শিরোনাম

মালয়েশিয়ায় ৭১ বাংলাদেশি গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১৫ ঘন্টা আগে
ছবি : সংগৃহীত

মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসী দমন অভিযানে আবারও বাংলাদেশিসহ ১৭৬ জনকে গ্রেফতার করেছে ইমিগ্রেশন পুলিশ। এ অভিযানের অংশ হিসেবে কুয়ালালামপুরের বুকিত বিনতাং এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়, যা শহরের অন্যতম ব্যস্ত ও জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। বুধবার, ২২ জানুয়ারি স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সোয়া ৭ টায় এই অভিযান শুরু হয়, যেখানে দেশি-বিদেশি বেশ কিছু অভিবাসীকে অবৈধভাবে অবস্থান করায় আটক করা হয়।

কুয়ালালামপুরের অভিবাসন বিভাগ জানায়, তারা স্থানীয় জনগণের অভিযোগ এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করেছে। স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে, কুয়ালালামপুরের অভিবাসন বিভাগের পরিচালক ওয়ান মোহাম্মদ সৌপি ওয়ান ইউসুফ জানান, শহরের বুকিত বিনতাং এলাকা, বিশেষ করে জালান আলোর আশেপাশে, বিদেশি ও স্থানীয় পর্যটকদের উপস্থিতির কারণে ব্যাপক যাতায়াত ও আড্ডার স্থান হিসেবে পরিচিত। সেখানে বিপুল সংখ্যক অবৈধ অভিবাসীর উপস্থিতি জনসাধারণের মধ্যে অস্বস্তির সৃষ্টি করছিল। এ কারণে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং অবৈধ অভিবাসী কার্যকলাপ রোধে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।

অভিযানে গ্রেফতার হওয়া ১৭৬ জনের মধ্যে ৭১ জন বাংলাদেশি, ৬০ জন মিয়ানমারের নাগরিক, ২৪ জন ইন্দোনেশিয়ার, ১৬ জন নেপালের, ৩ জন পাকিস্তানের এবং ২ জন মিশর ও সুদান থেকে আগত ছিলেন। কুয়ালালামপুর সিটি হল (ডিবিকেএল) এর সহযোগিতায় পরিচালিত এই অভিযানে অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতার করা হয়। ইমিগ্রেশন আইন অনুসারে, যাদের কাছে বৈধ কাগজপত্র ছিল না বা যারা দেশটিতে অতিরিক্ত সময় অবস্থান করছিলেন, তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ১৯৫৯/৬৩ সালের ইমিগ্রেশন আইনের ধারা ৬(১)(সি) এবং ধারা ১৫(১)(সি), পাশাপাশি ১৯৬৩ সালের ইমিগ্রেশন রেগুলেশনসের ৩৯(বি) ধারায় এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ইমিগ্রেশন বিভাগ জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃতদের পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কুয়ালালামপুরের ইমিগ্রেশন সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এসব বিদেশি নাগরিকের কাছে বৈধ অভিবাসন কাগজপত্র না থাকার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে, স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়, অভিবাসন বিভাগের পরিচালক আরো জানান যে, এই অভিযানটি শুধু বুকিত বিনতাং এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তাদের লক্ষ্য ছিল শহরের অন্যান্য হটস্পটগুলোতেও অভিযান চালিয়ে অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

ওয়ান মোহাম্মদ সৌপি ওয়ান ইউসুফ বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো বিদেশি নাগরিকদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা এবং এটি নিশ্চিত করা যে তারা মালয়েশিয়ায় আইনগতভাবে অবস্থান করছে। আমরা তাদের নিরাপত্তা ও বৈধতা নিশ্চিত করতে নিবেদিত।” তিনি আরো যোগ করেন, “এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে, যাতে বিদেশি নাগরিকরা এবং নিয়োগকর্তারা নির্ধারিত নিয়ম মেনে চলেন। অভিবাসন বিভাগের তৎপরতা পরিচালনার মাধ্যমে আমরা এটি নিশ্চিত করতে চাই।”

এই গ্রেফতার অভিযানের পর থেকে, মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের দমন করার জন্য ইমিগ্রেশন পুলিশ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। বিশেষত, মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসন একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এর ফলে স্থানীয় জনগণের মধ্যে নিরাপত্তা উদ্বেগের সৃষ্টি হচ্ছে। এসব অভিবাসী মূলত অবৈধভাবে কাজ করার জন্য মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেছেন এবং তারা এখানকার শ্রম বাজারে অবস্থান করছেন। এই অবস্থা দেশটির আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।

মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ নিয়মিতভাবেই অবৈধ অভিবাসী দমন অভিযানে অংশ নেয়, তবে এই অভিযানগুলো কেবলমাত্র কুয়ালালামপুরে সীমাবদ্ধ নয়, পুরো দেশব্যাপী এটি পরিচালিত হয়। অভিবাসন বিভাগ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতার করতে থাকে। গত কয়েক বছরে মালয়েশিয়া এই ধরনের অভিযান পরিচালনা করেছে এবং এতে প্রায় হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতার হয়েছে। যদিও অনেক অভিবাসী তাদের কাজের সুযোগ এবং উন্নত জীবনের আশায় মালয়েশিয়ায় আসেন, তবে তাদের অধিকাংশই বৈধভাবে প্রবেশ করেন না বা নিয়মিত কাগজপত্রের মাধ্যমে অবস্থান করেন না।

এছাড়া, মালয়েশিয়ার সরকার অবৈধ অভিবাসীদের ওপর এই ধরনের চাপ সৃষ্টি করার পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থান ব্যবস্থা, জীবনযাপন ও নাগরিক অধিকার সম্পর্কে ধারাবাহিক সমালোচনা এবং পর্যালোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য, বিদেশি শ্রমিকদের জন্য একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, যাতে তারা মালয়েশিয়ায় কাজ করতে এসে স্থানীয় শ্রম বাজারে কোনো ধরনের অবৈধ কার্যকলাপ না করে।

অভিযানটি পরিচালিত হওয়া এলাকার জনপ্রিয়তা এবং বিদেশি পর্যটকদের উপস্থিতি বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে, কারণ এতে বিদেশি নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের মধ্যে নিরাপত্তা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। তবে, এটি শুধু একটি অভিযান নয়, বরং মালয়েশিয়া সরকারের একটি বড় পরিকল্পনার অংশ, যা ভবিষ্যতে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে।

মালয়েশিয়া একটি বহুজাতিক ও বহুসাংস্কৃতিক দেশ, যেখানে অনেক দেশের অভিবাসী কাজ ও বসবাস করতে আসে। তবে দেশটির সরকার ইতোমধ্যেই অভিবাসীদের জন্য কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে, যা কার্যকরভাবে এসব বিদেশি নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক।