চীন বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প “থ্রি গর্জেস ড্যাম” পরিচালনা করছে, যা ৩০ বছর ধরে সফলভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নে অবদান রাখছে। এই প্রকল্প থেকে এখন পর্যন্ত ১.৭ ট্রিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে, যা ৫৫ কোটি টন কয়লার ব্যবহার প্রতিস্থাপন করেছে এবং ১৪৯ কোটি টন কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ হ্রাস করেছে।
এবার চীন আরও বড় একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যা তিব্বতে ইয়ারলুং ঝাংবো নদীতে নির্মিত হবে। এই নদী ভারতের অরুণাচল ও আসামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
নতুন এই প্রকল্পে থ্রি গর্জেস ড্যামের চেয়েও বেশি অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছে। সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪.৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে ১৪ লাখ মানুষের পুনর্বাসন ব্যয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
চীন দাবি করছে, এই প্রকল্প তাদের কার্বন নিঃসরণ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে এটি জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং সেচব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ইয়ারলুং ঝাংবো নদীর বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে চীন এই স্থানটি বেছে নিয়েছে। মাত্র ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে নদীটির পানি প্রায় ২০০০ মিটার গভীরতায় পতিত হয়, যা জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে চমৎকার সম্ভাবনা তৈরি করে। তবে এতে প্রচুর কারিগরি চ্যালেঞ্জও রয়েছে, যা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হবে।
নদীটির অবস্থান এবং প্রভাবের কারণে এই প্রকল্প ভারত এবং বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চীনের এই প্রকল্প আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের প্রকল্প আন্তঃসীমান্ত নদীর জলপ্রবাহের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। ভারত এবং বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের প্রভাব নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
চীন বলছে, প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে তিব্বতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহায়ক হবে। তবে প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্বেগ নিরসনে চীনের যথাযথ কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।