বিপন্ন প্রজাতির চিতা বিড়ালকে বাঁচাতে ৩০০কি.মি. পথ পাড়ি
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৩২:২৭,অপরাহ্ন ০৭ জানুয়ারি ২০২১ | সংবাদটি ৭২১ বার পঠিত
ঊষারবাণী ডেস্ক : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থেকে সিলেট হয়ে সুনামগঞ্জের দূরত্ব ১৫৪ কিলোমিটার। আসতে যেতে ৩০৮ কি.মি.। ৩শ কিলোমিটারের বেশি পথ মাড়িয়ে বিপন্ন প্রজাতির একটি চিতা বিড়াল উদ্ধার করেছেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার দুই প্রাণিপ্রেমী সোহেল শ্যাম ও খোকন থৌনাউজম।
জানা যায়, গতকাল বুধবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্যপ্রাণিপ্রেমী সোহেল শ্যাম জানতে পারেন শ্রীমঙ্গল থেকে ১৫৪ কি.মি. দূরে সুনামগঞ্জের জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে এক ব্যক্তি একটি চিতা বিড়ালকে খাঁচায় বন্দি করে রেখেছেন ৬/৭ দিন ধরে। কিন্তু বন্দি রাখলেও তাকে ঠিকমত খাবার না দেওয়ায় সে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি জেনে সোহেল তার দীর্ঘদিনের প্রাণিসেবার সঙ্গী ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার খোকন থৌনাউজমকে জানান। দুইজন মিলে সিদ্ধান্ত নেন বন বিভাগকে জানিয়ে তারা নিজেরাই উদ্ধারে যাবেন।
খোকন থৌনাউজম বলেন, উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা যোগাযোগ করি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরীর সাথে। বন কর্মকর্তা আমাদের ইচ্ছা ও ঘটনা শুনে উৎসাহ দেন এবং সাথে মৌলভীবাজার অফিস থেকে বন বিভাগের ৪ জন প্রতিনিধি দেন। ৬ জন মিলে সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। সুনামগঞ্জ থেকে যুক্ত হন বন বিভাগের আরেকজন স্থানীয় স্টাফ। সবাই মিলে চিতা বিড়াল উদ্ধার করতে গিয়ে দেখি এর বয়স ৬/৭ মাস হবে। খাঁচার ভেতর ভাত দিয়ে রাখা হয়েছে। মাংসাশী প্রাণি তাই এসব খাবারে অভ্যস্ত না থাকায় সে অসুস্থ হয়ে গেছে। চিতা বিড়ালটি উদ্ধার করে সেবা করে সুস্থ করার উদ্দেশ্যে শ্রীমঙ্গল নিয়ে আসি মধ্যরাতে। রাস্তায় বিড়ালকে কোয়েল পাখি খেতে দেওয়া হয়। বর্তমানে বিড়ালটি লাউয়াছড়ার জানকিছড়া রেসকিউ সেন্টারে আছে।
সোহেল শ্যাম বলেন, বিড়ালটি উদ্ধার করতে পেরে আমরা আনন্দিত। আমরা জানতে পেরেছি এই বিড়ালের একজন সঙ্গী ছিল যাকে গ্রামবাসী পিটিয়ে মেরে ফেলেছে এবং একে বন্দি করে রাখে। আমরা বন বিভাগের সহযোগিতায় সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলে লাউয়াছড়া বনে অবমুক্ত করে দেব। লাউয়াছড়া বনে এমন বিড়াল আমি দেখেছি তাই এই বিড়ালটি সেখানে সঙ্গী পাবে।
দুই যুবকের এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয় উল্লেখ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয়ক আ স ম সালে সুহেল জানান, এই শীতের দিনে ৩০০ কি.মি. পাড়ি দিয়ে স্বেচ্ছায় যারা যেতে পারে তাদের প্রাণিপ্রেম আমাদের জন্য উদাহরণ। এমন কিছু মানুষের হাত ধরেই বন্যপ্রাণিরা রক্ষা পাবে।
এ বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এই দুই যুবকের প্রাণিপ্রেম প্রশংসনীয়। তারা আমাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে আমরাও করেছি। বন বিভাগের লোকজন তাদেরকে সাথে নিয়েও গেছে। এভাবে বন বিভাগ আর সাধারণ মানুষ মিলেমিশে কাজ করলে এই দেশের বন্যপ্রাণী রক্ষা করা সহজ।
তিনি আরও জানান, বিড়ালটি বর্তমানে অসুস্থ আছে তাকে কয়েকদিন সেবা দিয়ে সুস্থ করে বনে অবমুক্ত করা হবে।