বড়লেখায় দুর্ধর্ষ প্রতারক মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক প্রবাসির সর্বস্ব লুট !
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:০৮:১৩,অপরাহ্ন ২০ জুন ২০২০ | সংবাদটি ২৫০৫ বার পঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়লেখা : বড়লেখামৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ এলাকায় ভালো মানুষের ছদ্মাবরণে একটি শক্তিশালী ভূমিখেকো ও সুদি জালিয়াতি চক্রের পাতানো ফাঁদে প্রবাস ফেরত তাজউদ্দিনের সবর্স্ব হারানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভূক্তভোগীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা নিয়ন্ত্রিত উচ্চ পর্যায়ের গোয়েন্দা তদন্তে বেরিয়ে আসতে শুরু হয়েছে একটা পর একটা লোমহর্ষক নির্মম জালিয়াতি ও বিশ্বাস ঘাতকতার তথ্য। আর এর নাটের গুরু হলেন ঐ এলাকার সর্বসাধারণের চোখে ধুলো দিয়ে ভালো মানুষের মুখোসে সমাজে সর্বসাধারণের বিশ্বাসমতে এক মহাপুরুষ খ্যাত টিলাবাজার মোহাম্মদিয়া মাদ্রাসার মোহতামিম মৌলানা মো. কাউসার। যার নিয়ন্তণাধীন জালিয়াতি,প্রতারক ও সুদী চক্রের পাতানো ফাঁদে পুরো বড়লেখা উপজেলাবাসী নিরাপত্তাহীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি ১৪ জুন তাজ উদ্দিন মৌলভীবাজার পুলিশসুপার বরাবরে মৌলানা কাওসারও তার অপকর্মের সহযোগী আব্দুল খালিক, মৌলানা আব্দুল কাদির ও মৌলানা এবাদুল্লাহকে আসামী করে আরো একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন যা বড়লেখা থানার ওসির নিকট তদন্তের জন্য প্রেরিত হয়েছে যা পুলিশ সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে সরেজমিনে খোঁজ নিতে গিয়ে ভূক্ত ভোগী তাজ উদ্দিন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, তাজ উদ্দিন দীর্ঘদিন মধ্যপ্রাচ্যের কাতারে উচ্চ বেতনের এক চাকুরিজীবি ছিলেন। তিনি দেশে এলেই টিলাবাজার মোহাম্মদিয়া কওমী মাদ্রাসার প্রধান মৌলানা কাওসার মাদ্রাসার ও তার নিজের সাহায্যের জন্য তাজউদ্দিনের কাছে আসতেন এবং তিনি সাধ্য মতো সাহায্যও করতেন। এক পর্যায়ে মৌলানা কাউসার মাদ্রাসার সাহায্যার্থে অর্থ কালেকশনের নাম করে তাজউদ্দিনের কাছে অনেক অনুনয় করে তাকে কাতার নেয়ার জন্য অনুরোধ করে বললেন, এতে তিনি মাদ্রাসার জন্য সবার সহযোগিতায় প্রচুর অর্থ কলেকশন করতে পারবেন। প্রচন্ড ধর্মপ্রান ও সরলমনা তাজ উদ্দিন শুধুমাত্র দীনি প্রতিষ্টান মাদ্রাসার স্বার্থে এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে তৎকারীন সাড়ে ৪লক্ষ টাকা খরচ করে ভিসা-টিকেট দিয়ে কাউসার মৌলানাকে কাতার নেন। সেখানে তাজউদ্দিন নিজের সকল কাজকর্ম ফেলে নিজের বাসায় রেখে, খাইয়ে, নিজ গাড়ী দিয়ে আরবিয়ান ও দেশ বিদেশের বিভিন্ন ধনাঢ্য ব্যাক্তিদের সাথে পরিচয় করিয়ে এতিম মাদ্রাসার কথা বলে টাকা কালেকশন করে দিতে থাকেন।
উল্লেখ্য, ভিসা ভিজিট ছিলনা বিধায় শুধুমাত্র দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসার স্বার্থে তাজ উদ্দিন নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একমাত্র নিজের জিম্মায় ভিসা দাতা আরবিয়ানকে ৫লক্ষ টাকা দিয়ে অঙ্গীকার বদ্ধ হন যাতে মৌলানা কাউসার টাকা কালেকশনে বছরে ২/৩/৪বার আসা যাওয়া করতে পারেন। এভাবে বছরে ৩/৪বার গিয়ে মৌলানা কাউসার প্রতিবারে ৪০/৫০লাখ টাকা করে কালেকশন করে নিয়ে আসতে থাকেন।
এভাবে তাজ উদ্দিনের সাথে মৌলানা কাউসারের গভীর বিশ্বাস ও ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠে। যার ফলে তিনি দক্ষিনভাগ বাজারস্থ জামান প্লাজা বিল্ডিং নির্মানের যাবতীয় দায়িত্ব কাওসার মৌলানাকে দিয়ে কাজের জন্য নিয়মিত লক্ষ লক্ষ টাকা পাঠাতে থাকেন। তাজউদ্দিন তার বিল্ডিং নির্মানের জন্য কাতার হতে ১ কোটি ৫২ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা কাওসার মৌলানাকে দিয়েছেন। কাওসার মৌলানা যখন জানালেন বিল্ডিং এর কাজ সমাপ্ত হতে আরো টাকার প্রয়োজন তখন টাকার ব্যবস্থার অন্য কোন ব্যবস্থা তখন না থাকায় তাজউদ্দিন ৪বারে তার নিজের ভূমি বিক্রয় করে কাওসার মৌলানানাকে আরো ১ কোটি ১৩লক্ষ টাকা দিয়েছেন এবং ভূমি বিক্রয়ের কথাবার্তা থেকে শুরু করে লেনদের পর্যন্ত সকল কিছু কাওসার মৌলানার দায়িদ্বে হয়েছে। এত টাকা দেয়ার পরেও বিল্ডিয়য়ের ৬০শতাংশ কাজও সমাপ্ত হয়নি এবং কাউসার মৌলানা নিজ থেকে তাজ উদ্দিনকে একটি টাকারও হিসেব দেননাই অপর দিকে তাজ উদ্দিন কাওসার মৌলনাকে আল্লাহ ও রাসুল (সঃ) এর পরে কাবা শরিফের চেয়েও বেশি বিশ্বাস করতেন বিধায় তাজউদ্দিনও কোন হিসাব চাননি।
২০০৬সালে তাজ উদ্দিন দেশে আসলে জানতে পারেন, কাওসার মৌলানা এখন দক্ষিণভাগে থাকেননা, তিনি সিলেট শহরের শিবগঞ্জ এলাকায় বিলাসবহুল বাসায় ভাড়া থাকেন। তখন তাজউদ্দিনের মনে সন্দেহ হয় যে কাউসার মৌলানা ভাল একটি পাঞ্জাবী পাজামা নিজে কিনার সামর্থ্য ছিলনা, পেট ভরে এক বেলা খাবার সামর্থ ছিলনা, সে কিনা সিলেট শহরে ভাড়া বাসায় আছে! কাওসার মৌলানায় অনেক অনুরোধের নিমন্ত্রণে তাজ উদ্দিন সিলেট গেলে সীমাহীন আদর আপ্যায়নে তাজ উদ্দিন অনেক বেশী আবেগাপ্লুত হয়ে উঠেন।
