যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আজ থেকে কার্যকর হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ কার্যত এক ধরনের বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার মতো। এর প্রভাবে ভারতের গার্মেন্টস শিল্পের অন্যতম কেন্দ্র তিরুপুরে নেমে এসেছে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা।
বিবিসির তথ্যমতে, তিরুপুরের পোশাক কারখানার শ্রমিকদের চোখেমুখে উদ্বেগের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
এন কৃষ্ণমূর্তির একটি তৈরি পোশাক কারখানায় যেখানে সাধারণত ২০০টি সেলাই মেশিন সচল থাকে, এখন সেখানে চলছে মাত্র কয়েকটি।
কারখানা মালিক কৃষ্ণমূর্তি জানান, সেপ্টেম্বরের পর হয়তো কোনো অর্ডারই থাকবে না, কারণ সব ক্রেতা তাদের অর্ডার স্থগিত করেছে। ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। নতুন নিয়োগ পাওয়া ২৫০ কর্মীকে কাজ না দিয়েই বসিয়ে রাখতে হয়েছে। বিশেষত বড়দিনকে কেন্দ্র করে যে বিপুল অর্ডার আসার কথা ছিল, শুল্কের কারণে সেই সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে। স্থানীয় বাজারেই এখন নির্ভর করতে হচ্ছে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে।
তিরুপুর থেকেই প্রতিবছর প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। এখানকার তৈরি জামাকাপড় পৌঁছায় টার্গেট, ওয়ালমার্ট, গ্যাপ, জারার মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের কাছে।
রাফট গার্মেন্টসের মালিক শিবা সুভ্রামানিয়াম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় শার্ট বিক্রি হয় ১০ ডলারে, যেখানে একই ধরনের শার্ট চীন ১৪.২০ ডলার, বাংলাদেশ ১৩.২০ ডলার ও ভিয়েতনাম ১২ ডলারে বিক্রি করে। তার মতে, শুল্ক ৫০ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হলেও প্রতিযোগিতায় ভারত পিছিয়ে পড়বে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারত সরকার কাঁচামালের আমদানি শুল্ক কমিয়েছে এবং নতুন বাজার খুঁজে বের করতে আলোচনাও চালাচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এসব উদ্যোগ খুব বেশি কার্যকর হবে না।
শুধু পোশাক নয়, যুক্তরাষ্ট্রে ভারত হিমায়িত চিংড়ি, রত্ন ও গয়নাও রপ্তানি করে। প্রতি বছর প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের গয়না রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে, যার মধ্যে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে তিন থেকে চার বিলিয়ন ডলারের অর্ডার থাকে। শুল্কের প্রভাবে মার্কিন ক্রেতারা অর্ডার স্থগিত করায় এখন অনেক কারখানা মাসে মাত্র ১৫ দিন চলছে, ফলে হাজার হাজার শ্রমিক চাকরি হারাচ্ছেন। প্রায় ৫০ লাখ মানুষের জীবিকা নির্ভর এই খাতের উদ্যোক্তারা এখন যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার বাজার ধরার চেষ্টা করছেন।
এশিয়া গ্রুপ অ্যাডভাইজরির বিশ্লেষক গোপাল নাদ্দুরের মতে, ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন বাণিজ্যচুক্তি হবে কি না তা পুরোপুরি নির্ভর করছে ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর। তবে ভারতের নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়ীদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পাশাপাশি বিকল্প আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের দিকেও মনোযোগী হতে হবে।