সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ‘সাহারা খাতুন’ এর মৃত্যুর গুজব ও কিছু কথা
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:২৭:১৭,অপরাহ্ন ২৯ জুন ২০২০ | সংবাদটি ১২২৫ বার পঠিত
মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন : গত ২১ জুন রাত ১টার পরে নিজের ফেসবুক আইডিতে কিছুটা ঘাটাঘটি করছিলাম, হঠাৎ ‘দৈনিক শিক্ষা ডটকম’ নামক অনলাইন পোর্টালের একটি নিউজ হেডলাইন নজরে আসায় রিতিমত চমকে উঠি।। হেডলাইনটি এরকম ছিলো, “সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাহারা খাতুন আর নেই ; প্রধানমন্ত্রীর শোক”, আবার মনে ভাবি নিউজটি হয়তো সত্য হতেও তো পারে। যেহেতু কয়দিন আগেই সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নাসিম সহ জাতীয় পর্যায়ের কয়েক জন নেতা মারা গেছেন। তাছাড়া সাহার খাতুর করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন। অবধারিত মৃত্যুর ছোবল তো যে কোন সময়েই যে কারোরই হতে পারে। তবুও খবরটির ভালো নির্ভরযোগ্য সূত্র না পেয়ে তেমন আমলে নিচ্ছিলামনা।
পরক্ষনেই মৌলভীবাজারের জেলাপ্রশাসক নাজিয়া শিরিন(যিনি মাত্র বদলী হয়েছেন) ম্যাডামের নিজ ফেসবুক আইডি থেকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহার খাতুনের মৃতু সংক্রান্ত আরো একটি পোষ্ট দেখতে পেলাম। পোস্টটি ছিলো এরকম, “সাবেক সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন আর আমাদের মাঝে নেই,ইন্নাল্লিাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন !-with Dc Moulvibazar and Ndc Moulvibazar.|
তাছাড়াও একই সময়ে জাতীয় সংসদ সদস্য সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন এমপির ফেসবুক আইডিতেও একই ভাবে আওয়ামিলীগ নেত্রী ও সাবেক মন্ত্রী সাহারা খাতুনের মৃত্যু সংক্রান্ত পোস্টটি আমার ফেসবুক দেয়ালে ভেসে উঠে।
পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো, “# ইন্না-লিল্লাহি-ওয়া-ইন্না-ইলাইহী-রাজিউন, ঢাকা-১৮আসনের সংসদ সদস্য, আওয়ামিলীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাহারা খাতুন রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ইন্তেকাল করিয়াছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৭৭বছর। তিনি দীর্ঘদিন যাবত বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। তবে উনার করোনা টেস্টে নেগেটিভ এসেছে। তিনি আওয়ামিলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামি আইনজীবি পরিষদের প্রতিষ্টাতা সভাপতি এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক মহিলা আইনজীবি সমিতি ও আন্তর্জাতিক মহিলা জোটের সদস্য ছিলেন। আমি উনার ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করছি ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং মরহুমের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহ যেন উনাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করেন।”
তখন আমার খবরটির নির্ভরতা বিষয়ে সন্দেহ একেবারেই কেটে যায়। কারণ একজন জেলা প্রশাসক ও একজন জাতীয় সংসদ সদস্য নিশ্চিত নির্ভরশীল সূত্র ছাড়া এরকম পোস্ট কখনোই দিতে পারেননা। তাই আমি ডিসি নাজিয়া শিরিন ম্যাডামের পোস্ট এর অনুকরণেই সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাহারা খাতুনের মৃত্যু সংক্রান্ত শোক জানিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেই। বেশ কয়েক জন পোস্টের সত্যতার সূত্র জানতে চাইলে আমি জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার ও এমপি সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দি কেই খবরটির সত্যতার সূত্র হিসেবে ফেসবুক কমেন্টে উল্লেখ করি।
ফেসবুক পোস্ট দেয়ার ১০ মিনিটের ভিতর ঢাকা থেকে দু’জন, সিলেট থেকে একজন ও আমার উপজেলা কুলাউড়া থেকে একজন সাংবাদিক সহকর্মী আমাকে নিশ্চিত করেন যে, সাহারা খাতুনের মৃত্যু সংক্রান্ত নিউজটি একেবারেই গুজব। গুজব বিষয়ে যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য তথ্য তুলে ধরেন।
পোস্টটি মাত্র ১৭ মিনিট আমার ফেসবুক দেয়ালে বিদ্যমান ছিল, এরই মধ্যে ৫১জন ফেসবুক বন্ধু এতে কমেন্ট করেছিলেন। এর পরেই আমি পোস্টটি আমার ফেসবুক একাউন্ট থেকে ডিলিট করি।
এর পর আমি লক্ষ্য করি আমার মতো প্রচুর ফেসবুক ব্যবহার কারী সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাহারা খাতুনের মৃত্যুজনিত শোক জানিয়ে পোস্ট দেয়া অব্যাহত রেখেছেন। শুধু তাই নয়, আমার অনেক শিক্ষক ও সাংবাদিক সহকর্মী সহ অনেক ঘনিষ্ট বন্ধু ফোন করে আমার উপর রাগ ঝেড়েছেন। তাদের বক্তব্য হলো, “আপনার মতো লোক যদি এরকম দায়িত্বহীন পোস্ট দেয়…ইত্যাদি ইত্যাদি”। অবশ্য আমার নিজের উপও রাগ হয়েছিলো এজন্য যে, খবরটি আরো একটু ভালো করে যাচাই করা আমার উচিত ছিল। কারণ মিডিয়া কর্মী হিসেবে বাংলাদেশের যে কোন প্রান্তের খবর সংগ্রহ করার সুযোগ তো অন্তত আমার ছিল।
পরিশেষে আমি বলতে চাই, একজন জেলা প্রশাসক ও একজন সংসদ সদস্যের দায়িত্ব কমপক্ষে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের চাইতে কয়েক শতগুণ বেশী। যাদের একটি কথা, একটি তথ্যের উপর হাজারো, লাখো মানুষ আস্থা রাখে। যেরকম অধিক আস্থার ফলে তাদেরকে ফলো করে আমি নিজেও এরকম একটি পোস্ট দিয়ে অনেকের নিকট অপরাধীতে পরিনত হয়েছি। তাই আমার শুভাকাঙ্খী, সহকর্মী ও ঘনিষ্টজন সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সকল বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলছি, আমার অনিচ্ছাকৃত ভ্রমের বিষয়টি আশা করছি আপনারা সহজ দৃষ্টিতে নিবেন। আর সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাহারা খাতুনের শারিরীক অবস্থার অবনতি হয়েছে বিধায় আমার প্রার্থনা মহান আল্লাহ যেন তাকে আশু রোগ মুক্তি দান করেন এবং দীর্ঘজীবি করেন।
লিখক : মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন, সম্পাদক – মানবতার জন্য ভাষাণী ফাউন্ডেশন, সভাপতি-হাওর বাঁচাও কৃষক বাঁচাও
সংগ্রাম পরিষদ।