এক পর্যায়ে বাসার মালিক কাদির ও কাওসার মৌলানা উভয়েই শিবগঞ্জে বাসার জন্য ৬শতক জায়গা ক্রয়ের জন্য পীড়াপীড়ি করলে তাজ উদ্দিন রাজি হয়ে যান। জায়গার তিন শতক তিনি কাউসার মৌলানাকে দান করবেন বাকী তিন শতক তার নিজের নামে থাকবে, এরকম শর্তে তিনি জায়গার সমুদয় মূল্য মোট ৭লক্ষ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন। দেশ হতে কাতার চলে যাওয়ার পর কাউসার ও কাদির মৌলানার অনুরোধে তিনি শিবগঞ্জ এলাকায় নিজ নামে আরো ১০ শতক জায়গা ক্রয়ের জন্য রাজি হয়ে ১১লক্ষ ৭০হাজার টাকা কাওসার মৌলানাকে প্রদান করেন। তাজউদ্দিন পরবর্তীতে দেশে এসে কাওসার মৌলনার কাছে জায়গার দলিল চাইলে ৩জনের নামে (তাজ উদ্দিন, মৌলানা আব্দুল কাদির ও মৌলানা কাওছার আহমদ) সমান হিস্যায় ১০শতক জায়গার দলিলের একটি ফঠো কপি পেয়েছেন। কিন্তু তাজ উদ্দিন নিজের একক নামে ১০ শতক ক্রয়ের যে টাকা দিয়ে ছিলেন তার কোন দলিল এখনো পাননি। কাওসার মৌলানা দিব দিচ্ছি বলে আজ পর্যন্ত সে ১০ শতকের দলিল দেননি।
আরো উল্লেখ্য যে, কাতারে টাকা কালেকশনের জন্য অনেক নামীধামী লোকের সাথে সভা সমাবেশ করোর প্রয়োজনে কাওসার মৌলানার পরামর্শে তাজ উদ্দিন নিজ জিম্মায় বাংলাদেশী টাকার হিসাবে মাসিক ৭৫হাজার টাকা মূল্যের বাসা স্থায়ী ভাবে ভাড়া করে দিয়েছিলেন। ৮বছরে কাওসার মৌলানার বাসা ভাড়া বাবদ তাজ উদ্দিন পরিশোধ করেছেন মোট ৭২ লক্ষ টাকা। কথা ছিল কালেকশনের টাকা হতে বাসা ভাড়ার টাকা পরিশোধ করবেন, কিন্তু মৌলানা কাওসার কোন বাসা ভাড়া বাবদ টাকা পরিশোধ করেন নি। বিষয়টি কাতারে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সূত্রের দেয়া তথ্য মতে, মৌলানা কাওসার আহমদ এই কয়েক বছরে কাতার হতে এতিম মাদ্রাসার নামে কোটি-কোটি টাকা কালেকশন করে এনেছেন। তাজ উদ্দিনের জানা মতে ৮বছরে ১২ কোটি টাকার উপরে কালেকশন করে এনেছেন। কিন্তু উক্ত টাকার কমপক্ষে ৯০শতাংশ টাকা মাদ্রাসার কাজে না লাগিয়ে পুরো দক্ষিণভাগ-বড়লেখা জুড়ে গড়ে তুলেছেন সুদের ব্যবসা ও ভূমি জালিয়াতির এক বিশাল নেটওয়ার্ক। কখনো ভূয়া সালিশ বৈঠকে সাজানো মিথ্যাকল্প কাহিনী সাজিয়ে সহজ মানুষকে ধোকা দিয়ে বোকা বানিয়ে ফাঁসিয়ে স্টাম্পে বা চেকে স্মাক্ষর নিয়ে সর্বস্ব লুটে নেয়াই এদের কাজ। মৌলানা কাওসারের সকল অপকর্মের অন্যতম এক পার্টনার হলেন আব্দুল খালিক নামে এক দুর্ধর্ষ অপরাধী। চা পাতা ব্যবসার আড়ালে সুদের ব্যবসা ও মাদক ব্যবসার গডফাদার সে। এছাড়া মৌলানা কাওসারের অপকর্মের অন্যতম দু’পার্টনার হলেন তার মাদ্রাসার সহকর্মী মৌলানা কাদির ও তার ছেলে এবাদুল্লাহ।
