বাল্যবিবাহ কি চলতেই থাকবে?
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৪৭:১৫,অপরাহ্ন ১২ জানুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ১৩৯৪ বার পঠিত
আল-আমিন আহমেদ’ জীবন : আগে আমাদের দেশের গ্রাম গুলোতে গ্রাম্য পঞ্চায়েতের মাধ্যমে ধুমধাম করে বিয়ে হতো হইহুলোড় করে, রং মাখামাখি করে বিয়ের উৎসব হতো। বিয়ের অনুষ্ঠান মানেই ছোট বড় সবাই মিলে আনন্দ করা । কিন্তু বর্তমান সময়ে এমন আয়োজন খুব একটা চোখে পড়ে না। এখন সারা দেশে প্রতিদিন যতগুলো বিয়ে হয় তার অর্ধেকের বেশি হয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
কোথাও কোথাও এমন বিয়ে হয় যে, পাড়া প্রতিবেশী কেউ জানতে পারে না তার একটাই কারন হল কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার জন্য খবরটি। এমনও দেখা যায়, এক বাড়িতে বিয়ে হচ্ছে অথচ পাশের বাড়ির লোকজন। বিষয়টি জানে না। কেন এমন গোপনীয় ভাবে সমাজে বিয়ে হচ্ছে। আর তা হয় পিতা -মাতার কারণে।
সামাজিক কারণে বাংলাদেশে “বাল্যবিবাহের” প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। অশিক্ষা ও অসচেতনতার কারণে অভিভাব করা কন্যা সন্তানকে নিজের বোঝা মনে করেন। তারা পিতা- মাতা মনে করেন কন্যা সন্তান ভবিষ্যতে তাদের কোন কাজে লাগবে না । বরং বিয়ে দিতে গিয়ে আরো অনেক বাড়তি – খরচ যেমন যৌতুক সহ নানা রকম ঝামেলায় নিজেকে পড়তে হবে। ফলে পিতা-মাতা অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়াটাকেই যুক্তির কাজ মনে করে থাকেন তাদের পিতা মাতা তাদের যুক্তি দেখে আমাদের সমাজের মানুষ দিনের পর দিন অন্ধ হয়ে অনেকের পিতা-মাতা । তাদের ভুলের কারণে অনেক মেয়েরা এখনো দুঃখ কষ্ট করেও বেঁচে আছে।
তাই আর নতুন করে কোথায় যেন কারো পিতা-মাতা এই ধরনের ভুল না করে ফেলে তাই আমরা সতর্ক থাকা উচিত। একটা কথা চিন্তা করা উচিত কারণ আমাদের মত তাদের ও একটি জীবন আছে। কম বয়সে বিয়ে দিলে দেখা যায় কয়েক মাসের মধ্যেই তাদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বলিকা বধুরা সন্তানসম্ভবা হয়ে তাদের অনেক সমস্যায়ড়তে হয়। তখন সিজার, করতে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। শুধু কম বয়সে বিয়ের কারণে এগুলো হয় কোন, সময় সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মায়ের মৃত্যু হয়।
আমরা কিভাবেই এগিয়ে যাবো, এগিয়ে যেতে হলে আগে “বাল্যবিবাহ” বন্ধ করতে হবে না । শুধু বাল্যবিবাহ ? কেউ কেউ আবার কম বয়সে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে ও করতেছে যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৪ বছরের ভিতরে। তাই বাল্য বিবাহরোধ আইনের পাশাপাশি প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা। আমাদের শুধু নিজের কথা ভাবলে হবে না অন্যদের কথাও চিন্তা করার প্রয়োজন। আমাদের সকলে মিলে বন্ধ করতে হবে আমরা নিজেই যদি বন্ধ না করতে পারি আইনের ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে আমাদের দেশে বন্ধ হবে “বাল্যবিবাহ”।
গ্রামাঞ্চলের অনেক অভিভাবক ভাবেন তার পরিবারের মানসম্মানের কথা, ভাবেন তিনি সমাজের অতি দরিদ্র একজন মানুষ। যেদিন তার, কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করল, সেদিন থেকেই যেন পরিবারের কর্তার মাথায় একটা পাহাড় সমান বোঝা চেপে বসল। সেদিন থেকেই চিন্তায় চিন্তায় তার জীবন যেন ছারখার! তার মেয়েটা একটু বড় হওয়ার পর বয়সে বড় না হলেও দেখতে বড় হলে চিন্তার মাত্রা টা দ্বিগুণ হয়ে যায়। কোনোমতে ১৩-১৪ বছর হলেই পরিবারের কর্তার দিন-রাত দৌড় শুরু হয়ে যায় ঘটকের পেছনে। যেন কোনোমতে। বিয়েটা দিতে পারলেই চিন্তা গুলো দূর হয়ে যাবে। বরং নিজের চিন্তা দূর করতে গিয়ে মেয়ের জীবনটা নিজের হাতেই নিজে কুরবানী করেন। সাঁতার কাটা না শিখেই কি আপনি কোন নদীতে ঝাঁপ দেবেন? এই রকম বোকার মতো কাজ করা এতই বিপদজনক যে আপনি এমনকি মারাও যেতে পারেন। তাহলে নিজের মেয়েকে কম বয়সে বিয়ে থেকে দূরে থাকুন।
বাল্যবিবাহ শুধুমাত্র মায়ের স্বাস্থ্যই না বরং শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ও হুমকি ১৮ বছরের নীচে মেয়েদের অপরিণত সন্তান জন্মদান বা কম ওজনের সন্তান জন্মদানের সম্ভাবনা ৩৫-৫৫%। তাছাড়াও শিশু মৃত্যুর হার ৬০% যখন মায়ের বয়স ১৮ বছরের নীচে। যেসব নারী কম বয়সে শিশুর জন্ম দেয় ঐসব শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয় ও শিশু অপুষ্টিতে। ভোগার সম্ভাবনা বেশি। বাল্যবিবাহের প্রাদুর্ভাবের কারণে জনসংখ্যার হার বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে সরকারকেও আইনের মাধ্যমে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
আসুন সকলে মিলে বন্ধ করি বাল্যবিবাহ।
আল-আমিন আহমেদ’ জীবন
কলাম লেখকঃ নিবন্ধকার