‘ফারুকী’ বিদ্যুত গতিতে ছোটে চলা এক ক্ষুদে মানব দরদী
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৩২:০৬,অপরাহ্ন ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ২৩৪৮ বার পঠিত
প্রফেসর মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন : বর্তমান যুগটা বড়ই যান্ত্রিক। এ যুগে মানুষ বড়ো আত্মকেন্দ্রিক। নিজের জগত নিয়ে ব্যস্ত হওয়ায় অন্যকিছু নিয়ে ভাবার সময় কারোর নেই। মানুষ যেন ভুলে গেছে গীতার সেই অমৃত বানী “যত্র জীব তত্র শিব” অর্থাৎ স্রষ্টার সৃষ্টির মধ্যেই শিব বা সৃষ্টিকর্তা বিরাজমান । আর সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকে ভালবাসলেই স্রষ্টার নৈকট্য লাভ সম্ভব। স্বার্থপর পৃথিবীতে নিজস্বার্থ ছেড়ে নিঃস্বার্থ হওয়া সাদা মনের মানুষ পাওয়া ভার। কিন্ত এই কঠিন ব্যস্তবতায়ও কিছু মানুষ থাকে যাঁদের জন্যই বোধকরি আমরা এগিয়ে যাবার আলো দেখতে পাই। তেমনি একজন আলোকিত মানুষ শাহ মাছুম ফারুকী।
কিছু না লিখলে বা না দাগ দিলে যেমন সাদা কাগজের মূল্য থাকে না, ঠিক তেমনি ব্যক্তির জীবনে মনুষ্যত্ব কাজ বা গুন প্রকাশ না হলে প্রকৃত মানুষ তাকে বলে কি? আমর এই কলমে এমন এক মানুষকে তুলে ধরতে চাই যার হৃদয, কাজ, চেহারা, ব্যক্তিত্ব অতুলনীয়। যার জন্য আমার অন্তস্থলেও মনের অজান্তে একটা জায়গা তৈরী হয়ে গেছে। যাকে আমি অনেক ভালবাসি, স্নেহ করি, যার হৃদয়টা হচ্ছে শিশুতুল্য সহজসরল, স্নেহ-ভালোববাসায় পূর্ণ। স্বার্থ ছাড়া অতি পরিশ্রমী, অসহায়কে সাহায্য দানই হচ্ছে তাঁর কাজ । আর যদি চেহারার কথা বলি, তাহলে বলবো হাজারো লোকের মাঝেও আমি তাঁর মিল পাইনি । সাধারন পোশাক-আশাক পড়েই তিনি একজন সুন্দর ব্যক্তিত্বের অধিকারী। বিভিন্ন জাগায় ছড়িয়ে আছেন বলেই হয়তো বা আপনারা জানেন না একটি স্বর্গ সুখের রাজ্য আছে । সবাই এখানে সুখী । আর কেনই বা সুখী তা জানানোর জন্যই এই লেখা ।
বাংলার পথশিশু খ্যাত শাহ মাছুম বিল্লাহ ফারুকী এক বহুমুখী প্রতিভার নাম।যিনি তাঁর আপন আলোয় আলোকিত।তিনি একাধারে সাংবাদিক,সৃজনশীল লেখক,সমালোচক,মানবাধিকার কর্মী,সমাজসেবী অনেক গুণের অধিকারী এক উজ্জ্বল প্রতিকৃতি।
যার সমস্ত হৃদয়জুড়ে এই বাংলার আর্তমানবতা।যিনি তাঁর জীবনকে যুক্ত করেছেন দেশ ও মাটির এক গভীর শিকড়ের সাথে।শিকড়গুলো ইতিমধ্যে অনেক দূর গজিয়েছে। কিছু অদৃশ্য স্বপ্ন তাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়ায় আর তিনিও ছুটে চলেছেন তাঁর কাঙ্কিত স্বপ্ন পূরণের প্রয়াসে।
যেকোনো স্বপ্ন পূরণের জন্য চাই কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্যের বাস্তবায়ন। আর সেই লক্ষ্য নির্দিষ্ট করতেই যুক্ত হয়েছেন অসংখ্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে। প্রতিষ্ঠা তথা জন্ম দিয়েছেন কিছু সামাজিক সংগঠনের।
সাদামনের এই মানুষ টি বরাবরই কাজ করেন এই সমাজ বির্নিমানে।অহংকার করার মত যথেষ্ট উপকরণ থাকলে ও কখনো তিনি অহংকার বা গর্ব করেন নি। খুব সহজভাবেই নিজের পরিচয় দেন ”আমি একজন পথশিশু”।
মানুষ মানুষের জন্ ’ আর সেজন্যই তিনি তাঁর জীবনের প্রতিটা ক্ষণ কাজে লাগান দেশের মানুষের শারীরিক,মানসিক,আর্থিক তথা সার্বিক কর্মকান্ডে। সর্বোপরি রাস্তায় বেড়ে উঠা মানুষ গুলোর জন্য এক নিবেদিত প্রাণের নাম ফারুকী।
