জুড়ীতে দীনবন্ধুর ‘বন্ধু পোল্ট্রি’তেই ছিল সাম্প্রদায়িকতার বীজ ;উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঘৃন্য ষঢ়যন্ত্র
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৪৪:৩৯,অপরাহ্ন ১০ জুলাই ২০২০ | সংবাদটি ২১০৬ বার পঠিত
জুড়ী প্রতিনিধি : জাতীর জনকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিজের জীবন যৌবন বাজী রেখে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যে মানুষটি সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে ছিলেন দেশ মাতৃকাকে রক্ষায়, দেশ স্বাধীন হলে যিনি বীর বিক্রম খেতাবকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন অবলিলায়, বলেছিলেন,খেতাবের জন্য তো যুদ্ধ করিনি, যুদ্ধ করেছি বাংলার মাটি ও মানুষের অধিকার রক্ষায়। সেই মহান বীর মুক্তিযুদ্ধা কখনোই চিন্তা করেননি তার প্রাণের জন্মস্থান, এককালীন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অপর লিলাভূমি জুড়ীতেই সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে শুধুমাত্র তাকেই অসম্মান ও পদচ্যুত করার হীন মানসে এক শ্রেণীর রাজনীতির পরিচয়ধারী অপরাজনীতিবিদরা শুধুমাত্র নিজেদের অবৈধ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে এমন হিংস্র হয়ে উঠবে। পুরো জুড়ী উপজেলাকে একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিনত করার চেষ্টা করবে! আর অপরাধী চক্রের ঘৃন্য ষঢ়যস্ত্রের স্বীকার সেই মহান মানুষটি হলেন জুড়ী উপজেলার গর্বিত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযুদ্ধা এম.এ.মুঈদ ফারুক।
সহজ,সরল ও জনসাধারণের জন্য নিবেদিতপ্রান উপজেলা চেয়ারম্যানকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে নাটক মঞ্চস্থ করে, চেয়ারম্যানের নামের সাথে সন্ত্রাসী, মাতাল মদ্যপ তকমা যুক্তকরা হয়েছে। অপপ্রচার চালানুর জন্য ভাড়া করা হয়েছে কতিপয় অখ্যাত পরিবারের সাংবাদিক নামধারী ভূইফুড়দের। আর নাটক মঞ্চায়নের থিয়েটার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়নের আমতৈল গ্রামের কুখ্যাত দীনবন্ধু সেনের বন্ধু পোলট্রি ফার্মকে। নাটকের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন জুড়ী এলাকায় সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির প্রধান কারিগর মনি কিশোর রায় চৌধুরী যিনি গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বর্তমান চেয়ারম্যান এম.এ.মুঈদ ফারুকের নিকট পরাজিত হয়েছিলেন।
গত (০১ মে) শুক্রবার রাতে জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের আমতৈল গ্রামের বন্ধু পোল্ট্রি ফার্মের মালিক দীন বন্ধু সেন ও মনি কিশোর রায় চৌধুরীর নেতৃত্বে এলাকার কিছু উছৃঙ্খল, মদ্যপ ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক নিয়ে পূর্ব পরিকল্পিতদভাবে পোল্ট্রি ফার্মে হামলা করে তার দায় নিরপরাধ উপজেলা চেয়ারম্যান এম.এ.মুঈদ ফারুকের উপর চাপানোর চেষ্টা করে দুবৃত্তরা। এই সুযোগে দীনবন্ধু সেন বাদী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান সহ উপজেলার বেশ কয়েকজন গন্যমান্য ব্যক্তিদের নাম জড়িয়ে মামলা করেন। এরই প্রেক্ষিতে একপর্যায়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুককে শোকজ করেন স্থানীয় সরকার বিভাগ। সর্বশেষ সিলেট বিভাগীয় কমিশনার বিষয়টির তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগে।
