দীর্ঘ এক দশক পর চীনের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। এই পদক্ষেপে জ্যেষ্ঠ কর্মীদের গড়ে ৫০০ ইউয়ান (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮,১১৮ টাকা) এবং জুনিয়র কর্মীদের গড়ে ৩০০ ইউয়ান (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫,০১০ টাকা) বেতন বৃদ্ধি করা হবে। সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ এবং রয়টার্স এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বেতন বৃদ্ধি কার্যকর ও এর প্রভাব
চলতি মাস থেকেই এই নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হবে। চীনে সরকারি প্রশাসন ও বিভিন্ন পরিষেবা খাতে বর্তমানে মোট ৪ কোটি ৮০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই পদক্ষেপের ফলে সরকারের বার্ষিক ব্যয় ১,২০০ কোটি ডলার থেকে ২,০০০ কোটি ডলার বাড়তে পারে।
সর্বশেষ বেতন বৃদ্ধি: ২০১৫ সালে
চীনে সর্বশেষ সরকারি বেতন বৃদ্ধি হয়েছিল ২০১৫ সালে, যেখানে মূলত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বেশি সুবিধা পেয়েছিলেন। সেবার তাদের বেতন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। তবে এবার জুনিয়র কর্মীরাও বাড়তি বেতন পাবেন, যা সমতা আনার ইঙ্গিত দেয়।
অর্থনৈতিক সংকট নিরসনের চেষ্টা
অর্থনীতিতে ধীরগতির প্রভাব মোকাবিলার লক্ষ্যে এই বেতন বৃদ্ধিকে বিশেষ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জু তিয়ানচেন বলেছেন, “চীনের জনগণের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা বেড়েছে এবং পণ্য ক্রয়ের হার কমেছে। এটি শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক। ক্রেতারা পণ্য না কিনলে উৎপাদন খাত ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে পণ্য-পরিষেবা ক্রয়ের হার বাড়াতে। তবে এই ধীরগতি মোকাবিলায় এটি কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।”
সরকারি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েইবোতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয় বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটানোর চেষ্টা হলেও, এটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যথেষ্ট কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ সরকারি কর্মীরা চীনের মোট জনসংখ্যার একটি ছোট অংশ। ফলে বৃহত্তর অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনার জন্য আরও বিস্তৃত নীতি গ্রহণ প্রয়োজন।