ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক ইস্যুতে উত্তেজনা আরও বাড়ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।
শনিবার (৮ মার্চ) তেহরানে দেওয়া এক ভাষণে খামেনি অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র কেবল ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে না, বরং দেশটির প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও চাপ প্রয়োগ করতে চায়।
এর আগে, শুক্রবার ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্ককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, তিনি খামেনির কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন, যেখানে ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান জানানো হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে ইরান আলোচনায় আসবে, কারণ এটি তাদের জন্য ভালো হবে।’ তবে তিনি সতর্ক করে দেন, তেহরান যদি আলোচনায় না আসে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হবে।
চিঠিতে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার লক্ষ্যে একটি নতুন চুক্তির বিষয়ে আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছিল। তবে শনিবার তেহরান জানায়, তারা ট্রাম্পের কাছ থেকে এমন কোনো চিঠি পায়নি।
এই পরিস্থিতিতে, ইরানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের সময় খামেনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য আসলে আলোচনা নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করা। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু শক্তিশালী রাষ্ট্র আলোচনা চাইলেও, তাদের মূল উদ্দেশ্য সমস্যা সমাধান নয়, বরং নিজেদের স্বার্থ বাস্তবায়ন করা।
খামেনি আরও বলেন, ‘তারা আলোচনার নামে আমাদের ওপর শর্ত চাপিয়ে দিতে চায়, যা ইরান কখনোই মেনে নেবে না।’
এর আগে, ফেব্রুয়ারি মাসে খামেনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসলে ইরানের কোনো লাভ হয় না, বরং ক্ষতি হয়—এ ইতিহাসই সাক্ষ্য দেয়।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবারও ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি বাস্তবায়ন করেছেন। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র ইরানের প্রধান রফতানি খাত, বিশেষ করে তেলের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ওয়াশিংটন জানিয়েছে, এসব নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য তেহরানকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করা।
এদিকে, জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি সতর্ক করেছেন যে ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম সীমিত করতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, তেহরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও গাজার চলমান যুদ্ধের কারণে ইরানের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা আরও তীব্র হয়েছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল স্পষ্ট করে জানিয়েছে, তারা ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র আরও বাড়াতে দেবে না। এই অবস্থায়, মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।