কুলাউড়া ভূকশিমইল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের ভবনের কাজের অনিয়ম ও দূর্ণীতির প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে কুৎসামূলক বক্তব্যের প্রতিবাদে গভর্ণিং বডির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনুর সংবাদ সম্মেলন
কুলাউড়া প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভূকশিমইল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের ভবন সম্প্রসারণ কাজের অনিয়ম ও দূর্ণীতির প্রতিবাদে ভূকশিমইল ইউনিয়নবাসীর আয়োজনে গত ০৫অক্টোবর অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রতিষ্ঠানের গভর্ণিং বডির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কে জড়িয়ে বক্তব্য প্রদান করায় তার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন উপজেলা আওয়ামিলীগের সাধারন সম্পাদক ও ভূকশিমইল মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজের গভর্ণিংবডির সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেনু। গতকাল৯ অক্টোবর সকাল ১১.৩০ঘটিকায় কুলাউড়া ডাকবাংলোয় তিনি সংবাদ সম্মেলন করে এর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সারাদেশে বর্তমান সরকারের শিক্ষা খাতে চলমান ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে ভূকশিমইল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের একটি ভবনের উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ চলমান রয়েছে। উক্ত ভবনের ২য় ও ৩য় তলার ছাদ ঢালাইয়ের সময় সংশ্লিষ্ট উপসহকারী প্রকৌশলীগণ সরেজমিনে অবস্থান করে কাজ তদারকি করেন। গত ১ অক্টোবর টয়লেট ব্লকের নীচ তলার ছাঁদ ঢালাইয়ের কাজ করা হয় যা উপসহকারি প্রকৌশলী নিজে উপস্থিত থেকে দেখাশুনা করেন। ঐদিন সন্ধ্যায় প্রতিষ্ঠানের ২য় তলায় মোজাইক মিস্ত্রি সবার অগোচরে অত্যন্ত নিম্নমানের প্যাটেন্ট স্টোন ঢালাই করে এবং পরদিন রাত পোহাবার পূর্বে কাজ করতে শুরু করলে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মো. আজমল আলী বাধাঁ দেয় এবং গভর্ণিং বডির সদস্য ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে বিষয়টি অবগত করে। খবর পেয়ে গভর্ণিং বডির সদস্য পংকি মিয়া, এলাইচ মিয়া, মো আমিন উদ্দিনসহ মুরব্বিগণ সেখানে উপস্থিত হন এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল মনছুর সেখানে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও উপপ্রকৌশলীকে অবহিত করা হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ অক্টোবর আমি এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার, উপসহকারী প্রকৌশলী ও গভর্ণিং বডির সদস্যরা সরেজমিনে উপস্থিত থেকে নিম্নমানের প্যাটেন্ট স্টোন অপসাধারণ করে সংশ্লিষ্ট উপপ্রকৌশলীর উপস্থিতিতে নতুন করে কাজ করার জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ঠিকাদার সে মোতাবেক কাজ করতে সম্মত হন।
গভর্ণিং বডির সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেনু বলেন-ভূকশিমইল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের উবর্ধমুখী সম্প্রসারণ কাজে যে অনিয়ম হয়েছিল আমরা তা অবগত হওয়ার সাথে সাথে ব্যবস্থা নিয়েছি এবং শিক্ষা অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলীর উপস্থিতিতে এর সমাধানও করা হয়েছিল। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় যে, মীমাংসিত একটি বিষয় নিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল পরবর্তীতে এলাকার মানববন্ধনের নামে মাইক বেঁধে আমার ও আমার দলের বিরুদ্ধে এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে তাদের মনগড়া, অসত্য, কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করে। তিনি বলেন- আমি মনে করি এতে করে প্রতিষ্ঠানের ভাবমুর্তি বিনষ্ট করার একটি গভীর ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনু বলেন, উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ওই ইউনিয়নের চেয়াম্যান (আজিজুর রহমান মনির)শুধুমাত্র দলীয় হীনমন্যতা থেকে এইসব অপকর্মের প্রত্যক্ষ নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে ইর্ষান্বিত হয়ে সরকার বিরোধীতা এমন অপতৎপরতার লিপ্ত রয়েছে। তাছাড়া একটি অনিয়মের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের আয়োজন করে তারা আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছে তা সম্পুর্ন মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। কারণ ভবনের কাজে যে অনিয়ম হয়েছে সেটার দায়ভার সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের এবং গাফলতি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের। কিন্তু ঐ মানববন্ধনে আমার বিরুদ্ধে দেওয়া বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে তারা আমার সম্মান হানির জন্য এর আয়োজন করেছিল। এবং এর মাধ্যমে সুকৌশলে আমার দল আওয়ামীলীগের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র চলছে।
তিনি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দপ্তরের কাছে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডকে বাধাঁ প্রদানকারী এবং অপপ্রচারকারী ঐসব দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান।
সংবাদ সম্মেলেনে কুলাউড়ায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সংবাদিকবৃন্দ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি মো. আব্দুল মতিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুক্তাদির তোফায়েল, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক কামাল হাসান, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গৌরা দে, ভাটেরা কলেজের অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন, উপজেলা কৃষকলীগের একাংশের সভাপতি আব্দুল আজিজ, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম সবুজ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মইনুল ইসলাম সোহাগ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এহসান আহমদ টিপু, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সায়হাম রুমেল প্রমুখ।
আওয়ামিলীগ সমআপদক ও ভূকশিমইল মাধ্যমিক স্কুলের সভাপতি লিখিত বক্তব্যের বাইরেও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য প্রদান করেছেন । তিনি অভিযোগ করে বলেন, “বর্তমান সরকারের উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে পাকিস্তানের দোসরার সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক ভাবে তাঁর ও তাঁর দলের বিরুদ্ধে ষঢ়যন্ত্রে মেতে উঠেছে “ ভূকশিমইল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান কর্তৃক মানববন্ধনে নেতৃত্বে দেয়া প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন “ভূকশিমইল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনিরের পিতা মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্থানপন্থী নেতা ও পিস কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন সুতারং তার ছেলের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশী কিছু আশা করা সমীচিন নয়।”
প্রসঙ্গত গত ০৫ অক্টোবর ভূকশিমইল এলাকাসীর আয়োজনে মানববন্ধনে প্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, বিল্ডিংয়ের প্রতিটি পিলারে ৫ থেকে ৬ সুতা রড দেয়ার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। এমনকি বিল্ডিংয়ের ছাদে ৪ সুতা রড দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে ৩ সুতা রড। বিল্ডিংয়ের ফ্লোরে মোজাইকের কাজে চিপ পাথর দিয়ে ঢালাই দেয়ার কথা থাকলেও সেখানে যৎসামান্য সিমেন্ট ব্যবহার করে বালু ও কংক্রিটের গুড়ো দিয়ে ঢালাই দেয়া হয়েছে। মানব বন্ধনে উপস্থিত গভর্ণিবডির সদস্য সহ উপস্থিত বক্তাগণের অভিযোগ হলো,কলেজের গভর্ণিংবডির সভাপতি, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনু দলীয় প্রভাবের বলে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িত। তিনি এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে হাত মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করছেন। সেকারেনে বক্তাগণ এই অনিয়মের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।