শিরোনাম

আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা : ২০ আসামিরই মৃত্যুদণ্ড বহাল

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ দিন আগে
ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সব আসামির সাজা বহাল রেখেছে হাইকোর্ট।

রোববার (১৬ মার্চ) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

রায় ঘোষণার সময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে বি রুমি, জহিরুল ইসলাম সুমন, নূর মোহাম্মদ আজমী এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার সুমাইয়া আজিজ। অপরদিকে, আসামিদের পক্ষে আইনজীবী মাসুদ হাসান চৌধুরী ও আজিজুর রহমান দুলু উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আদালতে আবরার ফাহাদের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, এদিন সকাল ১১টায় হাইকোর্ট বেঞ্চে আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের রায় পড়া শুরু হয়। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান রায় পাঠ করেন।

এই মামলার শুনানি শেষ হয় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি। এর আগে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হয়। গত বছরের অক্টোবরে মামলাটির দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান তত্ত্বাবধান করেন।

২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি আবরার হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স ও মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে প্রেরিত ৬ হাজার ৬২৭ পৃষ্ঠার মামলার নথিপত্র হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেওয়া হয়। এরপর আসামিরা দণ্ডাদেশ বাতিলের আবেদন জানিয়ে ফৌজদারি আপিল ও জেল আপিল করেন। আইন অনুযায়ী, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা কার্যকরের আগে উচ্চ আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন হয়।

বিচারিক আদালতের রায়

২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এই মামলার রায় ঘোষণা করেন, যেখানে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা

বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার অপু, সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, মুনতাসির আল জেমি, মোজাহিদুর রহমান, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, এহতেশামুল রাব্বি তানিম, শামীম বিল্লাহ, মাজেদুর রহমান মাজেদ, খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর, মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান, এস এম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, মিজানুর রহমান, শামছুল আরেফিন রাফাত, মুজতবা রাফিদ ও এস এম মাহামুদ সেতু।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা

বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না, আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা, সদস্য আকাশ হোসেন ও মোয়াজ আবু হোরায়রা।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে। রাত ৩টার দিকে হলের সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ।

মাত্র ৩৭ দিনের তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করেন।

অবশেষে, দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে উচ্চ আদালত আজ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সব আসামির সাজা বহাল রাখার রায় প্রদান করেছে।