কারা হেফাজতে ইমাম রইস উদ্দিনের মৃত্যুতে এনসিপির নিন্দা ও প্রতিবাদ

গাজীপুর মহানগরের পূবাইল এলাকায় মসজিদের ইমাম মাওলানা রইস উদ্দিনকে অমানবিকভাবে নির্যাতনের পর কারাগারে মৃত্যুবরণের ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে। রোববার (৪ মে) রাতে দলের যুগ্ম সদস্য সচিব সালেহ উদ্দিন সিফাতের স্বাক্ষরে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ অবস্থান জানায় দলটি।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, গত ২৭ এপ্রিল গাজীপুর সিটি করপোরেশনের হায়দারাবাদ এলাকার আখলাদুল জামে মসজিদের খতিব রইস উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে জনরোষের মাধ্যমে ভয়াবহ নিপীড়ন চালানো হয়। তার মাথার চুল কেটে, গলায় জুতার মালা পরিয়ে ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। সেখানে ভোররাতে, আনুমানিক ৪টার দিকে তিনি মারা যান।

এনসিপি জানায়, হেফাজতে থাকা অবস্থায় কারও মৃত্যু কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, যা ন্যায়বিচারের পথে বড় বাধা এবং ব্যক্তি মর্যাদার চরম অবমাননা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইমাম রইস উদ্দিনের মৃত্যুর ছয়দিন পার হলেও তার স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত কাউকেই গ্রেপ্তার করা হয়নি। এনসিপি মনে করে, একজন ব্যক্তি যে অভিযোগেই অভিযুক্ত হোন না কেন, রাষ্ট্র তার জীবন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাধ্য। এ ঘটনায় রাষ্ট্র তার সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। বিচারহীনতা এবং জনরোষে বিচার করার প্রবণতা ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। কোনো অভিযোগের ভিত্তিতে মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে কারও জান-মালের ক্ষতি করা বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটানো কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।

এছাড়াও, এই ঘটনা দেশের কারাগারগুলোর স্বাস্থ্যসেবায় বিদ্যমান অব্যবস্থাপনার ভয়াবহ চিত্র সামনে এনেছে। কারাগারগুলোকে মানবিক না করতে পারলে একটি নতুন ও উন্নত বাংলাদেশ গঠন সম্ভব নয়। পুলিশের অপেশাদার আচরণ এবং এই ঘটনার মাধ্যমে মানবাধিকারের যে চরম লঙ্ঘন হয়েছে, এনসিপি তাকে নিন্দনীয় বলে আখ্যা দিয়েছে।

বিবৃতির শেষাংশে বলা হয়, গণঅভ্যুত্থানোত্তর বাংলাদেশে নাগরিক অধিকার ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে পুলিশি ব্যবস্থার সংস্কার অপরিহার্য। এনসিপি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছে, আইনবহির্ভূত মব ভায়োলেন্স ও রাষ্ট্রীয় অবহেলার ফলে কারা হেফাজতে ঘটিত এই মৃত্যুর নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত পরিচালনা করতে হবে এবং দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দলটি জোরালো দাবি জানিয়েছে।