ফুটবলের মাধ্যমে বাংলাদেশ-আর্জেন্টিনা সম্পর্ক নতুন উচ্চতায়
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৪৮:০৫,অপরাহ্ন ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ | সংবাদটি ২৫১ বার পঠিত
সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রতি এক ধরনের আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে আর্জেন্টিনার গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে। এর মূল কারণ বিশ্বকাপ ফুটবলে আর্জেন্টিনার প্রতি বাংলাদেশিদের ব্যাপক সমর্থন। চলতি বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার ম্যাচগুলোতে জয়, বিশেষ করে লিওনেল মেসির সব কটি গোলের পর ঢাকায় সমর্থকদের বিপুল উদযাপনের ভিডিও কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তার সূত্র ধরে গত সপ্তাহখানেক ধরে আর্জেন্টাইনদের মধ্যে বাংলাদেশের, বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতি সমর্থন জানাতে দেখা গেছে সামাজিক মাধ্যমে। এরপরই আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়াগো কাফিয়েরো একটি টুইট করে জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে তারা নতুন করে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে যাচ্ছেন।
আর্জেন্টাইন পররাষ্ট্রমন্ত্রী টুইটটি করেছিলেন ১০ ডিসেম্বর, যেদিন বিশ্বকাপ ফুটবলের কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে দিয়েছিল লিওনেল মেসির দল।
বাঙালির ফুটবলপ্রীতি বেশ পুরোনো, সে মুগ্ধতা এবং ভালোবাসা শুরুতে মূলত লাতিন ফুটবলের দিকে ঝুঁকে ছিল। ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলে আর জিকোর নাম মাঠ ছাড়িয়ে এক সময় বাঙালির মুখে মুখে ফিরত। ১৯৮৬ সালে সে ভালোবাসা নতুন ঠিকানা পেল। বিশ্বকাপ জয়ের সঙ্গে সঙ্গে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মারাদোনা যেন মুহূর্তে পরিণত হন বাংলাদেশি মানুষের নতুন ফুটবল ঈশ্বরে। মারাদোনার প্রতি ভালোবাসা আর আর্জেন্টিনাকে সমর্থন যেন সমার্থক হয়ে উঠে। এখনো লিওনেল মেসির দলের প্রতি একইরকম সমর্থন আছে বাংলাদেশের ভক্তদের। আর্জেন্টিনার সমর্থনে প্রতি বিশ্বকাপ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় মিছিল হয়, আর্জেন্টিনার হাজার হাজার পতাকা বিক্রি হয় দেশ জুড়ে।
এই যে হাজার হাজার মাইল দূরের একটি দেশের জন্য বাংলাদেশের মানুষের এই ভালোবাসা, তা যেন ডিসেম্বর মাসের শুরুতেই প্রথম স্বীকৃতি পেল আর্জেন্টিনার কাছে।
সান্তিয়াগো কাফিয়েরো টুইটে পরমাণু অস্ত্রের অপসারণ-সংক্রান্ত জাতিসংঘের চুক্তি পর্যালোচনা বিষয়ক সম্মেলনে আগস্ট মাসের ১০ তারিখে তোলা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। লিখেছেন, বাংলাদেশে ১৯৭৮ সাল থেকে বন্ধ আর্জেন্টিনার দূতাবাস পুনরায় চালু করার কথা ভাবছে আর্জেন্টিনা। ঐ পোস্টটি আড়াই হাজারের বেশি বার রিটুইট করা হয়েছে। মন্তব্য করেছেন প্রায় দেড় হাজার মানুষ, যেখানে দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে নানা প্রশ্ন করেছেন অনেকে। এক প্রশ্নের জবাবে কাফিয়েরো লিখেছেন, ২০২১ সালে আর্জেন্টিনা থেকে ৮৭৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে বাংলাদেশে। যা বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার পণ্য রপ্তানির ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। আরেক প্রশ্নের জবাবে কাফিয়েরো লিখেছেন, দূতাবাস চালুর ব্যাপারে কাজ শুরু হয়েছে চলতি বছরের এপ্রিলে।
আর্জেন্টিনা ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ থেকে দূতাবাস গুটিয়ে নেয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, ঐ সময় দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যিক সম্পর্ক খুব জোরালো ছিল না। এখন আর্জেন্টিনাতেও বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই। ১৯৯২ সালে সরকারি কৃচ্ছ্রসাধনের অংশ হিসেবে বুয়েন্স আইরেসসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় এক ডজন বৈদেশিক মিশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
ব্রাজিলে বাংলাদেশের দূতাবাস আছে, এতদিন পর্যন্ত সেখান থেকেই আর্জেন্টিনার সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে আসা হচ্ছিল।
নতুন করে আর্জেন্টিনার দূতাবাস খোলার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, এটা অসাধারণ, কীভাবে স্পোর্টস দুটো দেশকে কাছাকাছি নিয়ে আসে।
তিনি জানিয়েছেন, নতুন করে বাংলাদেশে দূতাবাস খোলার আলোচনা শুরু হয়েছে কিছুদিন আগেই। কিন্তু আর্জেন্টাইন ফুটবলের প্রতি বাংলাদেশি ভক্তদের সমর্থন দেখার পর বিষয়টি সামনে আসল। বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার এত সমর্থনের বিষয়টি সামনে আসার পর আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আইরেসে থাকা দেড়শো জনের মতো বাংলাদেশি স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক গুরুত্ব পাচ্ছেন।
সেখানকার টেলিভিশন চ্যানেলে এখন বাঙালি খাবার, বিশেষ করে বিরিয়ানি রান্নার রেসিপি দেখানো হয়েছে গত দুই সপ্তাহের মধ্যে। ফেসবুকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমর্থনে ‘ফ্যানস আর্হেন্তিনোস দে লা সিলেকসিয়ন দে ক্রিকেট দে বাংলাদেশ’ নামে খোলা হয়েছে একটি গ্রুপ, বাংলায় যার অর্থ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের আর্জেন্টাইন সমর্থক। আর্জেন্টিনার স্থানীয় সংবাদপত্রেও গত কয়েক দিন যাবত বাংলাদেশি ফুটবল ভক্তদের নিয়ে লেখা হয়েছে।