শিরোনাম

চীন সফর হবে বহুমুখী

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৬ মাস আগে
চীন সফর হবে বহুমুখী

তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আগামীকাল চীনের রাজধানী বেইজিং যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কূটনীতিকরা বাংলাদেশের ভূরাজনীতি, রোহিঙ্গা সংকট এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সফরকে ‘বহুমাত্রিক’ হিসেবে দেখছেন। সফরে দুই দেশের মধ্যে কমপক্ষে ১৪টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পে চীনের ঋণ ঘোষণা আসতে পারে। এছাড়া, বাংলাদেশ বেইজিংয়ে একটি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করবে, যেখানে ৭০০ কোটি ডলারের তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সফরসূচি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল সোমবার বেইজিং পৌঁছাবেন। মঙ্গলবার চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হবে, বৈঠক শেষে চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষরিত হবে।

পরদিন বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। একই দিনে তিনি চীনের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ঝাও লেজির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, চীন আমাদের বড় উন্নয়ন অংশীদার। এই সফরে উন্নয়ন অভিযাত্রা যেন আরও বেগবান হয়, সেটাই প্রাধান্য পাবে। ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর হবে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা, যা বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফর হবে গেম চেঞ্জার।
কূটনৈতিক সূত্রের খবরে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার প্রাধান্য দেওয়া হবে। এই সফরে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, মুক্তবাণিজ্য চুক্তি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, শিক্ষা, রোহিঙ্গা সংকট, রিজার্ভ সহায়তা প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। সাথেই সাথে বাংলাদেশের অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাড়তি ঋণসুবিধা সম্পর্কেও চর্চা হবে। সড়ক, সেতু ও রেলের বিভিন্ন প্রকল্পে চীনকে পাশে চাইতে হবে বাংলাদেশের। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলির মধ্যে পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ, বরিশাল থেকে পায়রা বন্দর এবং কুয়াকাটা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ, মেট্রোরেল প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত। চীন সফরে মহেশখালী থেকে একটি গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সত্তর প্রকল্পের অর্থায়নের প্রস্তাব দেওয়া হবে। এখানে মহেশখালীর গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের প্রস্তাব জিটুজি তৈরি করতে প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
সূত্রের খবরে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে মোংলা বন্দরের আধুনিকীকরণ, আঞ্চলিক বাণিজ্য ও যোগাযোগের উন্নতির প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার সূচনা দেওয়া হয়েছে। পায়রা সমুদ্রবন্দরের উন্নয়ন প্রক্রিয়াতে চীনের বিনিয়োগ আকর্ষণ করার আশা প্রকাশ করেছে সরকার। এটা জানা গেছে, চীন সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা পায়রা এবং মোংলা সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন অঞ্চলে সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। এছাড়াও রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনের সহায়তা আশা প্রকাশ করা হয়েছে। এই সফরে বাংলাদেশকে ব্রিকসের (ব্রিকস দেশগুলির জোট) অংশীদার করতে চীনের সহায়তা চাওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়াও, বিভিন্ন উন্নয়ন ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্প্রসারণযোগ্য সহযোগিতার মধ্যে উন্নতি সাধার্য করার উদ্দেশ্যে আলোচনা হবে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৬ সালে ঢাকা সফরের সময়ে ২৭টি সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছিল। এই সমঝোতাগুলির মধ্যে সরকারের সঙ্গে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারের অনুদান, ঋণ এবং প্রাইভেট সেক্টরে আরও কিছু সমঝোতার আওতায় মোট ৪০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনে সফরে গিয়েছিলেন এবং একেবারে চীনের সহায়তায় বাংলাদেশের উন্নয়নের পথ প্রস্তুতি হচ্ছে এ সফরে।

এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেইজিংে একটি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করবেন, যা চীনের বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে হবে। এই সম্মেলনে দুই দেশের বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমানোর পথ আলোচনা করা হবে। এছাড়াও, চীন ও বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ১ হাজারের বেশি বিনিয়োগের সুযোগসুবিধা নিয়ে আলোচনা হবে।।

এই বাণিজ্য সম্মেলনের আয়োজনে অংশ নিতে প্রার্থী অনেকগুলি ব্যবসায়িক অধিবেশন, যেমন অর্থ, বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ চাইনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিসিআই), এবং বেইজিংে বাংলাদেশ দূতাবাস যৌথভাবে অংশ নেবে।

  • ঊষারবাণী
  • প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
  •