করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে মারা যান একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা, গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
একুশে পদক ও ভাসানী পদকপ্রাপ্ত এই শিল্পীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, “ফকির আলমগীরের মৃত্যুতে দেশের সঙ্গীত অঙ্গনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো তা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। তার গান তরুণ প্রজন্মের মাঝে দেশপ্রেমের নবজাগরণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।”
আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার শোকবার্তায় বলেন, “এ দেশের সংগীতাঙ্গনে, বিশেষ করে গণসংগীতকে জনপ্রিয় করে তুলতে তার ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
ফকির আলমগীরের জন্ম ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেলার ভাঙা থানার কালামৃধা গ্রামে। কালামৃধা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে স্নাতক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেন। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ফকির আলমগীর জড়িয়ে যান বাম ধারার ছাত্র রাজনীতিতে। সেই সূত্রে ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে তার গান আর সংগ্রামের জগতে প্রবেশ। ঠিক তার পরপরই এল ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সেই উত্তাল সময়। গানের শিল্পী ফকির আলমগীর তাতেও কণ্ঠ মেলালেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যোগ দিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে।
ফকির আলমগীর বলেছিলেন, সাতই মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুনেই তিনি যুদ্ধে গিয়েছিলেন। তাঁর মতে “এটা শুধুমাত্র কোনো ভাষণ নয়। এর মধ্যে যুদ্ধের নির্দেশ ছিল, রণকৌশল ছিল। ততদিনে তো গেরিলা যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। তার ভাষণ শুনেই আমি যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলাম।”
ফকির আলমগীরের বয়স যখন ২১ বছর। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে কলকাতার নারিকেল ডাঙায় শরণার্থী শিল্পী গোষ্ঠীতে যোগ দেন তিনি। সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত এম এ মান্নান ছিলেন সেই সংগঠনের দলনেতা। সেখানে ফকির আলমগীরের সহশিল্পী হিসেবে ছিলেন তিমির নন্দী, নাট্যকার-অভিনেতা মামুনুর রশীদসহ আরও অনেকে।