উত্তরায় বাসচাপায় কলেজছাত্রের মৃত্যু ; দুর্ঘটনা নাকি হত্যা
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০০:৩৯,অপরাহ্ন ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৩৪০ বার পঠিত
নিউজ ডেস্ক : বেপরোয়া বাসচাপায় সঙ্গীত পরিচালক পারভেজ রবের মৃত্যুর ২ দিন যেতে না যেতেই সেই বাসচাপায়ই তার ছেলে কলেজছাত্র ইয়ামিন আলভী হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। একই সঙ্গে বাসচাপায় আলভীর বন্ধু নিহত হয়েছেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর উত্তরায় পারভেজ রবের ঘাতক ছিল ভিক্টর পরিবহনের বাস।
শনিবার রাতে উত্তরায় ওই একই পরিবহনের অপর একটি বাসের চাপায় আলভীর মেরুদণ্ডের হার ভেঙে যায়। আলভীর সঙ্গে বাসচাপায় তার বন্ধু কলেজছাত্র মেহেদী হাসান ছোটন প্রাণ হারান। জানা যায়, পারভেজ রবের মৃত্যুর পর শনিবার তুরাগ থানায় মামলা করেন তার পরিবার।
এ নিয়ে সমঝোতার জন্য পারভেজ রবের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে ভিক্টর পরিবহনের লোকজন তাদের উত্তরার কামারপাড়া এলাকায় আসেন। বাসার কাছেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ৫ সেপ্টেম্বরের দুর্ঘটনা নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছিল। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডাও হয়। এর পরই মেহেদী হাসান ছোটন বাসচাপায় নিহত এবং আলভী গুরুতর আহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ভিক্টর পরিবহনের বাসচালক দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে ক্ষোভের বশে তাদের ওপর বাস উঠিয়ে দিয়েছে।
তবে গ্রেফতার বাসচালক রফিকুল ইসলাম বলছেন, আলভী তার বন্ধুদের নিয়ে বাসটি ধাওয়া করছিল। এ সময় দ্রুতগতিতে পালানোর সময় তারা চাপা পড়েন। পুলিশও শনিবারের হতাহতের বিষয়টিকে দুর্ঘটনাই বলছে।আসলেই কী বাস চালক আলভীর বন্ধু মেহেদীকে ইচ্ছে করেই বাসের চাকায় পিষ্ট করে হত্যা করেছে? নাকি এটা নিছক দুর্ঘটনা? গাড়িচালক রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করে দু’দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই এটি পরিষ্কার হবে।
ইয়ামিন আলভীর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে, পারভেজ রবের নিহতের ঘটনায় শনিবার তারা তুরাগ থানায় মামলা করেন। মামলার বিষয়ে সমঝোতা করতেই ভিক্টর পরিবহনের কয়েকজন তাদের সঙ্গে কথা বলতে বাসার কাছে কামারপাড়ায় আসেন। তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। দু’পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটিও হয়। একপর্যায়ে ভিক্টর পরিবহনের চালক ক্ষিপ্ত হয়ে আলভী ও তার বন্ধু মেহেদীর ওপর বাস তুলে দেয়। দু’জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উত্তরার একটি হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মেহেদীকে মৃত ঘোষণা করেন।
আলভীকে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রোববার সকালে তাকে শ্যামলীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে বাসচালক রফিকুল ইসলাম পুলিশের কাছে দাবি করেছে, পারভেজ রবের ছেলে ইয়ামিন আলভী কয়েকজন বন্ধু নিয়ে রাতে ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের একটি বাসকে ধাওয়া করে।চালক বাসটি নিয়ে দ্রুতগতিতে পালানোর চেষ্টা করলে বাসের নিচে চাপা পড়েন দু’জন। পারভেজের বন্ধু আলী আশরাফ যুগান্তরকে বলেন, কণ্ঠশিল্পী রবের মৃত্যুর ঘটনায় ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের কয়েকজন কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে সমঝোতা করতে এসেছিলেন।
একপর্যায়ে পরিবারের লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের মারধর করে। তখন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকা ভিক্টর পরিবহনের একটি বাস তাদের ওপর তুলে দেয়। এতে পারভেজের ছেলে আহত হন ও তার বন্ধু মারা যান। তিনি আরও জানান, আলভীর অবস্থা খুবই গুরুতর। তার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে গেছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।তবে মেহেদীর বন্ধু কাউছার আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, মেহেদীসহ কয়েকজন উত্তরা যাওয়ার জন্য বাসে ওঠার চেষ্টা করছিল। এ সময় তারা বাসের নিচে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হন। কথা হয় উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহার সঙ্গে।
তিনি যুগান্তরকে বলেন, এ ঘটনায় থানায় সড়ক দুর্ঘটনার মামলা হয়েছে। সেখানে হত্যার কোনো ঘটনা ঘটেনি। চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মেহেদীকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল পরিবারের : রোববার বিকালে তুরাগের ধউর এলাকায় মেহেদীর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠোনে মেহেদীর লাশ রাখা। বাবা ইউসুফ আলী বিলাপ করতে করতে মূর্ছা যাচ্ছিলেন। মেহেদীর মা পারভীন আক্তার একপলকে তাকিয়ে আছেন।
তিনি যেন কাঁদতে ভুলে গেছেন। কিছুক্ষণ পর যখন ছেলের লাশ দাফনের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন তিনি হঠাৎ করেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছেলের লাশ জড়িয়ে ধরে তিনি বলছিলেন, ওকে তোমরা নিয়ে যেও না।তখন স্বজনরা তাকে ধরে রাখতে পারছিলেন না। মেহেদীর বাবা ইউসুফ আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলের কী অপরাধ ছিল? কত স্বপ্ন ছিল তাকে নিয়ে। এভাবে তার মৃত্যু হবে ভাবতে পারছি না।
মেহেদী এ বছর উত্তরার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তার বাবা ইউসুফ আলী একজন ব্যবসায়ী। মা গৃহিণী। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সে মেজ। তার বড় ভাই পারভেজ হাসান অনার্স, ছোট বোন ইরা মনি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে।