গাজা উপত্যকায় পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। একদিকে ইসরায়েলি অবরোধ ও লাগাতার হামলা, অন্যদিকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে চলছে আলোচনা—এই দ্বন্দ্বের মধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পুরো অঞ্চল। উত্তর গাজার পর এবার দক্ষিণাঞ্চলেও অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
আল জাজিরার বরাতে জানা গেছে, রোববার (১৮ মে) ভোর থেকে সন্ধ্যার মধ্যে ইসরায়েলি সেনারা অন্তত ১৫১ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এদের মধ্যে ৬৯ জন নিহত হয়েছেন উপত্যকার উত্তরাংশে, যেখানে হামলার মাত্রা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। ইসরায়েলের ‘গিডিয়ন চ্যারিয়টস’ অভিযানের তীব্রতায় নিহতের সংখ্যা এত বেশি হয়েছে বলে জানানো হয়।
গাজার স্বাস্থ্যখাতও চরম সংকটে পড়েছে। লাগাতার বোমাবর্ষণ ও অবরোধের কারণে অধিকাংশ হাসপাতালই বন্ধ হয়ে গেছে। উপত্যকার অন্যতম বৃহৎ স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালও রোববার কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
খাদ্য সংকটও চরমে পৌঁছেছে। বহু পরিবার দিনে একবেলার খাবারও পাচ্ছে না, কেউ কেউ টানা তিন দিনেও কিছু খেতে পারেনি। পানি, খাদ্য ও ওষুধের অভাবে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বিশেষ করে উত্তর গাজার সব হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় কাতারের দোহায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনা চলছে। তবে সেখানে হামাসের নেতা ওসামা হামদান জানিয়েছেন, আলোচনায় এমন কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে যা তাদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। বিশেষ করে অস্ত্র পরিত্যাগ এবং গাজা থেকে নির্বাসনের মতো শর্ত মানতে তারা নারাজ।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর প্রশাসন স্পষ্ট করে বলেছে, যুদ্ধ থামাতে হলে হামাসকে অস্ত্র ফেলে দিতে হবে এবং গাজা ছেড়ে চলে যেতে হবে—এটাই তাদের চূড়ান্ত দাবি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময়ের প্রস্তাবের পাশাপাশি গাজায় সংঘাতের সমাপ্তির বিষয়েও আলোচনা চলছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গাজায় স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধে তিনটি মূল শর্ত দিয়েছে ইসরায়েল: এক. হামাসকে সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে; দুই. হামাসের সব সদস্যকে আত্মসমর্পণ করতে হবে; তিন. গাজা ছাড়তে হবে।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ প্রতিনিধি স্টিভ উইটকোফের মাধ্যমে আলোচনা এগোচ্ছে। আলোচনায় আংশিক জিম্মি মুক্তির বিপরীতে সাময়িক যুদ্ধবিরতি কিংবা সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের বিনিময়ে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
গত ২০ মাস ধরে ইসরায়েল গাজায় সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। এই দীর্ঘ সময়ের সংঘাতে একসময় ঘনবসতিপূর্ণ ও সুন্দর উপত্যকাটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। লাখো মানুষ হতাহত হয়েছেন, প্রায় ২০ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের কঠিন বাস্তবতায়।