আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি এবং চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে আলোচনার জন্য একটি প্রতিনিধি দল আগামী ৪ ডিসেম্বর ঢাকায় আসবে।
এই মিশনটি নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের অনুরোধে অতিরিক্ত ৩০০ কোটি ডলার সহায়তার বিষয়টিও আলোচনা করবে। মিশনটি ঢাকায় কার্যক্রম শেষে ওয়াশিংটনে ফিরে গিয়ে আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে। সেই প্রতিবেদনের ওপরই নির্ভর করবে চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড় ও বাড়তি সহায়তা প্রদান।
জানা গেছে, এবারের মিশনটি বেশ বড় আকারের হবে। অন্তত ১০ সদস্যের এই দলটি ১৪ দিন বাংলাদেশে অবস্থান করবে। মিশনের নেতৃত্বে থাকবেন আইএমএফের গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রোইকোনমিকসের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও। এর আগেও তিনি আইএমএফ মিশনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
মিশনটি বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনসহ (বিপিসি) বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করবে।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির অতিরিক্ত ৩০০ কোটি ডলার সহায়তার জন্য আবেদন করেছিল। প্রথমে আইএমএফ এ বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিলেও পরে এটি স্থগিত রাখে। এ নিয়ে আইএমএফের বার্ষিক সভার সময়ও আলাপ হয়েছে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
উল্লেখ্য, বর্তমানে আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪৭০ কোটি ডলারের একটি ঋণ কর্মসূচি চলমান রয়েছে, যা ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি অনুমোদন পেয়েছিল। এরই মধ্যে তিনটি কিস্তি ছাড় হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড় হওয়ার কথা। তবে এর আগে তৃতীয় কিস্তির শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে এবং বাড়তি সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হবে।
সরকার ইতোমধ্যে আইএমএফের শর্ত মেনে মুদ্রানীতি কঠোর করেছে। সুদের হার বৃদ্ধি, ডলারের দাম সমন্বয়, এবং খেলাপি ঋণের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে সংজ্ঞায়নের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়েছে, যা মুডিসের র্যাঙ্কিংয়ের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে নিজস্ব ব্যাখ্যা দিয়েছে। ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের সুযোগ কাজে লাগানো হচ্ছে।
খেলাপি ঋণ নিয়ে বক্তব্যে সোহেল আর কে হোসেন বলেন, সংস্কার পদক্ষেপের কারণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ঠিক, তবে অতীতে সুশাসনের অভাবে যে টক্সিক সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছিল, তা এখন বন্ধ হয়েছে। ভবিষ্যতে আর্থিক খাতে নিয়ম লঙ্ঘন যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করার প্রতি নীতিনির্ধারকেরা গুরুত্ব দিচ্ছেন।