শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত নগদ অর্থের বিস্তার ঘটেছে, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবার হাতে পৌঁছে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইন্টারনেট, মোবাইল সেবা ইত্যাদি। রাজনীতিতে নতুন নতুন প্রভাবক ঢুকে পড়েছে। নানা কারণে বাংলাদেশের সমাজ কাঠামো দ্রুত বদলে যাচ্ছে। রূপান্তরিত সমাজে সৃজনশীল পেশায়, সেবামূলক পেশায় হঠকারিতা প্রবেশ করেছে। পরিবর্তনের ঢেউ আঘাত হেনেছে শিক্ষকতার মতো মহান পেশাতেও।
হাজার হাজার বছর ধরে শিক্ষকতা একটি সম্মানজনক মহান পেশা হিসেবে পৃথিবীব্যাপী সমাদৃত। বাংলাদেশেও আবহমান কাল থেকে শিক্ষকরা সমাজে সুনাম ও মর্যাদার সাথে পরিশীলিত জীবন-যাপন করে আসছেন। তবে নতুন সমাজ কাঠামোয় এই পেশার লোকেরা কিছুটা হলেও কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। এই পেশাকে কলুষিত করতে একদিকে অন্য পেশাজীবীরা ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করছে। অন্যদিকে যত্রতত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি হওয়ায় শিক্ষকতা পেশায় ঢুকে পড়ছে লোভী, ধুরন্দর লোকেরা। তারা এটাকে নিছক চাকরি হিসেবে নিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ করছে। তারা শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে চালাচ্ছেন। শিক্ষকদের ব্যবহার করছেন সেলস এজেন্ট হিসেবে। অশিক্ষকদের হাতে চলে যাচ্ছে শিক্ষাদানের সোনার কাঠি। এতে শিক্ষকতা পেশার মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। এমন পরিস্থিতেতে শিক্ষকদের সম্মান-মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আমাদের নিরলস চেষ্টা করে যেতে হবে। প্রতি বছর ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে থাকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস বা আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবস। কোন বিশেষ বিষয়ে দিবস উদযাপিত হলে সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়ে, মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ে। সেই বিষয়ের গুরুত্ব নতুন করে আলোচনায় আসে। সমাজ পরিবর্তন ল্যাবরেটরিতে করা সম্ভব নয়। সামাজিক পরিবর্তন সামাজিক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। তাই দিবস উদযাপন গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অগণিত শিক্ষকদের আদর্শগত মহান কর্মকাণ্ডের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে এবং তাঁদের পেশাগত অবদানকে স্মরণে-বরণে, ভক্তিতে-শ্রদ্ধায় পালন করার জন্য সমগ্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই মহান শিক্ষক দিবস পালন করার রীতি রয়েছে। দিনটি বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পালন করা হয়ে থাকে। বিশ্বে একশোর বেশি দেশে ৫ অক্টোবর, ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ পালিত হয়। ইউনিসেফ ৫ অক্টোবরকে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবসের’ মর্যাদা দিয়েছে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যক্তি বা ইতিহাস সম্পর্কিত কোন একটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষক দিবস পালন করা হয়। যেমন, ভারতের ভূতপূর্ব রাষ্ট্রপতি ডঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ এর জন্মদিন ৫ সেপ্টেম্বর বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসাবে পালিত হয়। ‘ভারতরত্ন’ উপাধি বিভূষিত প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, মহান দার্শনিক, আদর্শবান বিচারক ছিলেন ডঃ রাধাকৃষ্ণণ। বাংলাদেশে ইউনেস্কোর সাথে মিল রেখে দিবসটি পালন করা যেতে পারে। যারা শিক্ষিত তারা সবাই শিক্ষার্থী। সবারই শিক্ষক আছেন বা ছিলো। এখন যারা শিক্ষক তারাও তাদের শিক্ষকদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারেন। সেইসাথে শিক্ষার্থীদের শিক্ষক দিবস উদযাপন করতে উদ্ধুদ্ধ করতে পারেন। দিবসটি পালনের আয়োজন প্রথম কয়েক বছর শিক্ষকদেরই করতে হবে। ধীরে ধীরে বিষয়টি রীতিতে পরিণত হবে। যা করতে পারি তা হল- এই দিন শিক্ষার্থীরা প্রিয় শিক্ষককে নিয়ে স্মৃতি চারণ করবে। শিক্ষকদের নিয়ে স্বরচিত কবিতা, গল্প উপস্থাপন করবে। শিক্ষককে উপহার দিতে পারে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের উপহার দেবেন, আশীর্বাদ করবেন, তাদের ফুল বা ফুলের চারা বা অন্য গাছের চারা উপহার দিতে পারেন। বা অন্য কিছু উপহার দিতে পারেন। তবে একটা ইউনিক কাঠামোয় আসলে তা প্রথায় রূপান্তরিত হবে যা ইতিবাচক। এ বছর ৫ অক্টোবর স্কুল-কলেজে দূর্গা পূজার ছুটি থাকবে। তাই গুরু-শিষ্যের সাক্ষাতের সুযোগ কম। সেক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্য নিতে পারি। ফেসবুকে যার যার ওয়ালে শিক্ষকদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারি। প্রিয় শিক্ষককে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে পারি। কেন আমার চোখে প্রিয় শিক্ষক তাও লিখতে পারি। অন্তত একটি লাইন পোস্ট দিতে পারি- ‘সব শিক্ষককে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা’।