শিরোনাম

ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নেই কোনো মুসলিম

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৪ মাস আগে

বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএর সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন যে, জোটের আদর্শ ও নীতি হলো ‘সর্বপন্থা সমভাব’, অর্থাৎ সব ধর্মকে সমানভাবে দেখা, ভেদাভেদ না করা এবং সবাইকে সাথে নিয়ে চলা। তিনি বলেছিলেন যে, এই নীতিতে বিশ্বাস রেখেই এই জোট সরকার পরিচালিত হবে এবং ভবিষ্যতে এগিয়ে যাবে।

কিন্তু পুরোনো সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে গত শুক্রবার দেওয়া এই আশ্বাসবাণীর ৪৮ ঘণ্টা পর, গতকাল রোববার সন্ধ্যায় গঠিত ৭২ সদস্যের মন্ত্রিসভায় একজনও মুসলিম মন্ত্রী স্থান পাননি। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাঁচজন মন্ত্রী থাকলেও, জোটের কোনো শরিক কোনো মুসলিমকে মন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেনি। এই প্রথম কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার কোনো শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান মুসলিমবর্জিত হয়ে রইল।
নরেন্দ্র মোদির প্রথম মন্ত্রিসভা কিন্তু এমন মুসলিমবর্জিত ছিল না। ২০১৪ সালে একক ক্ষমতায় লোকসভায় জেতার পর মোদি মন্ত্রিসভায় শপথ নিয়েছিলেন নাজমা হেপতুল্লাহ, যিনি সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৯ সালেও মন্ত্রিসভার প্রথম শপথ মুসলিমবিহীন ছিল না। বিজেপির রাজ্যসভার সদস্য মুস্তাক আব্বাস নাকভি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন এবং তাঁকেও দেওয়া হয়েছিল নাজমার ছেড়ে যাওয়া সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।

মুস্তাক আব্বাস নাকভির রাজ্যসভার মেয়াদ ২০২২ সালের ৬ জুলাই শেষ হয়। এরপর বিজেপি তাঁকে আর পুনর্নিয়োগ করেনি, যার ফলে মোদির মন্ত্রিসভার দরজাও মুসলিমদের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
মোদির বিজেপিতে মুসলিমদের যে স্থান নেই, তা সর্বজনবিদিত। এবারের নির্বাচনী প্রচারে বিভিন্ন জনসভায় কংগ্রেস ও মুসলিমদের সমার্থক করে তোলার তাঁর প্রচেষ্টা সবার জানা। কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি মুসলিম লিগের ছায়া দেখেছেন। এমনকি তিনি বলেছিলেন যে, কংগ্রেস অন্যদের সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে বিলিয়ে দেবে। এই বক্তব্যগুলো তিনি যখন দিয়েছিলেন, তখন তাঁর ধারণা ছিল না যে তাঁর দল নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা থেকে ৩২ ধাপ দূরে থমকে যাবে। সরকার গঠনের তাগিদে বাধ্য হয়েই তাঁকে এখন ‘সর্বপন্থা সমভাব’-এর কথা বলতে হচ্ছে। তবে, মন্ত্রিসভায় তিনি একজন মুসলিমকেও স্থান দেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রাজনৈতিক ভাষ্যকারের মতে, তাগিদ ও ইচ্ছা থাকলে মোদি ‘সরকারি’ মুসলিমদের মধ্যে থেকে কাউকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারতেন। পরে তাঁদের রাজ্যসভা থেকে জিতিয়ে আনা যেত। কিন্তু মোদি কখনোই সেই তাগিদ অনুভব করেননি।
এবারের ভোটে ৭৮ জন মুসলমান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ২৪ জন জিতেছেন। এই ২৪ জনের মধ্যে ২১ জনই ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সদস্য। বাকি তিনজনের মধ্যে একজন হলেন হায়দরাবাদের এআইএমআইএমের আসাউদ্দিন ওয়েইসি, এবং অন্য দুজন হলেন কাশ্মীর উপত্যকার স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রকৌশলী রশিদ ও মহম্মদ হানিফা।

এবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে মন্ত্রী হয়েছেন পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে হরদীপ পুরী ও রবনীত সিং বিট্টু শিখ ধর্মাবলম্বী, জর্জ কুরিয়েন খ্রিষ্টান, এবং রামদাস আটওয়ালে ও কিরেন রিজিজু বৌদ্ধ।
২০০৪ ও ২০০৯ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের সময়ে মুসলিম মন্ত্রীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে চার ও পাঁচজন। এর আগে ১৯৯৯ সালে অটল বিহারি বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় বিজেপির শাহনাওয়াজ হুসেন ও ন্যাশনাল কনফারেন্সের ওমর আবদুল্লাহ মন্ত্রী ছিলেন।

মোদির জমানায় যে বিজেপি নেতা মুস্তাক আব্বাস নাকভির মন্ত্রিত্ব শেষ হয়ে গেছে, ১৯৯৮ সালে বাজপেয়ী মন্ত্রিসভাতেও তিনি মন্ত্রী ছিলেন। সেই দিক থেকে এবারের মন্ত্রিসভার শপথ একটি বিরল ঘটনা হয়ে রইল।

  • ঊষারবাণী
  • নরেন্দ্র মোদি
  • ভারত
  •   local-nogod-300-x-250