টানা তৃতীয় দিনের মতো রোববার ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এর পাল্টা জবাবে ইরানও রাতভর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরাইলের নানা স্থাপনায় আঘাত হানে। এই পাল্টাপাল্টি হামলায় দুই দেশেই ব্যাপক প্রাণহানি ও অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে।
ইসরাইলের জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা মাগেন ডেভিড অ্যাডম জানিয়েছে, ইরানের হামলার পর দেশটির মধ্যাঞ্চলের চারটি স্থানে অন্তত ৬৭ জন আহত হয়েছেন, যাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে একজন নারী গুরুতর অবস্থায় এবং ছয়জনের অবস্থা মাঝারি বলে জানানো হয়েছে।
ইসরাইলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কান জানায়, সর্বশেষ হামলায় তেল আবিব থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বন্দরনগরী হাইফায় কয়েকজন আহত হন। সেখানে বিস্ফোরণের ফলে আগুন ধরে যায়। জরুরি সেবাদাতা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে একাধিক স্থানে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে।
এছাড়া উত্তর ইসরাইলের হাইফা শহরের বন্দরের কাছে অবস্থিত একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগুন লেগেছে বলে জানায় ব্রিটিশ সামুদ্রিক নিরাপত্তা সংস্থা অ্যামব্রে। সংস্থাটি দাবি করেছে, তারা দুটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছে।
আল জাজিরা, জেরুজালেম পোস্ট এবং চ্যানেল ১২ নিউজ সূত্রে জানা গেছে, ইরানের সর্বশেষ হামলায় মধ্য ইসরাইলে কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন।
১৬ জুন সোমবার ভোরে (বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টার দিকে) ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার দৃশ্য দেখা গেছে, যেখানে উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে তৎপর ছিলেন। রয়টার্স-এর প্রকাশিত ছবিগুলোতে দেখা যায়, তেল আবিবে সকাল সাড়ে ৫টার সময় উদ্ধারকর্মীরা কাজ করছেন, তখন তেহরানে সময় ছিল সকাল ৬টা।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টার দিকে তারা ইরানের ছোড়া নতুন একটি ক্ষেপণাস্ত্র বহর শনাক্ত করেছে। সুরক্ষার অংশ হিসেবে জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড-এর সাংবাদিক আকৃতি থাপাড় জানান, তেল আবিবে তারা গভীর রাতে সতর্কতামূলক ঘোষণার শব্দে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। পরে সাইরেন বেজে ওঠে এবং তারা সুরক্ষিত আশ্রয়ে ছুটে যান, সেখান থেকে তারা প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান এবং আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখতে পান।
ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা মেহের নিউজ জানায়, আইআরজিসি (ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস) তেল আবিব ও হাইফা লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এর আগে ১৩ জুন ইসরাইলি হামলায় নিহত ইরানি সামরিক কর্মকর্তা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষের প্রতিশোধ হিসেবে এই পাল্টা অভিযান চালানো হয়।
আইআরজিসি-এর সর্বশেষ হামলায় তেল আবিব, হাইফা, বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর ও নেভাটিম বিমানঘাঁটি লক্ষ্যবস্তু ছিল। দিনের আলোয় ইরান প্রথমবারের মতো সরাসরি ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুড়ে।