কুলাউড়া উপজেলা আ.লীগের কাউন্সিল ; ক্লিন ইমেজেই আস্থা তৃণমূলের
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৫৩:০২,অপরাহ্ন ০৭ নভেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৩৮২ বার পঠিত
মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন : দীর্ঘদিনের চলমান রাজনৈতিক অন্তর্দ্বন্ধ থাকা স্বত্বেও সুদীর্ঘ ১৫ বছর পর অনুষ্টিত হতে যাচ্ছে কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামিলীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল। সব কিছু ঠিক থাকলে মাত্র ২দিন পর ১০ই নভেস্বর অনুষ্টিত হবে কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামিলীগের কাঙ্কিত কাউন্সিল। আর এজন্য দলীয় নেতা কর্মীদের পদ-পদবী প্রাপ্তির প্রত্যাশায় শুরু হয়েছে ব্যাপক দৌড়ঝাপ। উপজেলা থেকে জেলা, জেলা থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত চলছে পদ প্রত্যাশিদের নিরন্তর লবিং কার্যক্রম।
উপজেলা ব্যাপি দৃশ্যমান সক্রিয় দুটি গ্রæপের একটির নেতৃত্বে আছেন কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনু এবং অপর বলয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামিলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শফি আহমদ সলমান। আর এজন্য তৃণমূল নেতা কর্মীদের অনেকের মাঝে রয়েছে হতাশা ও বিরক্তি। তাই আসন্ন সম্মেলন ও কাউন্সিলকে দীর্ঘদিনের দ্বন্ধ নিরসন ও গ্রæপিং নিরসনের স্থায়ী সমাধানের পথ হিসেবে দেখছেন বেশির ভাগ নিবেদিতপ্রান কর্মীরা। এর মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে এবং রাজনীতিতে সৃষ্টি হবে গতি এবং নেতা কর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য আসবে।
আগামী ১০নভেম্বর অনুষ্টিতব্য সম্মেলনকে সামনে রেথে বর্ধিত সভাও অনুষ্টিত হয়েছে। ২৪ অক্টোবর বিকেলে কুলাউড়া পৌরসভা মিলনায়তনে অনুষ্টিত বর্দিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা সেক্রেটারী মিছবাউর রহমান। সভায় সম্মেলনকে সুষ্টুভাবে সম্পন্ন করেতে বর্তমান সভাপিত আব্দুল মতিনকে আহŸায়ক, সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনুকে সদস্য সচিব ও কার্যনির্বাহি কমিটির বাকী সদস্যদের সদস্য করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সম্মেলনের সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়েছে।
২০০৪ সালের কাউন্সিলে আব্দুল মতিনকে সভাপতি ও রফিকুল ইসলাম রেনুকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা কমিটি গঠিত হলেও পরবর্তীতে আদুল মতিন উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে সহসভাপতি এডভোকেট সৈয়দ কামাল উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্তসভাপিতর দায়িত্ব প্রদান কার হয়। পরবর্তীতে এডভোকেট সৈয়দ কামাল উদ্দিনের মৃত্যু হলে কিছুদিন বরমচালের চেয়ারম্যান আহবাব চৌধুরী শাহজাহান ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করলেও একপর্যায়ে আব্দুল মতিনকেই আবার সভাপতির দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
উপজেলা আওয়ামিলগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুলইসলাম রেনু ও যুগ্ম সাধারন সম্পাদক এ.কে.এম,সফি আহমদ সলমানের কাদিপুরে যুবলীগের সম্মেলনে সৃষ্ট বিরোধকে কেন্দ্র করে দ্বিধাবিভক্তির যাত্রা শুরু হয় এবং গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় জেলার নেতৃবৃন্দ উক্ত বিরোধের বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দিলেও অভ্যন্তরীন বিভক্তি এখনো স্পষ্ট প্রতিয়মান। যার কারণে আওয়ামিলীগ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনুর নেতৃত্বে ৩০ আগষ্ট সম্ভাব্য কাউন্সিল অনুষ্টানের প্রস্তুতি সভা নামে সংলাপ সম্পাদক সিপার উদ্দিনের অফিসে যে সভা অনুষ্টিত হয়েছিল সেটিতে বিগত কাউন্সিলের অধিকাংশ সম্পাদকীয় পদধারী যুগ্ম সম্পাদক সফি আহমদ সলমানের বলয়ের অনুসারী হওয়ায় তাদের কাউকে দাওয়াত করা হয়নি। এমনকি কুলাউড়া পৌরমেয়র শফি আলম ইউনুস সহ বলয়বিহিীন অনেক নেতাকেও দাওয়াত করা হয়নি। তবে পরবর্তীতে কেন্দ্রের নির্দেশে কাউন্সিলের তারিখ ১০ নভেম্বর পরিবর্তন হয় এবং উভয় বলয়ের নেতাদের নিয়ে কুলাউড়া পৌরসভায় বর্ধিত সভাও অনুষ্টিত হয়।