ঘটনাটির সরেজমিনে খোঁজ নিতে গিয়ে জুড়ী উপজেলা নির্বাহি অফিসারের কার্যালয় ও উপজেলা পরিষদের প্রদত্ত তথ্য ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩বছর পূবে জুড়ীর পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়নের সবচেয়ে জনবহুল গ্রাম আমতৈল গ্রামে এলাকার মানষের সকল ধরনের নিষেধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বন্ধু পোল্ট্রি নামে একটি মোরগের খামার গড়ে তুলেন এলাকার কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালী দীনবন্ধু সেন। ফার্মটি গড়ে তুলতে বিধি মাফিক তিনি পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ন্যুনতম ছাড়পত্রও গ্রহন করেননি। খামারটি প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর হতে নিবন্ধনও করেননি। এক পর্যায়ে এলাকাবাসী খামারের দূর্গন্ধে চরম অতিষ্ট হয়ে বিগত ২৭/১১/২০১৮ইং তারিখে জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় ফার্মটি বন্ধের দাবিতে জুড়ী উপজেলা নির্বাহি অফিসার বরাবরে এলাকাবাসীর পক্ষে আব্দুল মতিন, রাধাকান্ত দাস, কৃষ্ণ দাস,আহমেদ হোসেন, রোকেয়া বেগমসহ এলাকার বেশ কতিপয় সচেতন নাগরিক আবেদন করেন। কিন্তু বিষয়টির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বার বার তাগিদ দেয়ার পরেও রহস্যজনক ভাবে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করেননি উপজেলা নির্বাহি অফিসারের দায়িত্বে থাকা অসীম চন্দ্র বনিক। এলাকাবসী হতে আরো জানা যায়, অর্থের নেশায় চুরহয়ে থাকা উপজেলা নির্বাহি অফিসারের চাহিদা মেঠাতে না পারাই আবেদনের ব্যবস্থা গ্রহন না করার অন্যতম কারণ।
পরবর্তীতে এলাকাবাসীর আন্দোলনের চাপে দীর্ঘদিন পর ২৭/০৫/২০১৯ইং তারিখে দীনবন্ধু সেনকে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত শোকজ জারি করা হলেও তিনি সে শোকজের কোন জবাব না দিয়ে কেবল মাত্র ইউএনওর বিধি বহির্ভূত ক্ষমতাকে ব্যবহার করে তিনি জনসাধারণের স্বাস্থ্যকে চরম ঝুঁকিতে রেখে তার খামার চালিয়ে যেতে থাকেন।
এলাকাবাসী সূত্রে আরো জানা যায়, ঘটনার দিন (১ মে) সকাল বেলা জুড়ী উপজেলা নির্বাহি অফিসার অসীম চন্দ্র বনিক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ও জুড়ী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত হারভেষ্টার মেশিন পরিদর্শনে এলে দীনবন্ধু সেনের পোল্ট্রী ফার্মের কারণে দূর্গন্ধে অতিষ্ট এলাকাবাসী জড়ো হয়ে ইউএনও কে অনুরোধ করেন ফার্মের কারণে সৃষ্ট তাদের দুরবস্থা দেখে যাওয়ার জন্য। জনগণের অনুরোধে কোন ধরনের গুরুত্ব না দিলে ইউএনও বরাবরে করা আবেদনের কোন ধরনের পদক্ষেপ গত ৬মাস ধরে গ্রহন না করার কারণ জানতে চান উপস্থিত আব্দুল মতিন ও রাধাকান্ত দাস। এতই ইউএনও রেগে গিয়ে একজন অশিক্ষিত সাধারন মানুষের চেয়েও জঘন্য অকথ্য ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। এত উপস্থিত জনতা ইউএনও ‘অসীম চন্দ্র বনিক’ কে অবরুদ্ধ করে ফেললে পরিস্থিতি বেগতিক বুঝতে পেরে ছাত্রলীগ সম্পাদক জাকির অনেক অনুনয় করে উত্তেজিত জনতাকে নিবৃত করেন এবং ইউএনও ‘অসীম চন্দ্র বনিক’ কে জনতার কাছে ক্ষমা চেয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করার কথা বললে তিনি করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে স্থান ত্যাগ করে সে যাত্রা নিজেকে রক্ষা করেন। ঘটনার ৩দিন পর ইউএনও তার নিজ ফেসবুক আইডিতে অনিচ্ছাকৃত ভূলের জন্য ক্ষমা চাওয়া লজ্জার নয় বলেও বিষয়টি স্বীকার করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে আরো জানা যায়, ঘটনার রাতে সুচতুর দীনবন্ধু ও মনিকিশোর চৌধুরী পরিকল্পিত ভাবে তার ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের নিয়ে তাদের ফার্মের বেড়া ও দরজা ভাঙচুর করে হল্লা চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে গিয়ে তাদের কর্মকান্ড দেখতে পান। রাত ১০টার দিকে দীনবন্ধুর লোকজনের প্রেরিত খবরে তিনি ধানকাটার মেশিনটি দেখতে গেলে এলাকাবাসী দীনবন্ধুর ষঢ়যন্ত্রের কথা উপজেলা চেয়ারম্যন ফারুকের নিকট তুলে ধরলে তিনি তাদের শান্ত করেন। তিনি স্থানীয় তফাজ্জল আলীর অনুরোধে তার বাড়ীতে চা খেতে গেলে দীনবন্ধুর নেতৃত্বে বিপুল পরিমান ভাড়াটে সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তফাজ্জলের বাড়ীতে অতর্কিতে আক্রমন চালিয়ে তফাজ্জুলের পুত্র বদরুল ইসলামকেকে মারপিট করে গুরুতর জখম করে এবং নুরুল ইসলামে দোকানে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়। পরে নুরুলের মাকেও মারপিট করে তার স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয় দুবৃত্তরা। বাড়ীতে প্রচুর লুটপাট চালানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে পায়।