শাহ মাছুম ফারুকী অনেক আগে থেকেই প্রানের ইচ্ছা ছিল সমাজের জন্য বা দেশের উপকারের জন্য কিছু করতে । যখন তাঁর এই সময়ে সেই সন্তানগুলো কিছু খাবার, ভালবাসার জন্য তাঁর সামনে কেঁদে উঠলো-তখনই তিনি মনোস্থির করলেন এদের জন্য কষ্ট হলেও কাজ করবেন । আর সেইদিন থেকেই শুরু করলেন এক নতুন জীবন । দিন দিন তাঁর শিশু সন্তান বেড়েই চলেছে । নিজ সন্তানদের মতো সকলকেই তিনি বুকে তুলে নিলেন । খাবার ও জিনিস পত্রের অভাব সেই শিশু সন্তানদের ছিল ঠিকই কিন্তু বাবা মার স্নেহ ভালোবাসার অভাব তখনও বুঝতে দেননি সেই রক্ত বাধঁন ছাড়া, ঠিকানাহীন, অবহেলিত শিশুদের ।
এ সমস্ত বাচ্চাদের মুখে হাসি ফুটানোর জন্যই তিনি কাজ করেছেন। আর দিনের কর্মকান্ডের শেষে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা জানিয়েছেন চোখের জল দিয়ে । এরপর কিভাবে চলবেন! তাঁর একটাই বিশ্বাস ছিল যে সৃৃষ্টিকর্তা সব জানেন, তিনি কাউকে নিরাশ করেন না । আর এই প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে চলছেন তিনি।
শাহ মাছুম ফারুকী একজন দক্ষ সংগঠকই নন,তাঁর পারিবারিক জীবন ও যথেষ্ট বর্নাঢ্যময়। তিনি নব্বই দশকে ২১ শে ফ্রেব্রুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর থানার গুলশানে বাগদাদ ( গোবিন্দপুর) গ্রামে ফারুকী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
পিতা লেখক,গবেষক,বহু গ্রন্থপ্রণেতা ও আওলাদে হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এর বংশধর হযরত শাহ আলা উদ্দিন ফারুকী।
শাহ মাছুম ফারুকী হযরত নজির উদ্দিন ফারুকী (রহঃ) এর সুযোগ্য নাতি।
উনার এই সুন্দর পথচলা প্রথমে লেখালেখি থেকেই শুরু হয়। তিনি ২০০৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত মাসিক তরজুমানে বিশেষ প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেন। ২০০৮ থেকে ২০১০ সালে দৈনিক বাংলাদেশের আলো এর মৌলভীবাজার প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৮ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন এফসি ফাউন্ডেশন।এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রতিবছর দুর্যোগ বা ট্রাজেডিতে বিপদগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা,বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ, পথশিশুদের জন্য সামাজিক মূল্যবোধ তৈরী করা অর্থাৎ প্রতিষ্ঠিত করা, দরিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করা , সর্বোপরি মানুষের মৌলিক অধিকার তথা মানবতা নিয়ে কাজ করাই এই ফাউন্ডেশনের মুখ্য উদ্দেশ্য।
পরবর্তীতে তিনি মুসলিম যুব সমাজকে আর্তমানবতার সেবায় উদ্বুদ্ধ করতে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ডাব্লিউ এম এস ডাব্লিউ বাংলাদেশ। তিনি বাংলাদেশ রোভার স্কাউট মৌলভীবাজার জেলা রোভার এর আর ডি এস এম ইউনিটে এস আর এম এর দায়িত্ব পালন করেন।
২০১১থেকে ২০১৩ সালে দৈনিক নবরাজের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং জাতীয় মাসিক শিক্ষা তথ্য,দৈনিক বাংলাদেশের আলো এর বিভাগীয় প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন ।২০১২ সালে যুক্ত হন দেশ রক্ষার মহান ব্রত নিয়ে গঠিত বি এন সিসির ২ নং ময়নামতি ব্যাটালিয়ন এর SIU প্লাটুনে।
