শিরোনাম

ইটভাটা মালিকদের হয়রানি করলে দেশ অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৪ মাস আগে
ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, যদি ইটভাটা মালিকদের হয়রানি বন্ধ না করা হয়, তবে ঈদের পরে দেশব্যাপী আন্দোলনের মাধ্যমে সারা দেশ অচল করে দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনের নেতারা।

সংগঠনের সভাপতি ফিরোজ হায়দার খান বলেন, “ইট শিল্পের সঙ্গে প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক-কর্মচারী জড়িত। বিভিন্ন সময় অভিযানের নামে ইটভাটাগুলোতে হানা দিয়ে জরিমানা ও কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অন্যায়। যদি এই হয়রানি বন্ধ না হয়, তবে ঈদের পরে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ অচল করে দেওয়া হবে।”

লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, গত ৩৫-৪০ বছর ধরে প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ইটভাটা মালিকরা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন এবং দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। পরিবেশ দূষণ রোধে সরকার নির্দেশিত আধুনিক প্রযুক্তির জিগজাগ ভাটা স্থাপন করায় দূষণের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বর্তমান জরিপ অনুযায়ী, ইটভাটার কারণে মাত্র ৫-১০ শতাংশ দূষণ হয়, যেখানে জৈববস্তু পোড়ানোতে ৪০ শতাংশ এবং যানবাহনের ধোঁয়ায় ৫০ শতাংশ দূষণ হয়।

তিনি আরও বলেন, ইট শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ৫০ লাখ শ্রমিক ও তাদের পরিবারসহ প্রায় ২ কোটি মানুষের জীবিকা এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। এ ছাড়া, ইটভাটাগুলোর বিপরীতে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ রয়েছে। ইটভাটা বন্ধ হলে এসব ঋণ অনাদায়ী থেকে যাবে, যা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।

সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আন্তরিক হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে জিগজাগ ইটভাটার সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তারা আশা করেন, প্রধান উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ সমস্যার যৌক্তিক সমাধান হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জিগজাগ ইটভাটা বৈধ করার বিষয়ে ৬ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়:

১. ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩-এর ৮(৩) (ঙ) ধারায় নিষিদ্ধ এলাকার দূরত্ব ৪০০ মিটার এবং বন সংলগ্ন এলাকার দূরত্ব ৭০০ মিটার নির্ধারণ করে লাইসেন্স প্রদানের বিধান চালু করতে হবে।

  1. জিগজাগ ইটভাটার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের হয়রানি বা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা যাবে না।

৩. কোনো ইটভাটা বন্ধ করার আগে সরকারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।

৪. পরিবেশগত ছাড়পত্র, ডিসি লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিস লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাগজপত্র নবায়নের ক্ষেত্রে ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির প্রত্যয়নপত্র বাধ্যতামূলক করতে হবে।

৫. ইটভাটাকে একটি শিল্প হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে।

৬. ইটভাটা পরিচালনার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।

সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এসব দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামী ৪ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এবং ১১ মার্চ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। এছাড়া, ঈদের পর ঢাকায় মহাসমাবেশ করে পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মোনায়েম হোসেন রাজা, সিনিয়র সহ-সভাপতি সদরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, যুগ্ম মহাসচিব নুরুজ্জামানসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।