জুলাই ও আগস্ট মাসে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম আরও কার্যকর ও গতিশীল করতে সরকার একটি দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) ট্রাইব্যুনাল চত্বরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বর্তমানে একটি মাত্র ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। নতুন একটি ট্রাইব্যুনাল গঠিত হলে বিচার প্রক্রিয়া আরও দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে যে আন্দোলন হয়েছিল, তা দমন করতে যেসব মানবতাবিরোধী ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এসব মামলায় বর্তমানে ১৭ জন প্রসিকিউটর দায়িত্ব পালন করছেন। তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রয়েছে ২৪ জন তদন্ত কর্মকর্তা।
প্রসিকিউশন টিমের তথ্যানুসারে, ১০ এপ্রিল পর্যন্ত এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে তিন শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৩৯টি মামলার তদন্ত এখনো চলমান। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে ২২টি ‘মিস কেস’ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে, যেগুলোর আওতায় মোট অভিযুক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ১৪১ জন। এদের মধ্যে ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ৮৭ জন পলাতক রয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র সমাজ আন্দোলনে নামলে তা দ্রুত বিস্তৃত হয়ে জাতীয় পর্যায়ে গণআন্দোলনে রূপ নেয়। হাইকোর্টের একটি রায় ঘিরে এই আন্দোলন আরও উত্তাল হয়ে ওঠে। সেই সময়ের সরকার আন্দোলন দমনে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং রাজনৈতিক সহযোগীদের ব্যবহার করে নৃশংস দমননীতি গ্রহণ করে। এতে বহু হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়।
এই দীর্ঘ আন্দোলনের চাপে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যার মাধ্যমে প্রায় ১৬ বছরের একক দলীয় শাসনের অবসান ঘটে। আন্দোলন দমনে পরিচালিত সহিংসতার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।