আইন মেনেই ফাঁসি হয়েছে : অ্যাটর্নি জেনারেল এ.এম.আমিন উদ্দিন
প্রকাশিত হয়েছে : ১:১১:১৬,অপরাহ্ন ০৫ নভেম্বর ২০২১ | সংবাদটি ৬২০ বার পঠিত
সুপ্রীমকোর্ট প্রতিনিধি : এটর্ণি জেনারেল এ.এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছেন, আমি খুঁজ নিয়ে দেখলাম, আসামী জেলখানা থেকে যে আপীল করেছিলেন সেটি ছিলো জেল আপীল। তিনজন বিচারপতি সে আপীল শুনানী করে ২০১৬ সালের১৫ নভেম্বর রায়ের মাধ্যমে তা খারিজ করে দেন। কিন্তু তিনি আরও একটি আপীল করেন, যেটি গতকাল বুধবার কার্য তালিকায় ছিলো। সংবিধান সংশোধনের ফলে লিভ টু আপীলের শুনানী হয়না। ওই আপীলটিই ওখানে ছিলো।
বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টে তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, উনার (আসামির) আইনজীবীর উচিত ছিল দুটি আপিল একসঙ্গে শুনানি করা, বা আদালতের দৃষ্টিতে নিয়ে আসা। যেহেতু তারা দৃষ্টিতে আনেননি, তাই ওনার যে আপিল ছিল তা সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্টে শুনানি হয়ে ডিসমিসড হলো। এরপর তিনি (আসামি) রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করলেন, সেটিও ডিসমিসড হলো। ওনার আপিল এবং প্রাণ ভিক্ষার আবেদন খারিজ হওয়ার পরে স্বাভাবিকভাবে দণ্ড কার্যকর করা হলো। যেহেতু এই আপিলটা আলাদাভাবে করা হয়েছে, ট্যাগ করা হয়নি, এ কারণে রয়ে গেছে। বিচার তো হয়ে গেছে। ওনার আইনজীবীরা শুনানি করেছেন, আদালত সব কিছু শুনে বিচার করে খারিজ করে দিয়েছেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, আমাদের দেশে তো এখনো অ্যানালগ সিস্টেম। এখনো তো ডিজিটাল হয়নি যে একটা দিলেই সব চলে আসবে। আমি মনে করি, আইনজীবীদের দায়িত্ব হচ্ছে আদালতের নজরে নিয়ে আসা যে, এ আপিলের সঙ্গে আরও একটি আপিল আছে। আমরা যখন রিভিউ শুনানি করি তখন দেখি প্রতিটির ভেতর সমস্যার সম্মুখীন হই। দেখা যাচ্ছে যে, আপিল আসে না, তখন বলি সময় দেন সাত দিন, খুঁজে বের করতে হবে। আশা করি, এখন যেহেতু ডিজিটালাইজড হয়ে যাচ্ছে, হয়তো এই সমস্যাগুলো থাকবে না। সব গুনাগুন বিচার করে আপিলে রায় দিয়েছেন। এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একদম যথাযোগ্য নিয়ম অনুসারে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। প্রতিটি ধাপ মেনেই কাজ করা হয়েছে। আমাদের জানা মতে তাদের কোনো আপিল আমাদের কাছে বা কারাকর্তৃপক্ষের কাছে পেনডিং ছিল বলে জানা ছিল না।
এছাড়া দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের কাছে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দাবি করেন, যশোরে আপিল নিষ্পত্তির আগে ফাঁসি কার্যকরের ঘটনা সঠিক নয়।
জেল আপিল শুনানি ও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা নাকচের পরই তাদের দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
দেশে যে কোনো আসামির ফাঁসি কার্যকরের আগে রায় অনুমোদন নিতে হয় হাইকোর্টের। এরপর আপিল হলে তা নিষ্পত্তি হতে হয়। তারপর রিভিউ করার বিষয়ও রয়েছে। কিন্তু যশোরে মোকিম ও ঝডু নামক দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে ফেলা হয়েছে আপিল বিভাগে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থাতেই। ১৬ নভেম্বর ২০১৭ সালে যশোর কারাগারে তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
ঘটনা ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন। চুয়াডাঙ্গায় খুন হন ইউপি মেম্বার মনোয়ার হোসেন। এ ঘটনায় ২০০৮ সালে ১৭ এপ্রিল মোকিম, ঝডুসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড দেন। ২০১৩ সালে মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসি বহাল রাখেন হাইকোর্ট। এরপর আপিল করে এই দুই অসহায় পরিবার। কিন্তু তারপর আর কেউ খোঁজ রাখেনি।
৩ নভেম্বর মামলাটি শুনানির জন্য আসে আপিল বিভাগের কার্যতালিকায়। এরপর আসামির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন মামলার আইনজীবী হুমায়ুন কবীর। তখনই জানা যায়, ফাঁসি কার্যকর হয়েছে তাদের। এ অবস্থায় তাদের আইনজীবীর মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার পাশাপাশি এমন ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাইল পরিবার।
ব্রিটিশ শাসনের সময় ওয়ারেন হেস্টিং যখন উপমহাদেশ শাসন করছিলেন তখন এমন একটি ঘটনা ছিল। কিন্তু স্বাধীন ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে আপিল চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হওয়ার আগে ফাঁসি কার্যকরে নজির নেই।
এ ঘটনায় আগামী সপ্তাহে আপিল শুনানি হবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে।