শিক্ষা খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করে মানোন্নয়নের জন্য বড় ধরনের পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পরিকল্পনা কমিশন প্রথমবারের মতো শিক্ষাখাতের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে কর্মপরিকল্পনার খসড়া তৈরি করেছে, যা শিগগিরই অনুমোদিত হবে। গত তিন অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও শিক্ষার মান উন্নত হয়নি এবং নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি এখনো বিরাজমান।
শিক্ষা খাতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দুর্নীতি ও অনিয়মগুলো প্রায় সর্বত্রই দৃশ্যমান। মন্ত্রণালয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নথি নিষ্পত্তি না করা এবং দরপত্র প্রক্রিয়ায় অনিয়ম থেকে শুরু করে নানা পর্যায়ে দুর্নীতি ছড়িয়ে আছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অতিরিক্ত ফি আদায়, কোচিং বাণিজ্য, এবং গাইড বইয়ের অবৈধ ব্যবসা ব্যাপক। এছাড়া, শিক্ষা বোর্ডের কর্মীদের জাল সনদ তৈরি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের অনিয়ম, এমনকি শিক্ষার প্রতিটি স্তরে কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতি দেখা যায়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে শিক্ষার মান কমছে। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য এবং ট্রেজারার না থাকায় সঠিকভাবে প্রশাসনিক কাজ হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কার্যকর তদারকির অভাবেও পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। বর্তমানে ৩৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো উপাচার্য নেই, আর ৩১টিতে কোনো ট্রেজারার নেই।
পরিকল্পনা কমিশন শিক্ষায় বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য আলাদা অবকাঠামোর অভাব। প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার এখনো ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ, যা উদ্বেগজনক। এছাড়া, অভিভাবকদের বিদ্যালয়ের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত না হওয়াও মানসম্মত শিক্ষার অন্তরায়।
মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ভর্তি হার কম এবং বিভাগভিত্তিক শিক্ষার্থীদের ভর্তির ব্যবধান অন্যতম চ্যালেঞ্জ। উচ্চশিক্ষায় একই শিক্ষক দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা দেওয়ার ফলে শিক্ষার মানে প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে বিজ্ঞানের শিক্ষকদের সংকট প্রকট। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানসম্মত গবেষণার অভাব এবং কারিগরি শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ কম হওয়া এ খাতে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আগের সরকারের সময়ে শিক্ষার মান অনেক নিম্নমুখী হয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে উন্নতি করেছে, আমাদের দেশেও সেরকম পরিকল্পনা করা হচ্ছে। শিক্ষাবিদদের আশা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিক্ষার মানোন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন তার ফেসবুক পোস্টে মন্তব্য করেন, শিক্ষাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মানহীন শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে সমাজে শিক্ষকদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানো, রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা এবং বিভিন্ন তদবিরমূলক কার্যক্রমের ফলে শিক্ষার মানহীনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।