ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতেই অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যে তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে প্রায় একশো মামলা দায়ের হয়েছে। কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল হওয়ায় ভারতে তার বর্তমান অবস্থানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
বিবিসির তথ্যমতে, ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার বিষয়ে ভারতের সামনে তিনটি সম্ভাব্য পথ রয়েছে।
প্রথমত, শেখ হাসিনার জন্য তৃতীয় কোনো দেশে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যেখানে তিনি নিরাপদে থাকতে পারবেন।
দ্বিতীয়ত, ভারত তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে নিজেদের দেশে রাখার বিষয়টিও বিবেচনা করছে।
তৃতীয়ত, কিছু বিশ্লেষকের মতে, উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি হলে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পুনরুত্থানের চেষ্টা করতে পারে ভারত, কারণ আওয়ামী লীগ এখনও একটি শক্তিশালী দল হিসেবে রয়েছে এবং শেখ হাসিনা দলটির সর্বোচ্চ নেত্রী।
তবে, শেখ হাসিনা যদি ভারতে থেকে যান, তাহলে তা ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। ফলে তৃতীয় কোনো দেশে তার আশ্রয়ের ব্যবস্থা করাকে যুক্তিযুক্ত সমাধান হিসেবে দেখছেন তারা।
বিবিসি আরও জানিয়েছে, বাংলাদেশ যদি ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের অনুরোধ জানায়, তাহলে দিল্লি তা খারিজ করে দেবে। শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্যে যাওয়ার প্রস্তাব বাতিল হওয়ার পর, ইউএই, সৌদি আরব এবং কাতারসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আশ্রয় প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে, এসব আলোচনায় তেমন অগ্রগতি হয়নি।
এদিকে, শেখ হাসিনা নিজে এখনও কোনো দেশে আশ্রয়ের জন্য লিখিত আবেদন করেননি। তার হয়ে ভারত সরকারই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে। প্রয়োজন হলে ভারত তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে দ্বিধা করবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, এমন ক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপর এর প্রভাব নিয়ে ভারতের চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন, যেমনটি দালাই লামাকে আশ্রয় দেওয়ার পর ভারত-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে হয়েছিল।
দিল্লির আইডিএসএ-র সিনিয়র ফেলো পট্টনায়ক উল্লেখ করেছেন যে, শেখ হাসিনার পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ানো আন্দোলনে ভারত-বিরোধী সেন্টিমেন্টও ছিল। এই পরিস্থিতিতে ভারত যদি তাকে আশ্রয় দেয়, তবে তা বাংলাদেশে ভুল বার্তা দিতে পারে এবং ভারত-বিরোধী মনোভাবকে আরও উসকে দিতে পারে।