মৌলানা কাওসারের সৃষ্ট এ চক্রটি এলাকার প্রভাবশালী, রাজনৈতিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি,সাংবাদিক ও সমাজের বুদ্ধিজীবি শ্রেণীর লোকদের প্রচুর অর্থের বিনিময়ে তাদের পক্ষে ওকালতি করার জন্য নিয়োগ দিয়ে রেখেছে এলাকার সকল সালিশ বৈঠক এক তরফা ভাবে প্রভাবিত করার জন্য। এক কথায় সামাজিক বলয়ে এরা অত্যন্ত শক্তিশালী। এলাকার মসজিদের অভ্যন্তরে গোলযোগ সৃষ্টি থেকে শুরু করে, মানুষের বিয়ে ভাঙ্গা, পঞ্চায়েতে ভাঙ্গন সৃষ্টিসহ এমন কোন কুকর্মের ক্ষেত্র নেই যেখানে এরা প্রভাব বিস্তার করেত পারেনা।
সূত্র মতে, ওদের লিডার কাওসার মৌলানা ভালো সানুষের লেবাসে সমাজে এ অপরাধের অভয়ারণ্য গড়ে তুলেছে। ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর চারিত্রক বৈশিষ্ট্যে আরো জঘন্য। নারীদের প্রতি ও বিদেশী ব্র্যান্ডের মদের প্রতি তার অনেক বেশী আসক্তি রয়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে প্রবাসীদের স্ত্রীরা তার স্বীকারে অন্যতম টার্গেট বলে জানা গেছে। এক কথায় সে লালসালুর ভন্ড মজিদকেও হার মানিয়েছে।
এ বিষয়ে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসা তাজ উদ্দিন বলেন, এই ভন্ড, প্রতারক, চরিত্রহীন লম্পট কাওসার মৌলানাকে আমি আল্লাহ ও রাসুলের পরে দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশী বিশ্বাস করতাম। আমার রক্তের ভাইয়ের চেয়ে বেশী আপন ভাবতাম। সে আজ আমার পরিবারে ভাঙ্গন সৃষ্টি করেছে। ভাইয়ে-ভাইয়ে দ্বন্ধ সৃষ্টি করেছে। আমাকে তাবিজ করে কিছুদিন পাগল বানিয়ে রেখেছিল। আল্লাহ আজ আমাকে শুস্থ করেছেন। আমি কাওসার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ঢাকায় অভিযোগ দিয়েছি, জেলা পুলিশ সুপারে অভিযোগ দিয়েছি। প্রয়োজনে আরো বিভিন্ন সেক্টরে অভিযোগ দিব এবং তার মৌলানার লেবাস শুধু বাহিরে, সে সমাজের শত্রু ও দেশের শত্রু একটা ভন্ড প্রতারক তা প্রমান করার মতো যথেষ্ট প্রমান আমার রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বড়লেখার এক বিশিষ্ট জনপ্রতিনিধি বলেন, কাওসার মুল্লা হলো কামসিন্দুর ওয়ালা এক যাদুগর ও ভন্ড। তার অপকর্ম বেরিয়ে আসতে শুরু হয়েছে। অচিরেই তার মুখোশ উন্মোচিত হবে।
অভিযুক্ত মৌলানা কাওসার আহমদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে জামান প্লাজার বিল্ডিং নির্মান তার দায়িত্ব সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, “মাদ্রাসার নামে কালেকশনের পুরো টাকাই মাদ্রাসার কাজে লাগানো হয়েছে।” সুদের ব্যবসা ও ভুমি জালিয়াতির বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, “তাজ উদ্দিন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে, সে নিজেই সুদের ব্যবসায় জড়িত। এবিষয়ে সঠিক তথ্য পেতে আপনারা দক্ষিণভাগের বিশিষ্ট সাংবাদিক আব্দুর রব ও শামছুল হকের সাথে যোগাযোগ করুন।”