শিরোনাম

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক পদক্ষেপের আশঙ্কা বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৩ সপ্তাহ আগে
ছবি : সংগৃহীত

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামে সাম্প্রতিক বন্দুক হামলাকে ২০১৯ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই ঘটনায় অন্তত ২৬ জন সাধারণ নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের কেউই সেনা সদস্য ছিলেন না। তারা সবাই ছুটি কাটাতে কাশ্মীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছিলেন।

এই ঘটনাটি কেবল প্রাণহানির দিক থেকেই নয়, বরং কাশ্মীরের দীর্ঘ সময় ধরে পুনরুদ্ধার করা স্থিতিশীল পরিস্থিতির ওপরও একটা সুপরিকল্পিত আঘাত বলেই দেখা হচ্ছে।

ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই কাশ্মীরকে নিজেদের দাবি করে, কিন্তু বাস্তবে অঞ্চলটি বিভক্তভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলার প্রেক্ষিতে ভারতের পক্ষ থেকে কঠোর প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

দিল্লি ইতোমধ্যে কড়া কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সীমান্ত পথ বন্ধ, জলবন্টন চুক্তি স্থগিত এবং কূটনীতিকদের বহিষ্কার। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও ঘোষণা করেছেন, এই হামলার পেছনে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এবার প্রশ্ন হচ্ছে প্রতিক্রিয়ার ধরন ও সময়, কারণ প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া প্রায় অনিবার্য হয়ে পড়েছে।

অতীত অভিজ্ঞতা ও বর্তমান সম্ভাবনা

সামরিক বিশ্লেষক শ্রীনাথ রাঘবন মনে করিয়ে দেন, ২০১৬ সালের উরি হামলার পর ভারত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছিল এবং ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর বালাকোটে বিমান হামলা করেছিল। তখন পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালায়। তবে যুদ্ধ শুরু হয়নি।

২০২১ সালে দুই দেশ নিয়ন্ত্রণ রেখায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে। তা সত্ত্বেও মাঝে মধ্যেই হামলার ঘটনা ঘটে, বিশেষ করে ভারত নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে।

ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ নিয়ে মত

পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু ভারতকে সামরিক প্রতিক্রিয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে, এমনকি প্রমাণ ছাড়াও পাকিস্তানকে দায়ী করার প্রবণতাও দেখা দিতে পারে।

তিনি বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপের একটি রাজনৈতিক সুবিধা আছে—ভারতীয় জনমতের চাপ মেটানো এবং সন্ত্রাসী হুমকি দমন। তবে এটাতে বড় ধরনের সংঘাতের ঝুঁকিও থাকে।

বিকল্প পথ কী হতে পারে?

বিশ্লেষক ক্রিস্টোফার ক্ল্যারি উল্লেখ করেন, গোপন অভিযান একটি সম্ভাব্য বিকল্প, তবে তা জনসাধারণের কাছে শক্ত প্রতিক্রিয়ার বার্তা দিতে পারে না।

ভারতের সামনে দুটি পথ খোলা থাকতে পারে:
১. সীমান্তে আবার গুলি চালানোর অনুমতি দেওয়া
২. বিমান হামলা বা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার

তবে, প্রতিটি পদক্ষেপই প্রতিপক্ষের পাল্টা প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলে।

পারমাণবিক বাস্তবতা

ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র, যা প্রতিটি সিদ্ধান্তের পেছনে বাড়তি কৌশলগত সতর্কতা দাবি করে।

শ্রীনাথ রাঘবন বলেন, প্রতিটি প্রতিক্রিয়া হতে হবে নির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক, যাতে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়। পাকিস্তানও পাল্টা জবাব দিতে পারে এবং পরে উত্তেজনা কমিয়ে আনতে পারে, যেমনটা মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েলের টানাপোড়েনে দেখা যায়।

জনমতের চাপে প্রতিক্রিয়া?

পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেইন হক্কানি বলেন, ভারতের সীমিত পরিসরে প্রতিশোধমূলক হামলার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে জনসাধারণকে দেখানো যাবে যে, সরকার সক্রিয়ভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তবে পাকিস্তানও তার অবস্থান তুলে ধরার চেষ্টা করতে পারে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যেকোনো সিদ্ধান্তই এক ধরনের ঝুঁকি বয়ে আনবে—উত্তেজনা বাড়ার, সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি।

সবশেষে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারত সরকারের উচিত কেবল প্রতিক্রিয়ামূলক ব্যবস্থার কথা ভাবা নয়, বরং কিভাবে এই ধরনের হামলা রোধ করা যায়, সেই ব্যর্থতার দিকেও মনোযোগ দেওয়া।

রাঘবন বলেন, “পর্যটন মৌসুমের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়ে এই হামলা হয়েছে। যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করছে, সেখানে এমন ত্রুটি গভীর উদ্বেগের বিষয়।”