নির্ধারিত মহাকাশযানের সমস্যার কারণে নাসার দুই নভোচারীকে পূর্ব নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকতে হচ্ছে। মহাকাশযানটি কবে পৃথিবীতে ফিরবে তা এখনও অনিশ্চিত, এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনও নির্দিষ্ট কোনো তারিখ দেয়নি। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা গত শুক্রবার জানিয়েছে যে, এই অভিযানের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৯০ দিন পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। এর ফলে নভোচারী সুনি উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরকে মহাকাশ স্টেশনে আরও কিছুদিন থাকতে হবে।
গত ৫ জুন, মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের তৈরি স্টারলাইনার মহাকাশযানটি দুই নভোচারীকে নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে মহাকাশে যাত্রা করে। যাত্রার কিছুদিন পরই মহাকাশযানটির পৃথিবীতে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু যানটিতে হিলিয়াম গ্যাস লিকেজ ও থ্রাস্টারের সমস্যার কারণে এটি ফিরে আসতে পারছে না। এ কারণে, মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে অবস্থান করতে হচ্ছে।
কর্মকর্তারা বারবারই উল্লেখ করেছেন যে নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরকে স্টারলাইনারের মাধ্যমেই নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে।
নাসার কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রামের ম্যানেজার স্টিভ স্টিচ শুক্রবার জানান, স্টারলাইনার মিশনের মেয়াদ ৪৫ দিন থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৯০ দিন পর্যন্ত করার চিন্তা করছে মহাকাশ সংস্থা। তবে মহাকাশযানটির নির্দিষ্ট ফেরার তারিখ এখনও জানানো হয়নি।
বোয়িং এবং নাসা কর্তৃপক্ষ বর্তমানে স্থলভাগে স্টারলাইনারের থ্রাস্টার সমস্যার কারণ খতিয়ে দেখার পরিকল্পনা করছে, যা নিউ মেক্সিকোতে পরীক্ষা করা হবে।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে স্টিচ জানান, নিউ মেক্সিকোতে পরীক্ষা চালানোর পর প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করা হবে এবং এর পরেই মহাকাশযানটির পৃথিবীতে অবতরণের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
বোয়িংয়ের কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রামের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রোগ্রাম ম্যানেজার মার্ক নাপ্পি এবং নাসার কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রামের ম্যানেজার স্টিভ স্টিচ শুক্রবার জানিয়েছেন যে, স্টারলাইনারের প্রধান সমস্যাটি প্রকৌশলীরা এখনও সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারেননি।
নাসার নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়াম স্টারলাইনারের প্রথম যাত্রী হিসেবে মহাকাশে ভ্রমণ করছেন। তাঁরা এখন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করছেন এবং সেখানকার অন্যান্য নভোচারীদের সঙ্গে সমন্বয় করে নিয়মিত কাজ করছেন।
স্টারলাইনারের পৃথিবী থেকে উড্ডয়নের আগে থেকেই এর থেকে হিলিয়াম গ্যাস লিকেজের বিষয়টি জানা গিয়েছিল। তবে, অভিযানের সংশ্লিষ্টরা এটিকে তেমন ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেননি।
কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা জানতে চাইলে শুক্রবার মার্ক নাপ্পি জানান যে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে মহাকাশযানটি পাঠানোর সিদ্ধান্তে অনুতপ্ত নন।
তিনি আরও বলেন, নাসা ও বোয়িং সব সময়ই এই অভিযানের পরীক্ষামূলক প্রকৃতির ওপর জোর দিয়ে এসেছে। ভবিষ্যতের অভিযানের জন্য স্টারলাইনারকে আরও উন্নত করতে তথ্য সংগ্রহ করাই এই পরীক্ষামূলক অভিযানের মূল লক্ষ্য।
নাসা তাদের এ অভিযানের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৯০ দিন পর্যন্ত বাড়াবে কি না, তা এখনও নিশ্চিত করেনি। স্টিভ স্টিচ জানিয়েছেন, স্টারলাইনারের ব্যাটারির মেয়াদ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। তবে মহাকাশ স্টেশনে ব্যাটারিগুলো রিচার্জ করা হচ্ছে এবং ৯০ দিন পরও প্রথম ৪৫ দিনের মতোই কার্যক্ষম থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছে, ওই দুই নভোচারী আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আটকা পড়েছেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, বোয়িংয়ের কর্মকর্তা মার্ক নাপ্পি সাংবাদিকদের অনুরোধ করেছেন যে ওই দুই মহাকাশচারীর ক্ষেত্রে ‘আটকে পড়া’ কথাটি ব্যবহার না করতে। তিনি বলেন, দুই মহাকাশচারীর অবস্থা বিপজ্জনক নয়।
নাসার কর্মকর্তা স্টিভ স্টিচও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, বুচ এবং সুনি মহাকাশে আটকে নেই। তাঁদের স্টারলাইনারে ফিরিয়ে আনা এবং সঠিক সময়ে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের পরিকল্পনা চলছে।’
এদিকে নাসার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগামী ১০ জুলাই স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় এ বিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। সেখানে নভোচারী বুচ এবং সুনিতাও যুক্ত হবেন। তাঁরা পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্থাপিত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে যোগ দেবেন।
অপ্রত্যাশিতভাবে মহাকাশে নভোচারীদের অবস্থানের মেয়াদ বাড়ানোর ঘটনা নতুন নয়। কিছু দিন, কিছু সপ্তাহ, এমনকি কয়েক মাস মহাকাশ স্টেশনে থাকার নজির রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে নাসার নভোচারী ফ্রাঙ্ক রুবিও পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে অভিযানে গিয়ে এমন পরিস্থিতিতে পড়েন। তিনি রাশিয়ার সয়ুজ ক্যাপসুলে করে সেখানে যান, যা কুল্যান্ট লিক সমস্যার সম্মুখীন হয়। প্রায় ছয় মাস আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকার কথা থাকলেও তাঁকে ৩৭১ দিন, অর্থাৎ এক বছরেরও বেশি সময় সেখানে থাকতে হয়।
এ ছাড়া বৈরী আবহাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে পৃথিবীতে ফেরার ক্ষেত্রে নভোচারীদের নিয়মিতই কিছুদিন দেরি করতে হয়।