সম্মেলনের আর মাত্র ২দিন বাকি, ইতিমধ্যে পদপ্রত্যাশি প্রার্থীরা স্বস্ব পদে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে যোগ্যতা প্রমানে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি প্রচারনা চলছে সম্ভাব্য প্রার্থী ও সমর্থকদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে। স্থানীয় পৌর শহরের ঐতিহাসিক ডাক বাংলো মাঠে কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ওই দিন । ইতিমধ্যে মঞ্চ প্রস্তুতের কাজ সম্পন্নের দিকে।
১০ তারিখের কাউন্সিলে সভাপতি পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম আলোচনা রয়েছে তারা হলেন সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি মোঃ আব্দুল মতিন,বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনু, কুলাউড়ার পৌর মেয়র আলহাজ¦ শফি আলম ইউনুছ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শফি আহমদ সলমান, সহ-সভাপতি অরবিন্দু ঘোষ বিন্দু, সহ-সভাপতি নবাব আলী ওয়াজেদ বাবু, যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল মালিক, আহŸাব চৌধুরী শাহজাহান ও অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ।
সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুক্তাদির তোফায়েল, বিএমএ সভাপতি ডাক্তার রুকন উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মনসুর চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক ফজলু, যুব বিষয়ক সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আসম কামরুল ইসলাম,বন ও পরিবেশ সম্পাদক সফিউল আলম শফি, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি বদরুল ইসলাম বদর, জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সিপার উদ্দিন আহমদ।
উল্লেখ্য, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান সফি আহমদ সলমান বিগত উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করায় কাউন্সিলে তার প্রার্থীতা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল, তবে সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষনার পর কেন্দ্রের সিদ্ধান্তেই কুলাউড়ায় উভয় বলয়ের সমন্বয়ে বর্ধিত সভা হওয়ার পর হতে তার অনুসারীরা অনেক উজ্জীবিত। অপরদিকে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনুর প্রার্থীতা নিয়ে তার অনুসারীদের মধ্যে এখনো ধোয়াশা কাটেনি। দীর্ঘদিন থেকে শূনা যাচ্ছিল তার প্যানেলে বর্তমান সভাপতি আব্দুল মতিন সভাপতি ও তিনি সম্পাদক প্রার্থী। বর্তমানে তার নেতা কর্মীদের ফেসবুকে ও লোক মুখে আলোচনায় তিনি সভাপতি প্রার্থীও শুনা যাচ্ছে। ফলে কখনো সভাপতি আবার কখনো সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় থাকায় তার বলয়ের নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্চাস কিছুটা কম পরিলক্ষিত হচ্ছে।
অপর দিকে উপজেলায় সর্বোচ্চ ক্লীন ইমেজের অধিকারী কুলাউড়ার পৌরমেয়র আলহাজ¦ শফিআলম ইউনুছ আসন্ন কাউন্সিলে সভাপতি পদে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী হিসেবে উপজেলার সর্বত্র শুনা গেলেও কোন ফেসবুক বা অন্য কোন সামাজিক মাধ্যমে তার পক্ষে কোন প্রচার প্রচারনা কেউ করেনি। তবে কেন্দ্র থেকে জেলা পর্যন্ত তার এই ক্রীন ইমেজের কারণে নেতৃবৃন্দের পছন্দের মধ্যে অগ্রাধিকার পেতে পারেন বলে সাধানণের ধারণা।
সুদীর্ঘ ১৫বছর পর কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামিলীগের কাউন্সিল হচ্ছে বিধায় এ নিয়ে দলীয় তৃণমূল ও নেতা কর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ক্ষমতার মোহে ইতিমধ্যে দলে ভিন্ন দলের অনেক অনুপ্রবেশ কারীরর আগমন ঘটেছে যারা কাউন্সিলে গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য প্রাণপণে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন তাই তৃণমূল নেতা কর্মীরা এনিয়ে শঙ্কিত। তাছাড়া দলের জন্য ত্যাগী, অতীত কর্মকান্ড, অবৈধ মনোনয়ন বাণিজ্য, হামলা,মামলা ,দলকে ব্যবহার করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া অর্থলুলুপ নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে নবীন প্রবীনের সমন্বয়ে সৎ, দলীয় আদর্শে বিশ^াসী ও নিবেদিতপ্রান নেতা কর্মীদের আসন্ন কাউন্সিলে পদ-পদবী প্রদান করতে আহŸান জানিয়েছেন তৃনমূল নেতাকর্মীরা।