সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কায় শুরু হয়েছে হজের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। হিজরি ১৪৪৬ সনের জিলহজ মাসের ৮ তারিখ (বুধবার) থেকে মিনায় অবস্থানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এবারের হজের মূল পর্ব। ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী, এই দিনটিকে ‘ইয়াওমুত তারওয়িয়াহ’ বলা হয়। এরপর ৯ জিলহজ হাজিরা আরাফার ময়দানে অবস্থান করবেন, যা হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুকন। ১০ জিলহজ পশু কোরবানির মাধ্যমে ঈদ উদযাপন করবেন তারা। এরপর আরও দুই দিন মিনা, মুজদালিফা ও জামারাতে হজের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন।
এই পাঁচ দিনব্যাপী হজ পালনের জন্য হাজিরা বুধবার ভোরে মক্কার আবাসস্থল থেকে মিনার পথে রওনা হন। সুন্নাত অনুযায়ী, মিনায় যাওয়ার পথে তাঁরা উচ্চ কণ্ঠে তালবিয়া পাঠ এবং আল্লাহর জিকির ও তাসবিহে ব্যস্ত থাকেন। এ বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় ১৪ লাখ ৭০ হাজার বিদেশি হাজির সঙ্গে যোগ দিয়েছেন কয়েক লাখ সৌদি নাগরিক ও অভ্যন্তরীণ হাজি।
মক্কা ও পবিত্র স্থানগুলোর ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট সংস্থা জানায়, গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক হাজিরা মক্কায় এসে পৌঁছেছেন এবং নির্বিঘ্নে তাঁদের তাওয়াফুল কুদূম সম্পন্ন করেছেন। অভ্যন্তরীণ হাজিরাও সোমবার ও মঙ্গলবার মক্কায় এসে তাওয়াফ শেষে মিনার উদ্দেশে রওনা হন।
মক্কার পরিবহন বিভাগের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আল-কারনি জানান, মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত হাজিদের মিনায় পৌঁছানোর প্রক্রিয়া চলেছে। মিনার কর্মসূচি শেষ হলে হাজিরা আরাফার ময়দানে যাবেন তিনটি প্রধান পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে। মাশায়ির ট্রেনে যাত্রা করবেন প্রায় ৩ লাখ ১৬ হাজার হাজি, বহুমুখী ও ঐতিহ্যবাহী যানবাহনে আরাফাতে যাবেন আরও ৭ লাখ ২০ হাজারের বেশি হাজি।
মিনা অঞ্চলের ঐতিহাসিক আল-খায়ফ মসজিদ হাজিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রায় ২৭ হাজার বর্গমিটার এলাকায় নামাজ আদায়ের স্থান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখানে নতুনভাবে সংযোজিত হয়েছে উন্নত শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা, স্মার্ট কুলিং প্রযুক্তি এবং স্বয়ংক্রিয় কার্বন মনিটরিং ব্যবস্থা—যা হাজিদের আরাম নিশ্চিত করবে।
চরম গরমের পূর্বাভাস থাকায় সৌদি সরকার বিশেষ নিরাপত্তা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী ড. আব্দুল্লাহ আসির জানান, এ বছর ৫০ হাজারের বেশি চিকিৎসক, নার্স ও প্রশাসনিক কর্মী হজ ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত রয়েছেন, যা আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া গরমজনিত অসুস্থতার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭০০টির বেশি সজ্জিত হাসপাতালের শয্যা। চিকিৎসা ব্যবস্থার সক্ষমতাও গত বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।