কুলাউড়ায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৪৫:০৭,অপরাহ্ন ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৩৮৪ বার পঠিত
বিশেষ প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার রাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মন্তাজ আলীর বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রীকে পূর্বের ঘটনার জের ধরে নির্যাতন ও অর্ধনগ্ন করে ছবি তোলার ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনকালে ওই ছাত্রীর আপত্তিকর ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেবারও হুমকি দেয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্ঠি হয়েছে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে স্কুল ছাত্রীর পিতা মোঃ মশাহিদ আলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর অনুলিপি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কাছেও পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, বুধবার সকাল সাড়ে নয়টায় উপজেলার রাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী রাজুকে স্কুল থেকে অন্যত্র পাঠিয়ে ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী ফারজানা আক্তারকে অফিস কক্ষে ডেকে নেন প্রধান শিক্ষক মন্তাজ আলী। এসময় তিনি ও তাঁর ছেলে জাকারিয়া (১৫) মিলে অফিস কক্ষের দরজা বন্ধ করে ফারজানার অর্ধনগ্ন করে দুটি আপত্তিকর ছবিসহ ৪টি ছবি তুলেন। ছবি না উঠলে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেন এবং ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেবার হুমকি প্রদান করেন। পূর্ব ঘটনার জের ধরে প্রধান শিক্ষক এসব কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনার পূর্বে গত ২০ জুলাই প্রধান শিক্ষক মন্তাজ আলী ফারজানাকে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার ফি প্রদানে দেরি করায় উত্তেজিত হয়ে মারধর করেন। এতে ওই ছাত্রী শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে কুলাউড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রধান শিক্ষক তাঁর বাড়ি থেকে আনা জালি বেত দিয়ে এলোপাতাড়ি প্রহার করলে ছাত্রীর পিঠে ও হাতের বিভিন্ন জায়গা ফুলে যায়। এসময় বিদ্যালয়ে থাকা ছাত্রীর ফুফু আমেনা আক্তার প্রধান শিক্ষকের মারধরের বিষয়ে প্রতিবাদ করলে তাকেও তিনি লাঞ্চিত করেন। এ ঘটনায় ওইদিন বিকেলে ছাত্রীর বাবা মশাহিদ আলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এরই প্রেক্ষিতে ২৭ জুলাই বিদ্যালয়ে সরেজমিন তদন্তে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পান উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার সৌরভ গোস্বামী।
স্কুলছাত্রী ফারজানা আক্তার জানান, স্যার ও উনার ছেলে মিলে আমার আপত্তিকর ছবি তুলেছেন। ছবি না উঠলে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। কিছুদিন আগে পরীক্ষার ফিস দিতে দেরি করায় স্যার আমাকে মারধর করেছিলেন। স্যার বিভিন্ন সময়ে অনেক ছাত্রীদের সাথেও খারাপ আচরণ করেন। কেউ এর বিচার করে না।
স্কুলছাত্রীর ফুফু আমেনা আক্তার জানান, ফারজানাকে ক্লাসে ডুকতে দেয়া হয়নি। প্রধান শিক্ষক তাকে জরুরী দরকার আছে বলে ডেকে নিয়ে যান অফিস কক্ষে। এসময় শিক্ষক তাঁর ছেলেকে সাথে নিয়ে দরজা বন্ধ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ছবি তুলেছেন। আমি নিজে জানালার পাশ থেকে ছবি তুলতে দেখেছি। তাৎক্ষণিক বিষয়টি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কয়েকজন ও স্থানীয় গণ্যমান্যদের জানিয়েছি।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ মন্তাজ আলী বলেন, তিনি ছাত্রীকে মারধর করেননি। কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর জন্য ছবি তুলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দিতে হয়। তাই ছবি তুলেছি। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। শিক্ষা বিভাগ তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন সত্যতা পায়নি বলে তিনি দাবি করেন।
কিন্তুু এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আইয়ুব উদ্দিন বলেন, তদন্তে অভিযোগের বিষয়টি প্রমাণিত। উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভায় ওই শিক্ষককে অন্যত্র বদলীর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বুধবারের ঘটনার তদন্ত করে আগামী রবিবারের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নবাগত ইউএনও স্যার নির্দেশ দিয়েছেন।