ইউক্রেন যদি যুক্তরাষ্ট্রের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার ভূখণ্ডে আক্রমণ করে, তাহলে রাশিয়া প্রতিক্রিয়া হিসেবে যথাযথ এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইউক্রেনে এই ধরনের হামলা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেরকে সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলবে।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন দেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাস আগে নেওয়া এই সিদ্ধান্ত ব্যাপক আলোচিত।
তবে, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে পরামর্শ নিয়েছেন কি না বা তিনি এটি বহাল রাখবেন কিনা, তা এখনও পরিষ্কার নয়। নির্বাচনের আগে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাবেন।
ইউক্রেন ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে এটিএসএমএস (আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম) ক্ষেপণাস্ত্র পেয়ে গেছে, যার পাল্লা প্রায় ৩০০ কিলোমিটার। ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য থেকেও স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র এসেছে, যার পাল্লা প্রায় একই। তবে, পশ্চিমা দেশগুলো এতদিন ইউক্রেনকে সেগুলো রাশিয়ার ভূখণ্ডে ব্যবহার করতে নিষেধ করেছিল।
মঙ্গলবার ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের এক হাজারতম দিন পূর্ণ হবে। এই দিনে বাইডেন ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় যুদ্ধের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করেছিল।
এদিকে, রাশিয়া ইউক্রেনের অবকাঠামোতে আক্রমণ আরও জোরদার করেছে এবং কুরস্ক অঞ্চলে ১০ হাজারেরও বেশি উত্তর কোরিয়ার সেনা পাঠানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে আরও এক লাখ সেনা এবং সামরিক সরঞ্জাম পাঠাতে পারে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, এই নতুন অস্ত্র চুক্তি নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নাও আসতে পারে, তবে ক্ষেপণাস্ত্রই নিজেই তার ভাষায় কথা বলবে।
ইউক্রেন প্রথমে কুরস্ক অঞ্চলে এসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে কিছু সূত্র জানিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র কুরস্কে তাদের ব্যবহার সীমিত রাখার শর্ত দিয়েছে। এটি রাশিয়াকে সতর্ক করার একটি ইঙ্গিত হতে পারে।
বাইডেনের এই সিদ্ধান্তে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, তিনি সামরিক উপায়ে এই যুদ্ধ জয় করতে পারবেন না। যদিও পুতিন এখন পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি, তবে গত সেপ্টেম্বর মাসে তিনি বলেছিলেন, ইউক্রেন যদি এমন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে, তবে তা ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণের মতো হবে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র সোমবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখানে আগুনে ঘি ঢালছে। তবে মার্কিন ডেপুটি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন ফাইনার জানিয়েছেন, রাশিয়াকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, তারা এই পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়া জানাবে, বিশেষ করে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের উপস্থিতি এবং ইউক্রেনের অবকাঠামোতে রাশিয়ার বড় ধরনের হামলার জবাবে।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি। ৫ নভেম্বর নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে ফিরবেন। ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে বিদেশি যুদ্ধে জড়ানো বন্ধ করবেন এবং দেশের করদাতাদের অর্থ আমেরিকান জনগণের জীবনমান উন্নয়নে ব্যয় করবেন। তিনি বলেছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করবেন, তবে কিভাবে তা করবেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি। জেলেনস্কি সম্প্রতি আশা প্রকাশ করেছেন যে, ট্রাম্প ইউক্রেন ও রাশিয়াকে শান্তিচুক্তিতে আসার জন্য চাপ প্রয়োগ করবেন।