এই পিঠা উৎসব বেশ ঘটা করেই উদযাপন করলো কুলাউড়ার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
এমন আয়োজনে রকমারি পিঠার চিরচেনা স্বাদ ও গন্ধ মাতিয়ে রাখে সবাইকে। উৎসবে এসে অনেকেই যেন ফিরে গেলেন হারানো শৈশবে। পিঠা মেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিলো মেহেদী সাজ ও ‘বসন্তের মাতাল হাওয়ায়, লাগুক মনে প্রাণের ছোঁয়া’ সংযোজিত ফটোফ্রেম। মেলা ঘুরে তরুণ-তরুণী এই ফটোফ্রেমে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করতে দেখা যায়।
১৪ ফেব্রুয়ারি রবিবার দিনব্যাপী কুলাউড়া শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মোট ১৪টি স্টল নিয়ে আয়োজিত এই উৎসবটি শুরু হয় সকাল ৯টায়। কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি বদরুজ্জামান সজলের সভাপতিত্বে এ উৎসবে আমন্ত্রিত অতিথির বক্তব্য দেন কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ বিনয় ভূষন রায়।
বেলা ৩টার দিকে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে মেলা পরিদর্শণ করেন কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী। পরে তিনি মেলার আয়োজক ও অংশগ্রহণকারী সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। পিঠা উৎসব আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক সুফিয়া রহমান ইতি এবং সদস্য সচিব এইচডি রুবেলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়।
টেবিলে সাঁজানো রকমারি পিঠার স্বাদ-গন্ধ চেখে দেখতে ফাগুনের শুরুতে সেখানে হাজির হয়েছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের মুখে ছিলো সুস্বাদু ও জনপ্রিয় এসব পিঠার গুণকীর্তন।
পিঠা উৎসবে ঠাঁই পায় ক্ষীরের পাটিসাপটা, গোলাপ ফুল পিঠা, সুজির মালাই চপ, চিকেন রোল পিঠা, কুনাফা, মাছ পিঠা, চিকেন নাগেটস পিঠা, ডিমের বিস্কুট পিঠা, পুডিং, কলা পিঠা, চুঙ্গা পিঠা, নকশী পিঠা সহ নানা রকমের পিঠা পুলি। উৎসবে ‘মেহেদী সাজ ও পিঠা উৎসব, নব বাংলা ক্লাব কুলাউড়া, উদীচী কুলাউড়া, অংকুর কিণ্ডার গার্টেন এণ্ড চাইল্ড কেয়ার হোমস, টং ঘর, কুলাউড়া মুক্ত স্কাউট গ্রæপ, বধুয়া পিঠা ঘর, রাফি পিঠা ঘর, রহমান পিঠা ঘর, হেলথ কেয়ার, আমার কুলাউড়া, মেসার্স সুখী সংসার বুক স্টল, রয়েল ক্যাফে, জবা রেবা চটপটি এণ্ড ফুচকা হাউজ স্টল নিয়ে অংশ নেয়।
কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আখই এর সঞ্চালনায় পিঠা উৎসব পরিদর্শণ করেন কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মাও. ফজলুল হক খান সাহেদ, ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেহা ফেরদৌস চৌধুরী পপি, জেলা পরিষদের সদস্য শিরিন আক্তার চৌধুরীর মুন্নী, কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সাবেক আহ্বায়ক খন্দকার লুৎফুর রহমান, সদস্য সচিব সিপার আহমদ, যুগ্ম আহ্বায়ক সাংবাদিক শাকিল রশীদ চৌধুরী, কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম শামীম, বর্তমান সহ সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জাহেদ ও মো. ফয়েজ উদ্দিন, পৌর কাউন্সিলর তাসলিমা সুলতানা মনি প্রমুখ।
বাঙালির চিরায়ত লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দিতে রকমারি পিঠা এবং বসন্তকে বরণ করতে মেহেদী সাজে তরুণী ও রমনীদের হাত সাজাতে উৎসবে অংশ নিয়েছেন নারী উদ্যোক্তা সায়মা হায়াত সোনিয়া। স্টলের নামও দিয়েছেন মেহেদী সাজ ও পিঠা উৎসব। তিনি জানান, দেশের ঐতিহ্যকে ধারণ করে আয়োজিত এই উৎসবে আমরা অংশ নিতে পারায় খুব আনন্দিত। আমরা চাই প্রতি বছর এরকম পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হোক।
ঐতিহ্যবাহি সংগঠন উদীচী তাদের সদস্যদের নিয়ে বেশ উৎসব মুখর পরিবেশে স্টলে পিঠা বিক্রি করতে দেখা যায়। সংগঠনের কুলাউড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্মাল্য মিত্র সুমন জানান, এমন একটা সময় ছিলো যখন আত্মীয়-স্বজনদের নিমন্ত্রণ করে পিঠা খাওয়ানোর একটা রেওয়াজ প্রচলিত ছিলো। কিন্তু এখন সেসব শুধুই স্মৃতি। শীতের সময়ে এখন আর বাড়িতে বেড়াতে আসা অতিথিদের পিঠা দিয়ে আপ্যায়িত করা হয় না। এর ফলে দিনে দিনে পরিবারিক ও সামাজিক বন্ধনের মাধ্যমগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ বন্ধন সুদৃঢ় করতে শহরের নতুন প্রজন্মের কাছে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সব পিঠার পরিচিতি তুলে ধরতে এ উৎসবের সুদুরপ্রসারী তাৎপর্য রয়েছে।
উৎসবে আসা কুলাউড়া সরকারি কলেজের শিক্ষক সিপার আহমদ বলেন, বছরের অন্তত একটা দিন সবাই একসঙ্গে পিঠা খেয়ে প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠা নিঃসন্দেহে আনন্দের।
আমন্ত্রিত অতিথি কুলাউড়া পৌর মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ জানান, ‘পিঠা উৎসব বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরছে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এ উৎসবের মধ্যে দিয়ে নিজেদের ভেতর সম্প্রীতি গড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয়।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান, নানা কারণে বাঙালিদের অন্যতম ঐতিহ্য পিঠা-পুলি উৎসব হারিয়ে যেতে বসেছে। এ উৎসবের মাধ্যমে আমরা একে অপরের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।