ফ্রান্স স্বাধীনভাবে ইউক্রেনে সেনা পাঠাতে চাচ্ছে এবং কিছু ন্যাটো সদস্য রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালানোর অভিযোগ জানিয়েছে। এই সংবাদের প্রেক্ষিতে, মার্চে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সাথে নীতি পরিবর্তন করেছে, যা রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালানোর সুযোগ বাড়িয়ে দেওয়া মনে হচ্ছে। অবশ্য, নির্বাচনের আগে তারা এই ধরনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে খোঁজ নিরাপত্তা প্রদান করা জরুরি বলে বলেছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তাদের পূর্ণরূপে অনুমোদন করা না পছন্দ করেন, তবে এটি রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলার সুযোগ বৃদ্ধি করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন যে, রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালানোর সুযোগ নিয়ে তাদের কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি, এই তথ্য অস্পষ্ট এবং অযথা বিতর্কের বাদে কিছু নয়। তবে, এই নির্বাচন পূর্বে এসব উপযুক্ত ছিল না। তিনি বলেছেন যে, এই নতুন নীতিতে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালানোর সুযোগ দিয়েছে না।
ইউক্রেন এখন সত্যেই ধ্বংসের কাছাকাছি। সেনার ঘাটতিতে এটি দুঃখজনকভাবে রয়েছে এবং হতাহত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। রাশিয়ানদের একটি উৎস বলে, মে মাসে এখন পর্যন্ত ৩৫,০০০ ইউক্রেনীয় সেনা হতাহত হয়েছে। এই শূন্যতা ইউক্রেন পূরণ করতে সক্ষম নয়। সেনাবাহিনীর নিয়োগের পদক্ষেপগুলি এখন চলমান। তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানোর সময়সাপেক্ষ হবে।
একটি প্রতিবেদনে ছাড়া, রাশিয়ানদের মধ্যে একটি সূত্র বলছে যে, তারা যুদ্ধক্ষেত্রে নতুন করে বৃহত্তর সংখ্যক সেনা পাঠাতে আগ্রহী।
বেশ কয়েকজন মনে করছেন, রাশিয়া খারকোভ অঞ্চলে সেনা বাড়াতে এবং তাদের প্রতিবেশী অঞ্চলে একটি নতুন যুদ্ধফ্রন্ট খুলতে চেষ্টা করছে। আরো কিছু মানুষ মনে করে, রাশিয়া সামি অঞ্চলে নতুন সংঘর্ষ চালিয়ে আসতে চায়। আরো কিছু লোক ভাবছেন যে, রাশিয়া শিগগিরি নিয়ন্ত্রণ রেখা সৃষ্টি করে হামলা শুরু করবে, যাতে তারা আরও বেশি অঞ্চল অধিগ্রহণ করতে পারে। এনএটিওর নেতারা ভয় পেয়েছেন যে, রাশিয়ার আক্রমণের চাপে ইউক্রেনের পতন হতে পারে। তারা মনে করেন যে, ইউক্রেন রক্ষা করার বিকল্প খুব কম। এর মাধ্যমে রাশিয়া ইউরোপের ‘বড়িব্যাগ’ থেকে অধিগ্রহণ করতে পারে। এনএটিও রাশিয়ার সাথে কোনও সম্পর্কে যেতে অনুমতি দেয় না। নির্বাচনের আগে, এটি বড় ধরনের অপব্যাহত ঘটনা হতে পারে, বিশেষত জো বাইডেনের জন্য। রাশিয়ার সাথে এখন একটি চুক্তিতে আসা মানে বড় ধরনের পরাজয় হতে পারে। এটি শুধু ইউক্রেনের জমিও নয়, ইউক্রেনের ভবিষ্যও।
ইউক্রেন থেকে ন্যাটোর সাথে যুক্তরাষ্ট্র যেতে হবে— রাশিয়া তার অবস্থান থেকে পিছু হটবে না। কেবলমাত্র ইউক্রেনের নিরাপত্তা সম্পর্কে রাশিয়া কিছুটা সম্মতি দিতে পারে; কিন্তু এই সম্মতির মূল্যটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ করতে যাবে না। ন্যাটোর সর্বোত্তম ও প্রশিক্ষিত সামরিক শক্তি কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের অবশ্য; কিন্তু তাদের সেনাদল অভিযাত্রিক এবং আকারে ছোট। তাদের স্থলবাহিনীর রাশিয়ার সঙ্গে তুলনা হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের ‘নতুন নীতি’তে রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলার অনুমোদন দিওয়া হলেও এর প্রভাব খুবই সামান্য। কারণ, ইউক্রেন তাদের অস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে রাশিয়ার ভেতরে হামলা করেছে। এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সীমাবদ্ধতা হলো, যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্ট্র্যাটেজিক এটিএসএমএস মিসাইল দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালাতে দেবে না, এটিও একমাত্র ক্রিমিয়া বাদে। ইউক্রেনের এই ভূখণ্ডকে ২০১৪ সাল থেকে রাশিয়া নিজেদের বলে দাবি করে আসছে।
রাশিয়ানরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতি অনেকাংশে অর্থহীন। এর কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো অস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা করেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো তাদের দূরপাল্লার অস্ত্র এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর গোয়েন্দা তথ্য ইউক্রেনকে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার কথা বলছেন। এটা আদৌ নতুন নীতি নয়। রাশিয়ার অনেকে একেবারেই ভেতরে হামলা করতে চায়—এটা অত্যন্ত আকর্ষণীয় ধারণা। কিন্তু এ ধরনের হামলা ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধের গতিধারাকে বদলে দিতে পারে। ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিবদলকে বেশিরভাগ ন্যাটোর সদস্যদের স্বাগত জানিয়েছে। হাঙ্গেরি শুরু থেকেই ইউক্রেনের সম্পৃক্ততার বিরোধী। এবারও এই দেশটি রাশিয়ার ভেতরে হামলার বিরোধিতা করেছে। ইতালি ন্যাটোর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। জার্মানি তাদের দিক থেকে রাশিয়ার ভেতরে হামলার সমর্থন জানালেও ইউক্রেনকে তাদের তাওলাস মিসাইল দিচ্ছে না।
এই নতুন নীতির প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া কী করবে সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে নতুন এই নীতি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ন্যাটোর যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। এর মানে হচ্ছে, রাশিয়া প্রতিশোধ নিতে চাইবে। সে ধরনের কোনো প্রতিশোধের ঘটনা ইউরাপে বড় পরিসরে যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারে। সামগ্রিক ফলাফল হলো, ইউক্রেন যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে। ন্যাটো আরও ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বে, তাদের সেনারাও হতাহত হতে পারেন। এই দৃশ্যপটের বাইরে ন্যাটো যদি রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালায় কিংবা ইউক্রেনে স্থলসেনা পাঠায়, তাহলে ইউরোপের পরিস্থিতি শোচনীয় হবে। ন্যাটো যদি বড় কোনো যুদ্ধে জড়ায়, তাহলে সেটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হবে, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে গভীরভাবে যাঁরা চিন্তা করেন, তাঁরা এই উপলব্ধিতে এসেছেন। এরপরও ন্যাটোর কয়েকটি দেশ বোধহয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টা অন্যখানে রয়েছে। ন্যাটো কি তাহলে নিজের মৃত্যু ডেকে আনছে? স্টিফেন ব্রায়েন, যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক উপকমিটির সাবেক প্রধান পরিচালক। (এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত)