ওয়াকফ সংশোধনী আইন ২০২৫-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সর্বভারতীয় মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) নেতা আসাদুদ্দিন ওয়াইসি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “মোদি বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের অবদানকে সম্মান জানানোর মতো যোগ্যতাও রাখেন না।”
হায়দরাবাদের দারুসসালাম এলাকায় ১৯ এপ্রিল (শনিবার) এক বিশাল জনসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে ওয়াইসি জানান, এই আইন বাতিলের দাবিতে তারা দীর্ঘ মেয়াদি আন্দোলনে যাবেন, যা কৃষকদের আন্দোলনের মতো হবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “এই আইন চালু হওয়ার এক মাসের মধ্যে উত্তর প্রদেশে প্রায় ৫০০টি ওয়াকফ সম্পত্তিকে সরকারি সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে—এটাই কেবল শুরু।”
ওয়াইসি স্মরণ করিয়ে দেন, যদিও এআইএমআইএম সুপ্রিম কোর্টের তিন তালাক ও বাবরি মসজিদ মামলার রায়কে সম্মান জানিয়েছে, তারা কখনোই সেগুলোকে ভুলহীন বলে মানেনি।
তার ভাষায়, “আমরা সংবিধানের নৈতিকতায় বিশ্বাস করি, তাই রায়ের প্রতি সম্মান দেখাই। কিন্তু আরএসএস কেবল নামেমাত্র সংবিধান মানে, বাস্তবে নয়।”
তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে তারা ধর্মের নামে উস্কানি দিয়ে আসলে ভারতের সংবিধানের ভিত্তির ওপর আঘাত করছে।
সংখ্যালঘুদের অধিকার সংকুচিত করার জন্য ধারাবাহিকভাবে একাধিক আইন করা হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। “তিন তালাক, সিএএ, ইউএপিএ এবং এখন ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউসিসি) — সবই একে একে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে মুসলিম সমাজের ওপর,” বলেন ওয়াইসি।
তিনি বলেন, শরিয়ত অ্যাপ্লিকেশন অ্যাক্টকে বাতিল করে ইউসিসি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা আম্বেদকরের নীতির পরিপন্থী।
ওয়াইসি আরও বলেন, “ভারতের সৌন্দর্য মোদির মধ্যে নেই, বরং তা নিহিত দেশের ধর্মীয় বৈচিত্র্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাঝে। যারা এই সৌহার্দ্য ধ্বংস করছে, তারাই আসলে দেশের ক্ষতি করছে।”
তিনি দাউদি বোহরা সম্প্রদায় প্রসঙ্গে বলেন, সংসদীয় কমিটিতে তারা আইনের আওতায় আসতে না চাওয়ার কথা জানালেও, মোদি সরকার সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে পুরো সম্প্রদায়কে আইনে অন্তর্ভুক্ত করেছে। কেবলমাত্র কিছু ট্রাস্টকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
ওয়াইসি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “নতুন সংশোধনী অনুযায়ী, মুকেশ আম্বানির মতো ব্যক্তি এখন এই সম্প্রদায়ের সম্পত্তির মালিকানা নিতে পারেন। যদিও সুপ্রিম কোর্ট কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে, ১৯৬৩ সালের লিমিটেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী বহু ওয়াকফ সম্পত্তি হারানোর ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।”
তিনি মুসলিম সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান, “আত্মমর্যাদা ছাড়া বেঁচে থাকা মানে মৃতদেহের মতো অস্তিত্বহীনতা। ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘ লড়াই আমাদের অনুপ্রেরণা হওয়া উচিত।”
সভায় অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সভাপতি মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানিও বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “এই আইন এখনো আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে এবং আমরা আশা করছি সুপ্রিম কোর্ট এটিকে বাতিল করবে।”
তিনি জানান, “সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, কেউ যদি ১২ বছর ধরে ওয়াকফ সম্পত্তি দখলে রাখে, তাহলে সে মালিকানা দাবি করতে পারবে। অথচ দানকারীকে মুসলমান হতে হবে অন্তত পাঁচ বছর আগে থেকে—এই শর্ত আগের আইনে ছিল না।”
তিনি আরও বলেন, “এই দেশে সব ধর্মের মানুষ ওয়াকফের জন্য জমি দান করেছে। এমনকি হিন্দুরাও। কিন্তু এখনকার আইন সে ঐতিহ্যকেই ধ্বংস করছে।”
রাহমানি তরুণদের সোশ্যাল মিডিয়ার সঠিক ব্যবহার করে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারের মোকাবিলা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আইন ও সামাজিক পরিসরে এই লড়াই চলবে।”
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজ্যের রাজনৈতিক দল যেমন ওয়াইএসআরসিপি, ডিএমকে-র প্রতিনিধিসহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি অংশ নেন। আয়োজকেরা জানান, ভিড় এতটাই ছিল যে ‘এক কণা বালুও মাটিতে পড়ার জায়গা পায়নি।’
ওয়াইসি ও রাহমানি দুজনই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং বলেন, “এই সংগ্রামে অমুসলিমদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে মোদি সরকারকে এই বিতর্কিত আইন প্রত্যাহারে বাধ্য করা যায়।”