ক্ষমা পাচ্ছেন আ’লীগের বিদ্রোহীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:২৪:২১,অপরাহ্ন ২৪ অক্টোবর ২০১৯ | সংবাদটি ৩৪২ বার পঠিত
নিউজ ডেস্ক : উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা সাধারণ ক্ষমা পাচ্ছেন। ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দ্রুততম সময়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।আমাদের সময়
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার দুপুরে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে যান আওয়ামী লীগের কয়েকজন সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। যেসব উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনই সর্বশেষ সমাপ্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন; সেসব উপজেলায় সম্মেলন কিভাবে করবেন সে বিষয়ে দলীয় প্রধানের নির্দেশনা চান তারা। এ সময় শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের ওই নেতাদের বলেন, ওইসব উপজেলায় সম্মেলন প্রস্তুত কমিটি গঠন করে তাদের মাধ্যমে সম্মেলন করতে হবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্থলে সংগঠনের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের দিয়ে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠিত হবে। জানা গেছে, যারা কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে ভবিষ্যতে এমন ভুল আর হবে না বলে অঙ্গীকার করেছেন; তাদের সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছে। তবে দলের আগামী সম্মেলনে তারা যে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিল সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, ‘মাননীয় নেত্রী দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের এবারের মতো ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং ভবিষ্যতে দলীয় শৃঙ্খলা মানার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছেন।’
সহস্রাধিক প্রার্থী ৫ ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তাদের মধ্যে যারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে ছিলেন এমন প্রায় সাতশ প্রার্থীকে কারণ দর্শানের চিঠি দেওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে। সকলে এরপর অধিকাংশই চিঠির জবাবে সাধারণ ক্ষমা চেয়ে আকুতি জানিয়েছেন, দলীয়প্রধান শেখ হাসিনার কাছে।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা গতকাল বলেন, উপজেলা নির্বাচনে এবার বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ না করায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে প্রায় সকল উপজেলায় আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। এই নির্বাচন সহিংসতামুক্ত এবং উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হওয়ায় বেশ খুশি ছিলেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। এর পরও দলের শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে দলীয়প্রধান হিসেবে তিনি সকল বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে জবাবদিহিতা চান। চিঠির জবাবে বিদ্রোহী প্রার্থীরা জানান, তারা দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। ৭৫ পরবর্তী দুঃসময়ে অনেকে দল ছেড়ে গেলেও তারা যাননি। দলের নেতাকর্মীদের চাপে এবং তৃণমূলের ভোটারদের আবদারের কারণে নির্বাচন করতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকেই আছেন তিন পুরুষ ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন; তাদের ওপর স্থানীয় নেতাকর্মীদের চাপ ছিল। এ কারণে শুরুর দিকে আওয়ামী লীগের নেতারা এসব প্রার্থীদের সরাসরি বিদ্রোহী না বলে স্বতন্ত্র প্রার্থী বলতেন। কিন্তু শেষের দিকে এসে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সব বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের মদদদাতা এমপি ও মন্ত্রীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর প্রথম ধাপে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নোটিশ দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি সকল বিদ্রোহী প্রার্থীর চিঠির জবাব জমা দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে। তিনি সেগুলো পর্যালোচনা করেছেন। চিঠির জবাবে সন্তুষ্ট হয়ে তাদের ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তানভীর ইসলাম। তিনি গতকাল বিকালে বলেন, বিএনপিবিহীন নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার জন্য এলাকাবাসীর চাপে নির্বাচনে অংশ নিই। দলীয় প্রার্থী ও আমাদের দলের আরেকজন বিদ্রোহী প্রার্থী দুজনকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে নির্বাচিত হই। তানভীর বলেন, এলাকার মানুষ ও নেতাকর্মীদের চাপে মুখে হলেও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ভুল ছিল বলে তিনি এখন মনে করেন।
সূত্র – আমাদের সময়