২০১৩ সালে আঞ্জুমানে গাউছিয়া ফারুকীয়া সুন্নিয়া কেন্দ্রীয় জেনারেল সেক্রেটারির দায়িত্ব পান। যা আজ পর্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সহিত পালন করে যাচ্ছেন।
শুধুমাত্র লেখালেখি তে সীমাবদ্ধ না থেকে ২০১৩ সালে নিজের চেষ্টায় প্রতিষ্ঠা করেন শাহ গ্রুপ নামের কোম্পানি ও গ্রুপ বিজনেস।
তিনি ২০১৩ সালে নিঃস্বার্থ সমাজসেবা পরিষদ নামক একটি সামাজিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠা করেন এবং সংস্থার সহ-সভাপতির দায়ীত্ব পালন করে যাচ্ছেন । এছাড়া ও ২০১৩ সালে সাতরং ট্রেনিং সেন্টারের সহকারী পরিচালক এর দায়ীত্ব গ্রহণ করেন।
২০১৩ সালে নিউজ অর্গান নামক একটি আন্তর্জাতিক অনলাইন পত্রিকা সম্পাদনা করেন,যার সহযোগী সম্পাদকের দায়িত্ব নিষ্ঠার সহিত আজ অদ্বি পালন করছেন।
২০১৪ সালে মৌলভীবাজার অনলাইন প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতির দায়ীত্ব পালন করেন,সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সদস্য এবং দৈনিক মৌলভীবাজার বার্তা এর বার্তা সম্পাদক, এবং দৈনিক বাংলার দিন এর জৈষ্ঠ্য প্রতিনিধি ছিলেন। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন নারীদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য সামাজিক সংগঠন শিখা। ২০১৫ সালে রুপসী বাংলা টেলিভিশনের বার্তা পরিচালক এবং জাতীয় সংবাদ সংস্থা তথা এন বি এস এর বিভাগীয় প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৬ সালে মানুষের অধিকার নামক জাতীয় মানবাধিকার সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।এছাড়া ও Bangladesh online Media owners Association -OJAS এর নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হোন।
৭ জুন,২০১৬ সালে জাতীয় সংবাদ জাদুঘরের পরিচালকের এবং ২৮ জুনে অনলাইন মিডিয়া ফোরাম সিলেট বিভাগীয় সমন্নয়কের দায়িত্ব পান।
তিনি তার কাজের স্বিকৃতী স্বরূপ ২০১৬ সালের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার স্বর্ণ পদক লাভ করেন।
২০১৮ সালে যিনি ধর্ষণের সর্বনিম্ন সাজা মৃত্যুদণ্ড চেয়ে “ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার বাংলাদেশ” ব্যানারে সারা বাংলাদেশে আন্দোলনের ডাক দেন এবং তার ডাকে লক্ষ লক্ষ মানুষ আন্দোলনে যোগ দিয়ে তা সংসদ পর্যন্ত পৌঁছায় এবং তা বাস্তবায়ন হয়।
তাঁর এই কাজের ধারা সত্যিই ঈর্ষণীয়।ক্রমেই তিনি তার মহৎ কর্মের মাধ্যমে বিস্তার করে চলেছেন এক নন্দিত স্বপ্ন কিংবা স্বপ্নের জাল।মানুষ তার কর্মের মাধ্যমেই বেঁচে থাকে।শাহ মাছুম ফারুকী হয়তো একদিন চলে যাবেন।কিন্তু তিনি আজীবন বেঁচে থাকবেন তাঁর স্বীয় কর্মের মধ্যে।
কবির ভাষায়,
”সেই ধন্য নরকূলে,লোকে যারে নাহি ভুলে
মনের মন্দিরে নিত্য সেবে সর্বজন।”
লেখকঃ প্রফেসর মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন
সাধারণ সম্পাদক, মানবতার জন্য ভাসানী ফাউন্ডেশন ও সভাপতি হাওর বাঁচাও কৃষক বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ।