শিরোনাম

দেশে আসলেন হামজা চৌধুরী

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৩ দিন আগে
ছবি : সংগৃহীত

অবশেষে শেষ হলো প্রতীক্ষার প্রহর। দেশের মাটিতে পা রেখেছেন ইংল্যান্ডপ্রবাসী ফুটবলার হামজা চৌধুরী। তার আগমনে সিলেটের এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকাল থেকেই ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। ফুটবলপ্রেমীরা তাকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগানে মুখর ছিলেন, “ওয়েলকাম টু মাদারল্যান্ড, হামজা।” দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন।

গত ডিসেম্বরে ফিফার অনুমোদন পাওয়ার পর থেকেই হামজা চৌধুরীকে ঘিরে বাংলাদেশের ফুটবল অঙ্গনে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। এরপর জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ভারত ম্যাচের জন্য ঘোষিত প্রাথমিক দলে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করেন, যা এই উচ্ছ্বাস আরও বাড়িয়ে তোলে। এখন চূড়ান্ত দলে তার জায়গা প্রায় নিশ্চিত।

শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে খেলার পর সরাসরি সিলেটের উদ্দেশে বিমানে ওঠেন হামজা। বাংলাদেশ সময় রাত ২টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের ম্যানচেস্টার-সিলেট ফ্লাইটে যাত্রা শুরু করে, শেষ পর্যন্ত আজ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তিনি সিলেটে পৌঁছান। এরপর তিনি রওনা হন তার গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের স্নানঘাটের পথে।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাতজন নির্বাহী সদস্য বিমানবন্দরে হামজা ও তার পরিবারকে স্বাগত জানান। ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার পর তাকে বরণ করে নেওয়া হয়। তার সঙ্গে ছিলেন বাবা মোরশেদ দেওয়ান চৌধুরী, মা, স্ত্রী ও সন্তানরা। যদিও এর আগে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন, তবে এবার তার সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ কারণ, প্রথমবারের মতো তিনি দেশের জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে এসেছেন।

সিলেট ব্যুরো জানায়, হামজাকে বরণ করতে স্থানীয় ক্রীড়ানুরাগী ও ক্ষুদে ফুটবলাররা বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। তার আগমন উপলক্ষে সিলেট বিমানবন্দর সড়ক ও তার গ্রামের বাড়িতে একাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। সিলেটে আনুষ্ঠানিক কোনো সংবর্ধনা নেই, তবে হবিগঞ্জের বাহুবলে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, হামজার নিরাপত্তার জন্য পুলিশ এসকটের ব্যবস্থা করেছে এবং তাকে সুরক্ষিতভাবে নগরী পার করিয়ে দেওয়া হবে। জেলা পুলিশও সড়কে তার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।

হামজার আগমনকে কেন্দ্র করে স্নানঘাটসহ পুরো হবিগঞ্জ জেলায় উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। তার স্বাগত জানিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে বরণ করতে উন্মুখ হয়ে আছেন।

শান্ত ও ভদ্র স্বভাবের হামজা ফুটবল ক্যারিয়ারে যেমন প্রশংসিত, তেমনি তার গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছেও তিনি প্রিয়। গ্রামবাসীদের জন্য তার অবদানও কম নয়। তিনি তার নিজ গ্রামে একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেখানে এতিম শিশুরা পড়াশোনা করছে। প্রায় ১১ বছর পর তিনি দেশে ফিরেছেন, যা তার পরিবার ও এলাকাবাসীর জন্য বিশেষ আনন্দের বিষয়।

পরিবারের সদস্যরা জানান, ভাত ও গরুর মাংস তার প্রিয় খাবার। দেশি সবজিও তিনি খুব পছন্দ করেন। তার জন্য বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া তিনি রাতে পৈতৃক ঘরেই থাকবেন। স্থানীয় বাসিন্দা সফর আলী বলেন, “আমাদের গ্রামের সন্তান জাতীয় দলে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন—এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। তার আগমন নিয়ে আমরা অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত। তরুণরা তাকে একনজর দেখার জন্য অপেক্ষা করছে। ছোটবেলায় সে যখন বাড়ি আসত, তখন আমিও তার সঙ্গে ফুটবল খেলেছি। ফুটবলের প্রতি তার ভালোবাসা তখন থেকেই ছিল।”

শুধু হামজাই নন, তার বাবা দেওয়ান মোরশেদ চৌধুরী চান, আরও প্রবাসী ফুটবলাররা বাংলাদেশ দলে খেলুন।

আগামীকাল ঢাকায় আসতে পারেন হামজা। এরপর তিনি জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দেবেন। ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে তার অভিষেক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০ মার্চ বাংলাদেশ দল শিলংয়ের উদ্দেশে রওনা দেবে, আর ১৮ মার্চ কোচ কাবরেরা এক সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক ও হামজাকে হাজির করবেন।