শিরোনাম

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালানো ৭৪৭ পুলিশ চিহ্নিত

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ মাস আগে
ছবি : সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকা এবং চট্টগ্রাম শহরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনের জন্য গুলি চালানো পুলিশ সদস্যদের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত অন্তত ৭৪৭ জন পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করা হয়েছে।

গত ১৮ থেকে ২১ জুলাই, কনস্টেবল থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদমর্যাদার এসব কর্মকর্তারা গুলি চালান। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা এই তালিকা যাচাই-বাছাই করছে।

খবরে বলা হয়, পুলিশের করা মামলাগুলোর এজাহার পর্যালোচনার মাধ্যমে গুলি চালানো সদস্যদের শনাক্ত করা হয়েছে। তারা গুলি চালানোর ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম অনুসরণ করেননি। ট্রাইব্যুনাল বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছে।

১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ডাকে। ওই দিন রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের ৩৫৭ সদস্য প্রায় ৮ হাজার প্রাণঘাতী গুলি চালান, যাতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

গতকাল (১ নভেম্বর) পুলিশের আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম জানান, অতিরিক্ত বলপ্রয়োগকারী সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বেশ কয়েকজন এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

ছাত্র আন্দোলনে ১৮ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হন। ঢাকার বিভিন্ন থানায় ১১৫টি মামলা দায়ের হয়। ‘লয়ার ফর এনার্জি, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ সংগঠন এই মামলাগুলোর এজাহার পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে গুলি চালানো পুলিশ সদস্যদের তালিকা তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুলিশের ৭৪৭ জন সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোট ৭৫৪ সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কনস্টেবল ৪৬৭ জন, এএসআই ১০৬ জন, এসআই ১৫৭ জন, পরিদর্শক দুইজন এবং একজন এএসপি রয়েছেন। বাকিরা নায়েব, সুবেদার ও চালক।

১৮ থেকে ২১ জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশের ১২টি ও চট্টগ্রাম মহানগরের ১০টি থানায় এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। পুলিশ মোট ২৬ হাজার ২৩টি গুলি ছোড়ে, যার মধ্যে প্রাণঘাতী গুলি ছিল ১৬ হাজার ৯১২টি।

তদন্ত সংস্থার সূত্র জানায়, শটগান, পিস্তল, চায়নিজ রাইফেল, এসএমজি ও এলএমজি ব্যবহার করে গুলি চালানো হয়েছে। ১২০ জন নিহতের মধ্যে ৯৭ জনের শরীরে প্রাণঘাতী গুলির চিহ্ন ছিল।

পুলিশ জানায়, আত্মরক্ষার্থে গুলি চালানো হয়েছে। তবে পুলিশ সদস্যরা ওপরের নির্দেশ ছাড়া গুলি চালাতে পারেন না, বলেন এক সদস্য। পুলিশের প্রবিধান অনুযায়ী, আত্মরক্ষা, বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ এবং গ্রেপ্তার কার্যকর করতে পুলিশ গুলি চালাতে পারে। তবে অভিযোগ উঠেছে, এসব নিয়ম মানা হয়নি।

সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেন, লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে গুলি করা পুলিশের কাজ নয় এবং এ ক্ষেত্রে অপেশাদার আচরণ করা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের একজন তদন্ত সদস্য জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ত পুলিশের কয়েক শ সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।

জুলাই-আগস্টের ঘটনায় ইতোমধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের সাবেক উপকমিশনার জসীম উদ্দিন মোল্লা এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শহীদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক বলেন, পুলিশ নিরস্ত্র জনতার ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে না। তদন্ত সংস্থা বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে এবং ট্রাইব্যুনাল বিচার নিশ্চিত করবে।