রুশ কৌশলে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারেও ধরাশায়ী হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গেলো কয়েক বছর ধরে ক্রমবর্ধমানভাবে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছে নাইজার। এমন পরিস্থিতিতে দেশটি থেকে সমস্ত কমব্যাট সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছে ওয়াশিংটন। এরইমধ্যে রুশ সেনারা নাইজারে পৌঁছেছে এবং মার্কিন সেনারা রাজধানী নিয়ামির কাছে যে ঘাঁটিতে অবস্থান করেছিল সেখানে এখন রুশ সেনাদের অবস্থান।
গত সপ্তাহে নাইজারে আমেরিকান বাহিনীর কিছু অংশ থাকার শেষ আশা ভঙ্গ হয়। এরপর পেন্টাগন দেশটি থেকে পুরো ১,০০০ সেনাকে ফিরে আসার আদেশ জারি করেছে।
নাইজার থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর সেসব সেনাকে আফ্রিকার অন্য কোনো দেশে মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে কোন দেশে এসব সেনাকে পাঠানো হবে তা স্পষ্ট করা হয়নি।
উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত এপ্রিল মাসে ঘোষণা দিয়েছিল যে, তারা নাইজার থেকে “সুশৃঙ্খল এবং দায়িত্বশীল প্রস্থান” এর পরিকল্পনা শুরু করবে। কিন্তু আমেরিকার কর্মকর্তারা এখনও এই আফ্রিকান দেশে কিছু বাহিনী রাখার জন্য নাইজারের সামরিক শাসকদের সাথে আলোচনা চালিয়ে আসছিল।
এর আগে নাইজার আফ্রিকার “উপকূল” অঞ্চলে ওয়াশিংটনের সামরিক অভিযানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে বাধ্য হয়েছিল। এই দেশটি সেখানে একটি বিশাল মার্কিন বিমান ঘাঁটি স্থাপনের বিষয়টি মেনে নিয়েছিল।
নাইজারের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পট পরিবর্তনের পর দেশটির নতুন শাসকরা পশ্চিমা ঔপনিবেশিক দেশ বিশেষ করে ফ্রান্স এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সামরিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। এটি এমন একটি পদক্ষেপ যাতে নাইজারের জনগণের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
সম্প্রতি, আফ্রিকার আরেকটি দেশ চাদও আমেরিকান বাহিনীকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ১০০ মার্কিন সেনা চাদে অবস্থান করছে। এর আগে ফরাসি সামরিক বাহিনীকে নাইজার, মালি ও বুরকিনা ফাসো ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল।
এদিকে, উত্তর নাইজেরিয়ার নেতাদের গ্রুপের মুখপাত্র জিবরিন ইব্রাহিম দেশটিতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের জন্য নাইজেরিয়ার সরকারের সঙ্গে মার্কিন ও ফরাসি আলোচনার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, নাইজার, বুরকিনা ফাসো এবং মালিতে আমেরিকান এবং ফরাসি সামরিক উপস্থিতির অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে যে এই দেশগুলোতে বিদেশী সামরিক ঘাঁটি এবং তাদের কর্মসূচিগুলো নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে স্বাগতিক দেশগুলোর অধিকার নেই। এবং এই অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি নাইজেরিয়ার সার্বভৌমত্বের জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ।
কিছুদিন আগে নাইজার, মালি এবং বুরকিনা ফাসোর জনগণ তাদের সরকারগুলোর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের দেশ থেকে বিদেশী বাহিনীকে বিতাড়িত করতে সফল হয়েছে। ঠিক এমন একটি মুহূর্তেই নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের সঙ্গে আলোচনায় এসব দেশের সেনাবাহিনীর উপস্থিতির কথা বলছেন।
মূলত, আফ্রিকার দেশগুলো থেকে পশ্চিমা ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর সেনা ফিরিয়ে নেয়ার অনুরোধ আফ্রিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের প্রভাব হ্রাস পাবার একটি শক্তিশালী ইঙ্গিত। একইসাথে ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটি একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।
আফ্রিকা এবং উপকূল অঞ্চল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের সামরিক উপস্থিতির হ্রাস পশ্চিমা সরকারগুলোর পররাষ্ট্র নীতির জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এর ফলে ওয়াশিংটন এবং তার মিত্রদের জন্য একটি ভূ-রাজনৈতিক পরাজয় বয়ে এনেছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।