জুড়ী কৃষি ব্যাংক ও এলাকাবাসী সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীনবন্ধু সেন ৫বছর পূর্বে কৃষি জমি বন্ধকের বিনিময়ে ২০ লক্ষ টাকা কৃষি ঋণ গ্রহন করেন। ঋণ গ্রহনকালে পোল্ট্রী খামার করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের ছাড়া পত্র সহ আইনানুগ অনেক অনুষ্টানিকতা পালন না করেই তৎকালীন ব্যাংকের ম্যানেজারসহ কর্মচারীদের অবৈধ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে ম্যানেজ করে তা গ্রহন করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলে ঋনের প্রয়োজনীয় শর্তাবলী পালন করার জন্য ব্যাংক চাপ দিলে দীনবন্ধু তা করতে পারেননি। নিরুপায় হয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দীনবন্ধু সেন কে ব্যাংকের ঋণের সমুদয় অর্থ সুদাসলে পরিশোধের জন্য চাপ প্রয়োগ করলে ব্যাংক ঋণ হতে বাঁচার আর কোন উপায় না পেয়ে ফার্ম ভাংচুরের নাটকসহ সাম্প্রদায়িকতার সৃষ্টি করে তার দায় নিরপরাধ উপজেলা চেয়ারম্যান এম.এ.মুঈদ ফারুকের উপর চাপিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।
জুড়ী উপজেলা যুবলীগ নেতা রাধাকান্ত দাস প্রতিবেদক কে বলেন, দীনবন্ধু সেন পরিকল্পিতভাবে নাটক সৃষ্টি করে নিরপরাধ উপজেলা চেয়ারম্যান সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি করছে।
মামলায় আসামী হওয়া আহমদ আলী বলেন, দীনবন্ধু একজন মাদক সেবী ও মাদক ব্যবসায়ী। এলাকায় নানা ধরনের অসামাজিক কাজে জড়িত অবস্থায় বারবার এলাকাবাসীর হাতে ধরা খেয়ে সে দিগম্বর হয়েছে। তার জঘন্য অপকর্মের প্রতিবাদ করার কারণে আমরা আসামী হয়েছি।
খামার মালিক দীনবন্ধু সেন গনমাধ্যমকে ২ মে বলেন, জুড়ী কৃষি ব্যাংক থেকে ২০ লক্ষটাকা ঋণ নিয়ে খামারটি চালুকরি যা উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার সন্ত্রাসীরা হামলা করে আমাকে পথে বসিয়েছে। বিগত ৫বছর যাবত আমি ঋণের কিস্তি দিয়ে যাচ্ছি। খামার চালুর বয়স ৩ বছর এবং ঋণের বয়স ৫বছর কেন জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
উপজেলা চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযুদ্ধা এম.এ.মুঈদ ফারুকের নিকট বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ঘটনাটি একটি সাজানো নাটক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত হারবেষ্টার মেশিন দেখার জন্য আমি সেখানে যাচ্ছি খবর পেয়ে সন্ত্রসীরা আগে থেকেই ভাংচুর শুরু করে। আমি গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে তফাজ্জলের বাড়ীতে চা খেতে গেলে দীনবন্ধু ও তার ভাড়াটে সন্ত্রসীরা সেখানে গিয়েও হামলা ও লুটপাট করে। পরে পুলিশ আসার খবর পেয়ে সন্ত্রসীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
ঘটনার পর মৌলভীবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিনের নিকট ইউএনও অসীমচন্দ্র বনিকের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডসহ উল্লেখিত ঘটনায় পক্ষপাতিত্ব মূলক আচরেনের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি ২ মে গনমাধ্যমকে বলেন, উপজেলা নির্বাহি অফিসার ও উপজেলা চেয়ারম্যান কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়।অপরাধ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।